বিদেশে পলাতক রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) সহযোগী ও বান্ধবী অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল ধানমণ্ডির ১০ নং রোডের একটি বাসা থেকে পি কে হালদারের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টিম তাকে গ্রেপ্তার করেছে। পরে তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। দুদক জানিয়েছে, পি কে হালদারের মামলার তদন্তে অবন্তিকার সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে গত ২৮শে ডিসেম্বর পিকে হালদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বান্ধবী অবন্তিকা বড়ালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছিল। তবে ওই সময় তিনি হাজির হননি।
দুদক জানায়, পি কে হালদার, তার ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী এবং পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী অবন্তিকা বড়াল মিলে প্রথমে ‘সুখদা’ নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ‘সুখদা’র শেয়ার দিয়ে খোলেন হাল ইন্টারন্যাশনাল। এই হালের পরিচালক হন প্রীতিশ ও তার স্ত্রী সুস্মিতা।
আবার এই হালের ৯০ ভাগ শেয়ারের মালিক হন সুখদার পক্ষে প্রশান্তের ঘনিষ্ঠ সহযোগী অবন্তিকা। হাল ক্যাপিটালের ৯০ ভাগ শেয়ারের মালিক থাকে হাল ইন্টারন্যাশনাল। বাকি ১০ ভাগ রাখা হয় হাল ক্যাপিটালের দুই কর্মচারীর নামে। তারাই হাল ক্যাপিটালের নামে আগে থেকে বিদ্যমান মাইক্রো টেকনোলজি নামে একটি কোম্পানির শেয়ার কেনেন। যার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ রয়েছে পি কে হালদার ওই প্রতিষ্ঠানসহ পিপলস লিজিং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) দায়িত্ব পালন করে প্রায় ৩৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন। সরকারের শুদ্ধি অভিযানের পর পরই প্রশান্ত কুমার হালদারের নাম উঠে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হতে ২০২০ সালের ১৪ই নভেম্বর নোটিশ দিয়েছিল দুদক। তার আগে ৩রা অক্টোবর তার বিদেশ যাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। কিন্তু তিনি ঠিকই দেশ থেকে পালিয়ে যান। পরে দেশে আসার কথা বলেও আর আসেননি। গত ৮ই জানুয়ারি দুদকের অনুরোধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ইন্টারপোল। পি কে হালদারের প্রতারণায় সহায়তাকারী ২৪ জনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে ইতিমধ্যে। রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি পি কে হালদার ও তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগীসহ ৮৩ ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবের প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা জব্দ করেছে দুদক।
এদিকে, ধানমণ্ডি থেকে গ্রেপ্তারের পর অবন্তিকা বড়ালকে প্রথমে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের হাজতখানায় রাখা হয়। পরে তাকে আদালতে হাজির করে তিনদিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাউদ্দিন। আবেদনের শুনানি শেষে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অবন্তিকার পক্ষে দুইজন আইনজীবী রিমান্ড শুনানিতে অংশ নিতে ওকালতনামা দাখিল করলেও আবেদনে সঠিক নিয়মে সই না করায় বিচারক তা গ্রহণ করেননি বলে দুদকের অন্যতম আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জানান। দুদক থেকে আদালতে নেয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অবন্তিকা বলেন, কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। অবৈধ সম্পদ আছে কিনা, এ প্রশ্নের উত্তরে অবন্তিকা বলেন, এটা দুদক জানে, আমি বলতে পারবো না।