খুলনার চালনা পৌরসভা নির্বাচনে নবনির্বাচিত সাধারণ ৯ জন ও সংরক্ষিত তিনজন কাউন্সিলর শপথ গ্রহণ করেছেন। তবে অনুষ্ঠানে গেলেও মেয়র হিসেবে শপথ নিতে পারলেন না সনত কুমার বিশ্বাস। উচ্চ আদালতে রিটের কারণে আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের একাধিক সূত্র। গত বৃহস্পতিবার খুলনা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে চালনা পৌরসভা নির্বাচনে নবনির্বাচিতদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে শপথ বাক্য পাঠ করান বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাঈল হোসেন। সূত্রে জানা গেছে, গত ৩রা জানুয়ারি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ড. অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল হাইকোর্টের ২৪নং বেঞ্চে (যার নং-১১,২০২১) কেনো গেজেট প্রকাশ ও শপথ গ্রহণ স্থগিত করা হবে না মর্মে রিট করেন। গত ১০ই জানুয়ারি মেয়র পদে সনত কুমার বিশ্বাসকে শপথ গ্রহণ আপাতত স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন আদালত।
সূত্র মতে, গত ২৯শে ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন চালনা পৌরসভা নির্বাচনে বেসরকারিভাবে আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা প্রতীক) প্রার্থী সনত কুমার বিশ্বাসকে মেয়র নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। এতে বলা হয়, নির্দেশনা মোতাবেক মেয়র পদে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত সনত বিশ্বাস ৬ হাজার ৭২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর বিধি ৪২ (২) অনুযায়ী খুলনা জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা এম মাজাহারুল ইসলাম গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ ফলাফল ঘোষণা করেন।
গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৮শে ডিসেম্বর চালনা পৌরসভার সাধারণ নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি মনোনীত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মো. আবুল খয়ের খান মৃত্যুবরণ করায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মৌখিক নির্দেশে মেয়র পদের ফলাফল ভোট পরবর্তীতে সামায়িকভাবে স্থগিত করা হয়।
স্বতন্ত্র প্রার্থী অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নির্বাচন কমিশনই ভোট গ্রহণ স্থগিত করলেন।
পরদিন কীভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হলো? স্থগিতকৃত চালনা পৌরসভায় পুনর্নির্বাচনের দাবিতে উচ্চ আদালতে রিট করেছি। আমার অভিযোগ আমলে নিয়ে গেজেট প্রকাশ ও শপথ স্থগিতের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চালনা পৌরসভার মেয়র ছিলেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সনত কুমার বিশ্বাসের ব্যবহৃত নম্বরে কয়েকবার কল করে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাঈল হোসেন বলেন, হাইকোর্টে একটি মামলা হয়েছে- যার কাগজপত্র পেয়েছি। তবে আদেশ এখনো পাইনি। সে জন্য চালনা মেয়র পদের শপথ আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যে চালনা পৌরসভা নির্বাচনে নির্বাচিত প্রার্থীদের নাম-ঠিকানা সম্বলিত গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (নির্বাচন প্রশাসন শাখা) উপ-সচিব (চলতি দায়িত্ব) মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত গত ৫ই জানুয়ারি বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত এবং ১২ই জানুয়ারি প্রাপ্ত দাকোপ উপজেলার চালনা পৌরসভার মেয়র, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিল পদে নির্বাচিত প্রার্থীদের নাম-ঠিকানা সম্বলিত গেজেট প্রকাশ করেন। নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর ৪৩ নম্বর বিধি অনুয়ায়ী ঘোষিত নির্বাচিত প্রার্থীদের নামের তালিকায় ২৮শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত চালনা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সনত কুমার বিশ্বাসকে মেয়র পদে গেজেটে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১নং ওয়ার্ডে আমোদিনী রায়, ২নং ওয়ার্ডে হাছিনা বেগম এবং ৩নং ওয়ার্ডে নাছিমা বেগম, সাধারণ কাউন্সিল ১নং ওয়ার্ডে শুভঙ্কর রায়, ২নং ওয়ার্ডে আব্দুল বারিক গাজী, ৩নং ওয়ার্ডে মো. রোস্তম আলী খান, ৪নং ওয়ার্ডে আইয়ুব কাজী, ৫নং ওয়ার্ডে চয়ন সাহা, ৬নং ওয়ার্ডে সুধীন্দ্র বিশ্বাস (মাখন), ৭নং ওয়ার্ডে মো. আব্দুস সাত্তার সরদার, ৮নং ওয়ার্ডে এসএম আব্দুল গফুর, এবং ৯নং ওয়ার্ডে শেখ মেহেদী হাসান বুলবুলকে সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে গেজেটে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।