× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কুয়েতে ষাটোর্ধ্ব অভিবাসী শ্রমিকের আবাসিক পারমিট বাতিলের আইন কার্যকর

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(৩ বছর আগে) জানুয়ারি ১৩, ২০২১, বুধবার, ৯:২২ পূর্বাহ্ন

৬০ বছর বয়সসীমা পেরোনো অভিবাসী শ্রমিক এবং যাদের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার নিচে শিক্ষা সনদ আছে, তাদের ওয়ার্ক পারমিট এবং রেসিডেন্সি পারমিট নবায়ন বন্ধ করে দিয়েছে কুয়েত পাবলিক অথরিটি ফর ম্যানপাওয়ার (পিএএম)। ১লা জানুয়ারি থেকে এ বিষয়ক আইন বাস্তবায়ন করেছে তারা। গত বছর ১৫ই আগস্ট এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। তাতে বলা হয়, কুয়েতে জনসংখ্যাতত্ত্ব ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। এ সমস্যাকে সমাধান করার জন্য সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার অংশ এটি। পিএএমের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন যেসব সেক্টরের পেশাজীবীরা তার মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো নির্মাণ খাত, গাড়ি মেরামত, রেস্তোরাঁর কাজে নিয়োজিত শ্রমিক। এ বছরের শেষের দিকে যখন তাদের আবাসিক অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে তখন কুয়েত ছাড়তে হবে। এ খবর দিয়েছে চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক (সিজিটিএন)।

এ বিষয়ে বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে সাংবাদিক আজিজ আল কিনাঈ বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কুয়েতে জনসংখ্যাতত্ত্ব বিষয়ক সঙ্কটের সমাধান করতে। কারণ, কুয়েতে স্থানীয় নাগরিকদের চেয়ে অভিবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে এক ভারসাম্যহীন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ক্রমশ এ ধারা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন সরকারের, যাতে তারা নিজেদের কাজ নিজেরা করতে পারেন। সাংবাদিক আজিজ বলেন, কুয়েতে অভিবাসীরা যেসব কাজ করেন, তা কুয়েতের মানুষের জীবনধারার সঙ্গে মানানসই নয়। অর্থাৎ তারা নিজে হাতে এসব কাজ করতে অভ্যস্ত নন। তাই যদি এই পরিকল্পনাকে সফল করতে চায় সরকার, তাহলে তাদের উচিত নিজ দেশের নাগরিকদের এসব কাজের সঙ্গে যুক্ত করা এবং তাদেরকে উৎসাহিত করা। এক্ষেত্রে বিদেশি শ্রমিকরা দেশটিতে যা করেছেন বা করেন তার প্রশংসা করেন কুয়েতিরা। এ বিষয়ে সাংবাদিক আজিজ বলেন, এখন সময় এসে গেছে কুয়েতিদের কর্মসংস্থানের। গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে অনেক কুয়েতি চাকরির জন্য লম্বা লাইন দিয়ে থাকেন। ফলে অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানো হলে তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন কুয়েতি নাগরিকরা। ৪৫ বছর বয়সী কুয়েতি নাগরিক মুবারক আল এনজি বলেন, কুয়েতি যুব সমাজের জন্য বেসরকারি ও সরকারি খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা প্রয়োজন। নতুন নতুন কৌশল হাতে নেয়া প্রয়োজন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন ২৮ বছরের যুবতী খাওলা আল শাম্মারি। তিনি এমন সব পদে নাগরিকদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়িত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন।
পক্ষান্তরে কুয়েত ফেডারেশন অব রেস্তোরাঁ, ক্যাফে এন্ড ক্যাটারিং মনে করে, বেসরকারি খাতে এমন সিদ্ধান্তের কারণে তাদের কার্য সম্পাদন বাধাগ্রস্ত হবে। কুয়েত চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (কেসিসিআই) এর প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ আল সাকর বলেন, কারুকর্ম সংশ্লিষ্ট পেশায় কোনো সনদ প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিজ্ঞতা পোক্ত হয়। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকা-ে অনেক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ বছর ১লা জানুয়ারি সরকারি আইন কার্যকর হয়েছে। এর ফলে যেসব অভিবাসীর বয়স ৬০ বছরে পৌঁছেছে তাদের যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সনদ না থাকে তাহলে তারা আবাসিক মর্যাদা নবায়নের আবেদন করতে পারবেন না।
কুয়েতে ৪০ বছর ধরে অবস্থান করছেন ইরানের ইস্পাহানের জাহিদ ইয়াকুব। তার বয়স এখন ৬৫ বছর। ফেব্রুয়ারিতে তিনি স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই দীর্ঘ চার দশকে তিনি কুয়েতের বিখ্যাত আল মুবারাকিয়া মার্কেটে সবজি ও ফল বিক্রি করেছেন। তিনি বিয়ে করেছেন। কুয়েতে রয়েছে তার চার সন্তান। তিনি বলেছেন, ২৫ বছর বয়সে কুয়েতে গিয়ে তিনি টেবিলে কমলা সাজাতে সাহায্য করতেন। তার মতো বিদেশি এমন হাজারো শ্রমিক, যাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নেই তারা সামনের কয়েক মাসে কুয়েত ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন। এখানে উল্লেখ্য, কুয়েতের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭০ ভাগই বিদেশি।
ফিলিপাইনের লিন নামে এক নারী কাজ করেন একটি সেলুনে। ১৫ বছর ধরে তিনি সেখানে অবস্থান করছেন। তার আবাসিক ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে ফেব্রুয়ারির শুরুতে। ফলে এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে তিনি দেশে ফিরে যাবেন। গত নভেম্বরে তিনি নিজের ৬২তম জন্মদিন পালন করেছেন। তিনি সিনহুয়াকে বলেছেন, অনেক বছর কাজ করে এখন ক্লান্ত। এতগুলো বছর তিনি ইচ্ছার বিরুদ্ধে কুয়েতে অবস্থান করেছেন। পরিবারকে আর্থিক সাপোর্ট দিয়েছেন। তিন সন্তানসহ তাকে রেখে মারা গিয়েছেন তার স্বামী। সেই পরিবারকে টেনে তোলার দায়িত্ব মাথায় নিয়ে তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন কুয়েতে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর