বেক্সিমকো লিমিটেডকে সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক ও সেরা গ্রাহক হিসেবে সম্মাননা ও ক্রেস্ট প্রদান করেছে জনতা ব্যাংক লিমিটেড। বৃহস্পতিবার জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অ্যান্ড সিইও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক এবং সিইও সৈয়দ নাভেদ হোসেনের হাতে রপ্তানি ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন।
জনতা ব্যাংক লোকাল অফিসের অন্যতম গ্রাহক বেক্সিমকো লিমিটেড ২০২০ সালে ব্যাংকটির সর্বোচ্চ রপ্তানি এবং সর্বাধিক মুনাফা প্রদানকারী গ্রাহক হিসেবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেক্সিমকো লিমিটেডকে এ সম্মাননা দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে বেক্সিমকো গ্রুপের ফিন্যান্স ডিরেক্টর ওসমান কায়সার চৌধুরী, চিফ অপারেশন অফিসার অনিল কুমার মহেশ^রি, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মোস্তফা জামানুল বাহার, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এম এস খান শাকিল এবং হেড অব ব্যাংকিং মো. মাসুম মিয়া এবং জনতা ব্যাংকের ডিএমডি মো. ইসমাইল হোসেন, মো. জিকরুল হক, মো. জসিম উদ্দিন, আব্দুল জব্বার এবং মো. আমিরুল হাসানসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিসের ৭৬ শতাংশ রপ্তানি সম্পন্ন হয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডের মাধ্যমে। করোনার কারণে অন্যান্য কোম্পানিগুলো ঋণ পরিশোধ না করলেও কোনো কিস্তি বাকি রাখেনি বেক্সিমকো। বিদায়ী বছর ঋণের কিস্তি হিসেবে ৪২৬ কোটি টাকা দিয়েছে গ্রুপটি। বেক্সিমকো গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত ১৩টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনতা ব্যাংকে ব্যবসা পরিচালনা করছে। সদ্য বিদায়ী ২০২০ সালে জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে বেক্সিমকো গ্রুপের মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৪ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা।
এর মধ্যে বেক্সিমকো লিমিটেডের রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ২ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। গত বছর ব্যাংকটি বেক্সিমকো গ্রুপ থেকেই আয় করেছে প্রায় ৪৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে পুনর্গঠিত ও পুনঃতফসিল করা ঋণের কিস্তি বাবদ আয় হয়েছে ৪২৭ কোটি টাকা।
অনুষ্ঠানে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক এবং সিইও সৈয়দ নাভেদ হোসেন বলেন, জনতা ব্যাংকের ‘ক্লায়েন্ট অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হওয়ার জন্য আমরা সম্মানিত বোধ করছি। আমরা আনন্দিত। এই পুরস্কার আমাদের কঠোর পরিশ্রমের স্বীকৃতি এবং আমাদের গ্রুপ ও এর ৬৫ হাজার কর্মীর জন্য আনন্দদায়ক এক উৎসাহ। তারা আরো বড় ও সফল উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, করোনাতে আমাদের অন্যান্য ব্যবসা কমলেও পিপিই উৎপাদন, বিপণন ও রপ্তানি বেড়েছে অনেকগুণ। গ্রুপের অন্যান্য ব্যবসা কমে অর্ধেকে পৌঁছেছে। তবে চিকিৎসা সামগ্রীর মাধ্যমে নতুন পরিকল্পনায় আগাচ্ছি। তিনি বলেন, ২০২১ সালে টিকে থাকাটা কঠিন হবে। এ কঠিন সময়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কাজ করছে বেক্সিমকো। তিনি বলেন, সূচনালগ্ন থেকেই বেক্সিমকো একটি রপ্তানিমুখী কোম্পানি। কোভিড-১৯ মহামারি থেকে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও এই গ্রুপের বৃহৎ রপ্তানি এবং ‘রি-পেমেন্টের’ যে সংখ্যা তাতে এই গ্রুপের সক্ষমতা ও সফলতার সাক্ষ্য দেয়।
দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল করতে বেক্সিমকো গ্রুপের অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, বেক্সিমকো দেশের প্রধান স্বাস্থ্য, পোশাক ও বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বিশেষ করে করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ও ভ্যাকসিন দেশে আনতে প্রধান ভূমিকা পালন করছে। মহামারিকালে এই গ্রুপ সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের জীবন রক্ষাকারী ওষুধ রেমডেসিভির প্রদান করেছে। এ ছাড়া করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে দেশজুড়ে চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিতদের সুরক্ষা সামগ্রী এবং মেডিকেল সরঞ্জাম দেয়া হয়েছে।
জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুছ ছালাম আজাদ বলেন, জনতা ব্যাংকের সঙ্গে বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। এখন গ্রুপটি এই ব্যাংকের শীর্ষ রপ্তানিকারক। তাদের সহযোগী হতে পেরে আমরা গর্বিত। গ্রুপটির ২৮টি কোম্পানিতে ৬৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাদের সম্মানিত করতে পেরে আমরা গর্বিত। ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, করোনার মধ্যে যেকোনো গ্রাহক ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে ঋণমান অপরিবর্তিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যেটাকে ব্যাংকের ভাষায় বলা হয় ডেফারেল সুবিধা। অন্য কোম্পানিগুলো এই সুবিধা নিলেও বেক্সিমকো ডেফারেল সুবিধা নেয়নি। প্রতিটি কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করেছে গ্রুপটি। ২০২০ সালে আগের বছরের তুলনায় ২০০ কোটি টাকার বেশি পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে জনতা ব্যাংক। যা এই গ্রুপের সহযোগিতার মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। আমরা প্রকৃতভাবে জনতার ব্যাংকে পরিণত হওয়ার চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতেও করবো। ২০২১ সালে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ ব্যাংকে পরিণত হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ছালাম আজাদ।