মৎস্য ঘের মালিকদের সেঁচের পানিতে কেশবপুর নিম্নাঞ্চলের দু’-গ্রামের প্রায় অর্ধশত বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে ওই গ্রামের সাধারণ মানুষ গত এক সপ্তাহ ধরে চরম দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছে। তাছাড়া পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ হয়ে ওই ইউনিয়নের ৩ গ্রামের প্রায় ৪শ’ হেক্টর জমি বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, কেশবপুর উপজেলার নিম্ন্নাঞ্চল খ্যাত পাঁজিয়া ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর ও মাদারডাঙ্গা গ্রামের বন্যার পানি ডায়ের খালের ৮ ব্যান্ড স্লুইস গেট দিয়ে হরি নদীতে নিষ্কাশন হয়ে থাকে। ২০১০ সালের পর হরি নদী নাব্যতা হারানোর কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৭ বিলসহ কেশবপুরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। জলাবদ্ধতা নিরসনে হরি নদী খনন না করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৮ সালে অপরিকল্পিতভাবে কেশবপুরের প্রধান ৩ নদীসহ সংযোগ খালগুলো প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করে। ফলে কেশবপুরের নদী সচল থাকলেও হরি নদীতে পানি নিষ্কাশন হতে না পেরে অতিরিক্ত পলিতে নদী আপারভদ্রা নদী মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। চলতি বছরের অক্টবরে ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ডায়ের খালের ৮ ব্যান্ড স্লুইস গেটটি পুনর্খনন করা হলেও ৩ মাসেই তা পলিতে ভরাট হয়ে গেছে।
ফলে ২৭ বিলসহ পাঁজিয়া ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর ও মাদারডাঙ্গা গ্রামের পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ হয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে বোরো আবাদের লক্ষ্যে বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর গ্রামের অধিকাংশ ঘেরের পানি গত ১ সপ্তাহ ধরে ঘের মালিকরা স্যালো মেশিন দিয়ে নিষ্কাশন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ডায়ের খাল পলিতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেঁচের অতিরিক্ত পানি ওই খাল দিয়ে নিষ্কাশন হতে না পেতে উল্টো সেঁচের পানি ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে। ফলে ঘের মালিকদের সৃষ্ট বন্যায় বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর গ্রামের প্রায় ৫০ টির মতো বাড়ি তলিয়ে গেছে।
সরজমিন উপজেলার বাগডাঙ্গা-মনোহরনগর গ্রামের পরিতোষ রায়, বিকাশ রায়, মানিক চাঁদ রায়, সুখচাঁদ রায়, কার্তিক রায়, অসিম রায়, প্রদীপ রায়, সমিরন রায়, সীমা রায়সহ অনেকের সাথে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হলে তারা অভিযোগ করে জানান, পার্শ্ববর্তী মনিরামপুর উপজেলার শ্রিফলা বিলের পানি গত ১লা জানুয়ারি থেকে বয়ারখোলা ভায়া কুশখালি সড়কের ওপর ৬টি স্যালো মেশিন দিয়ে নিষ্কাশন চলছে। এ পানিও ঢুকছে বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর গ্রামে। এছাড়া বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর গ্রামের ঘেরের পানি ঘের মালিক দীন মোহাম্মদ খিরু, আকবার ও সেলিমুজ্জামান আসাদ স্যালো মেশিন দিয়ে নিষ্কাশন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ডায়ের খাল ভরাট হওয়ায় এ পানিও বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর গ্রামে ঢুকে প্লাবিত বাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওই গ্রামের অধিকাংশ রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। পানির হাত থেকে রক্ষায় তারা বাঁশের সাকো, ভেলা, ডিঙি নৌকা ও কাঠের মাচা তৈরি করে পারাপার হতে হচ্ছে। এভাবে সেচ অব্যাহত থাকলে দুই গ্রামের অধিকাংশ বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা । পাঁজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মুকুল বলেন, প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে সেচ নীতিমালা লঙ্ঘন করে ঘের মালিকরা ভূগর্ভস্থ পানি তুলে ঘের ভরাট করেন। আবার ৩০ পৌষের মধ্যে ঘেরের পানি নিষ্কাশন করে থাকেন। এ বছর পানি সরছে না বলেই পানি লোকালয়ে ঢুকছে। জনগণের অভিযোগের ভিত্তিতে ১৫/১৬ দিন আগে ঘেরের পানি নিষ্কাশন বন্ধে এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। কিন্তু ঘের মলিকরা তা না মেনে সেচ অব্যাহত রেখেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা এমএম আলমগীর কবির জানান, বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর ও মাদারডাঙ্গা গ্রামের ২ হাজার ১শ’ একর জমির মধ্যে ডাঙা মাত্র ৫শ’ ২৫ একর। অবশিষ্ট জলাকারে ১১৩ টি ছোট বড় মাছের ঘের রয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশ ঘের ওই এলাকার দীন মোহাম্মদ খিরু, আকবার ও সেলিমুজ্জামান আসাদের। কৃষকের বোরো আবাদে ঘেরের পানি নিষ্কাশনের শর্তে তারা ঘেরে সেচ দিচ্ছেন। নিষ্কাশন সম্ভব না হলে চলতি বছর ৪শ’ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ অনিশ্চিত। কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্সী আছাদুল্লাহ বলেন, পলির হাত থেকে ২৭ বিলসহ বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর গ্রাম রক্ষায় ডায়ের খালের ৮ ব্যান্ড স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়। গত অক্টোবরে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ডায়ের খালের ৮ ব্যান্ড স্লুইস গেটের পলি অপসারণ করা হয়েছিল। কিন্তু হরি নদীর নাব্য না থাকায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। হরি নদীর ভবদহ থেকে খর্নিয়া পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। ভবদহ প্রকল্পের মধ্যে ওই নদী অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যদি প্রকল্প অনুমোদন হয় তাহলে ৮/১০ বছর এলাকা জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পাবে। এছাড়া বাগডাঙ্গা এলাকার পানি সমস্যা নিরসনে গত ৯ই জানুয়ারি ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।