× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আবারো আলোচনায় ‘মাছ কাদের’, কিলিং মিশনে ফেনী গ্রুপ

অনলাইন

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে
(৩ বছর আগে) জানুয়ারি ১৫, ২০২১, শুক্রবার, ১২:২৬ অপরাহ্ন

নির্বাচনী সহিংসতায় খুনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে আবারও আলোচনায় র‌্যাব-পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী আবদুল কাদের ওরফে মাছ কাদের। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২৮নং পাঠানটুলি ওয়ার্ডে আজগর আলী বাবুল হত্যায় তিন দিনের রিমান্ডে আছেন তিনি ও তার ১১ সহযোগী।

এর আগে ২৮ মামলায় আসামি ছিলেন তিনি। খেটেছেন জেলও। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক বিবেচনায় চারটি খুনের মামলা প্রত্যাহার হয় তার। সাক্ষীর অভাবে খালাস পান চাঁদাবাজি, অপহরণ ও অস্ত্র আইনের আরও ২৩ মামলা থেকেও। আর তার এসব অপরাধ ও কিলিং মিশনে ফেনীর একটি গ্রুপের জড়িত থাকার তথ্য উঠে আসছে।    

মঙ্গলবার রাতে পাঠানটুলি ওয়ার্ডের মগপুকুর পাড় এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগে মাছ কাদেরের উপস্থিতিতে গুলিতে নিহত হন আজগর আলী বাবুলের ছেলে সেজান মোহাম্মদ সেতু ও পুলিশসূত্রে এসব তথ্য মিলেছে। এই ঘটনায় সেজান মোহাম্মদ সেতু বাদি হয়ে বুধবার দুপুরে ডবলমুরিং থানায় ১৩ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
যেখানে মুুল অভিযুক্ত করা হয় মাছ কাদেরকে।  

সেতু বলেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুরের সঙ্গে তার বাবাসহ অনেকেই মগপুকুর পাড় এলাকায় গণসংযোগে যান মঙ্গলবার। রাত ৮টার দিকে মগপুকুর জব্বার সওদাগর বিল্ডিংয়ের সামনে পৌঁছালে কাউন্সিলর প্রার্থী মাছ কাদেরের নেতৃত্বে তাদের ওপর হামলা করা হয়। এসময় কাদেরের নির্দেশে হেলাল, আব্দুল ওয়াদুদ রিপন, আব্দুর রহিম রাজু, আসাদ রায়হান তাদের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর, আজগর আলী বাবুল ও মাহবুবকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছোঁড়ে। অন্য আসামিরা তাদের হাতে থাকা লাঠিসোটা নিয়ে এলোপাতারি মারধর শুরু করে। গুলি তার বাবা আজগর আলী বাবুলের পিঠের বাম পাশে এবং মাহবুবের ডান পায়ের উরুতে লাগে। আজগর আলী বাবুলকে বেসরকারি ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আর মাহবুবকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আর এ ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলা তদন্ত করছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশ।

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আবদুল কাদেরের অনুসারী হেলাল এবং আসাদ রায়হান দেশীয় অস্ত্র ও পিস্তল থেকে গুলি করেছে বলে তারা তথ্য পেয়েছেন। হেলালের বাড়ি ফেনী জেলায়। তার বোনের বাসা মোগলটুলিতে। তিনি মাঝে মাঝে বোনের বাসায় এসে অবস্থান করেন। হেলাল ফেনী কেন্দ্রিক সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। এছাড়া কাদেরের সঙ্গে ফেনী থেকে আসা আরও কয়েকজন বহিরাগত ছিল বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য পুলিশ এখন যাচাই-বাছাই করছে। ফেনীর এই গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে মাছ কাদেরের কিলিং মিশনে জড়িত রয়েছে। পুলিশ বাবুল হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও এসব সন্ত্রাসীদেও গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালাচ্ছে।  

