মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বিশ্বব্যাপী অনাকাঙ্ক্ষিত বিপন্ন সময়ের সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশও নজিরবিহীন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশের এই সংকটকালে বিভিন্নভাবে কেউ কেউ নিজ কম্যুনিটির মানুষদের সেবা করছে। বৈশ্বিক এই বিপর্যয়কালে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সবাই মিলে দুর্যোগ মোকাবিলায় কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে দেশের তরুণদের ভূমিকা ছিল অনন্য। এমনই একজন তরুণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র সংসদের সদ্য সাবেক জিএস জুলিয়াস সিজার তালুকদার।
করোনা দুর্যোগের প্রাথমিক ধাক্কায় মানুষের চরম অসহায়ত্বে তিনি মর্মাহত হন৷ প্রতিক্রিয়ায় ইদুল ফিতর ও ইদুল আযহায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন৷ 'এক জন জুনিয়রের জন্য এক জন সিনিয়র' আইডিয়া নিয়ে তিনি ঐ হলের প্রতিষ্ঠিত প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সর্বমোট ৬৬ জন শিক্ষার্থীকে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করেন; যাতে জনপ্রতি ১৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত অনুদান পান।
অন্যদিকে করোনাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের গ্রামে গিয়ে নানাভাবে নির্যাতিত হতে থাকে৷ গত ১৯শে জুন টাঙ্গাইলে এক জন প্রাক্তন ছাত্র খুন হওয়ার ঘটনাও ঘটে। তিনি এই সময় সবার পাশে দাঁড়াতে গড়ে তুলেন 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চ'৷ সমস্যাগ্রস্থ বিপন্ন-প্রায় বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সেবা দেয়ার প্রত্যয় নিয়ে গড়ে তোলা হয় এই প্লাটফর্ম। বর্তমানে এই প্লাটফর্মের পঁচিশ হাজারেরও অধিক সদস্যবিশিষ্ট একটি ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে এবং এর ফেসবুক পেজের অনুসারীর সংখ্যা দশ হাজারেরও বেশী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষার্থী যেকোনো সমস্যায় পড়ে গ্রুপে পোস্ট বা মেসেজ করা-মাত্র এই সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা নেমে পড়েন সমাধান করতে৷ সাবেক কৃতী শিক্ষার্থীদের সাহায্য নিয়ে তারা এ পর্যন্ত ১৩০ এরও অধিক শিক্ষার্থীকে সরাসরি সাহায্য করেছেন এবং আত্মহত্যাপ্রবণ অবস্থা থেকে প্রায় ৪০ জনকে উদ্ধার করেছেন। এছাড়াও এই প্ল্যাটফর্মের ফেসবুক গ্রুপ থেকে পরামর্শ পেয়ে উপকৃত হয়েছে অসংখ্য শিক্ষার্থী।
প্রতিষ্ঠার মাত্র ছয় মাসেই 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চ'কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে কার্যকরী ও প্রয়োজনীয় সংগঠন বলে মনে করছে শিক্ষার্থীরা।
নিরাপত্তা মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করতে সফল হয়েছেন প্রতিশ্রুতিশীল ছাত্রনেতা জুলিয়াস সিজার তালুকদার। তিনি মানবজমিনকে বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাস নির্মাণ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সন্তানের ঐক্যবদ্ধ সংঘ 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চ'৷ শুধুমাত্র ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ও পারস্পরিক ভালোবাসাকে ভিত্তি করেই কাজ করছি আমরা৷ প্রথাগত সমস্যাগুলো সমাধান করে নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি আমরা একবিংশ শতাব্দীতে বৈশ্বিক পরিবর্তন পর্যালোচনা করে উদ্ভূত নতুন সমস্যাগুলোকে নিয়েও কাজ করার পরিকল্পনা করছি। ইতিমধ্যে আমরা ক্যারিয়ার বিষয়ে কাজ করতে শুরু করেছি।