তিনি বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশে সাতটি সিসি ক্যামেরা ছিল। সেগুলো থেকে আমরা কোনো ফুটেজ পাইনি। সেগুলো ভাঙা-নষ্ট অবস্থায় পাওয়া গেছে। আমাদের ধারণা, ঘটনার আগে কোনো পক্ষ সেগুলো নষ্ট করে দিয়েছে যেন কোনো দৃশ্য সংরক্ষণ না হয়। তা থেকে মনে হচ্ছে ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। তবে সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে কাদেরের অনুসারী থাকায় এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাচ্ছে নাা। কাদেরের অনুসারী আহত মিন্টুর মাথায় ১৪টি সেলাই হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মিন্টুকে নজরবন্দি করে রেখেছে পুলিশ। এছাড়া অলি নামে এক ব্যক্তি ডান কাঁধে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি নিজেকে পথচারী পরিচয় দিলেও পুলিশ তাকে কাদেরের অনুসারী হিসেবে শনাক্ত করেছে।

ঘটনার পর আবদুল কাদেরসহ ১৩ জনের নাম এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩০-৪০ জনকে আসামি করে ডবলমুরিং থানায় মামলা করেন নিহত আজগর আলীর ছেলে সেজান মোহাম্মদ সেতু। ঘটনার পর পুলিশ কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল কাদেরসহ ২৬ জনকে আটক করে। এদের মধ্যে কাদেরসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আদালত কাদেরসহ ১১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

কাদের ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন, হেলাল উদ্দিন, ওবায়দুল কবির মিন্টু (৪০), আব্দুল ওয়াদুদ রিপন (৪২), আব্দুর রহিম রাজু ওরফে বিহারি রাজু (৪৫), আসাদ রায়হান (২৯), আলাউদ্দিন আলো ওরফে পিচ্চি আলো (৩৫), ইমরান হোসেন ডলার (২৪), দিদার উল্লাহ দিদু (৪৮), সালাউদ্দিন সরকার (৪৫), দেলোয়ার রশিদ (৪২), মো. আলমগীর (৪৫) ও আব্দুল নবী (৪৭)।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, বাবুল গতবার কাদেরের পক্ষে ছিল। এবার যেহেতু দল আমাকে নমিনেশন দিয়েছে, সে আমার পক্ষে কাজ শুরু করে। সেজন্য বাবুলকে টার্গেট করে কাদেরই খুন করেছে। তবে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে মাছ কাদের বাবুল হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে বাহাদুরের লোকজন তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালায় বলে দাবি করেন।

বাহাদুর বলেন, মাছ কাদের র‌্যাব ও পুলিশের তালিকাভুক্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে ২৮টি মামলা ছিল। এরমধ্যে রাজনৈতিক বিবেচনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে ২০১৩ সালে চারটি খুনের মামলা থেকে অব্যাহতি পায় সে। মামলাগুলো হলো, সিটি কলেজছাত্র শফি উদ্দিন আজাদ হত্যা, ডবলমুরিং থানার ব্যবসায়ী আবদুল কাদের, পাঁচলাইশ থানার পলিটেকনিকের ছাত্র আবদুল কাদের হত্যা ও আরেক ব্যবসায়ী আহাম্মদ আলী হত্যা। প্রতিটি মামলায় সাক্ষীরা খুনের ঘটনায় কাদের জড়িত বলে সাক্ষ্য দেন। এছাড়া আরো ২৩ মামলা থেকে রেহাই পান তিনি ও তার সহযোগী আসামিরা। অপহরণের একটি মামলায় ১০ বছরের সাজা হলেও তিনি আপিল করেন। এ অবস্থায় নির্বাচনে জয়লাভ করতে মাছ কাদের কেন্দ্র দখলসহ বাবুল হত্যার পরিকল্পনা করেন।

জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী সংস্থা নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (ডিবি-পশ্চিম) মনজুর মোরশেদ বলেন, কাদের ও সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বলতে গেলে তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে আছি। এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয় যে ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত কি না। তবে যেসব তথ্য আমরা পেয়েছি তা তদন্ত করে দেখছি। নিহতের পরিবার থেকে যত বক্তব্য আসছে সব বিবেচনায় নিয়েই তদন্ত করব।

উল্লেখ্য, নগরীর মোগলটুলী বাজারে ছোটবেলা থেকে মাছের ব্যবসা করতেন আবদুল কাদের। সে কারণে মাছ কাদের হিসেবে পরিচিতি তিনি। ২০০০ সালের ১ এপ্রিল গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৯ সালের ১৮ এপ্রিল কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। ২০১৫ সালে পাঠানটুলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তিনি বিদায়ি মেয়র আা জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী। আর নজরুল ইসরাম বাহাদুর শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর