× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচনী সংঘাত ও হত্যাকাণ্ডে আতঙ্ক বাড়ছে চট্টগ্রামে

শেষের পাতা

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে
১৬ জানুয়ারি ২০২১, শনিবার

চসিক নির্বাচনকে ঘিরে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বাড়ছে। সচেতন মহলের মতে, চসিক নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররা একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ কামনা করছেন। আর সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা। তারপরও প্রার্থীদের অভিযোগ আচরণবিধি লঙ্ঘনের। সেই সঙ্গে বাড়ছে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও হত্যাকাণ্ড। সূত্র মতে, চট্টগ্রাম মহানগরীর ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে বেশির ভাগ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দলীয় কাউন্সিলর ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব রয়েছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে বাড়ছে উত্তেজনা। তাই নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে শঙ্কিত সাধারণ মানুষ।
শুধু তাই নয়, খোদ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও এ নিয়ে চিন্তিত। ফলে বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরিয়ে আনতে বা তাদের দমাতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথাও বলছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিদায়ী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।
তিনি বলেন, প্রার্থীদের মধ্যে কে কার অনুসারী সেটা বড় কথা নয়। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়া সাংগঠনিক অপরাধ। তাই বিদ্রোহী প্রার্থীদের সরাতে ব্যর্থ হলে দল থেকেও তাদের বহিষ্কারের পদক্ষেপ নিয়ে এগোচ্ছি আমরা।

এদিকে নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান। তিনি বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতার যে ঘটনা ঘটছে সেই বিষয়ে আমরা কঠোর নজরদারি করছি। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধে প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে কাজ করছি।

তিনি বলেন, ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে যে ঘটনা ঘটেছে আমরা সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে দিয়ে সেটি পুরো নিয়ন্ত্রণে এনেছি। জনগণকে নির্বিঘ্নে ভোটদানের পরিবেশ নিশ্চিত করছি। আরো যেসব ওয়ার্ডে সহিংসতার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে সেখানে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে বৃহস্পতিবার থেকে নগরজুড়ে চেকপোস্ট ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এ বিশেষ টহল চলবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয় সেজন্য এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতে ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর ও বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল কাদেরের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত হন। আহত হন আরো দু’জন। এ ঘটনায় বিদ্রোহী প্রার্থী কাদেরসহ ১১ জন বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছে। ঘটনার পর পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এর আগে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর দিন ৮ই জানুয়ারি নগরীর চকবাজার এলাকায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রচারণায় প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে আহত হন আশিকুর রহমান রোহিত। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ভোরে চমেক হাসপাতালে তার মৃত্যু ঘটে।

এ ঘটনায় ৯ই জানুয়ারি আশিকুর রহমানের ভাই জাহিদুর রহমান বাদী হয়ে বাকলিয়া থানায় তিনজনকে আসামি করে একটি হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্তরা হলেন, মহিউদ্দিন, বাবু এবং সাবু। ঘটনার পর থেকে তারা পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলাচ্ছে বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বাকলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ইয়াসির আরাফাত।
এদিকে গতকাল সকালে আশিকুর রহমানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নগরীর চকবাজার গুলজার মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। পরে পুলিশ এসে তাদের সরিয়ে দেয়। নির্বাচনী সহিংসতায় আশিকুর রহমান রোহিত চট্টগ্রামে দ্বিতীয় হত্যাকাণ্ডের শিকার বলে জানান ছাত্রলীগ নেতারা।

স্থানীয় জনগণ ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, চট্টগ্রাম মহানগরীর ১ নম্বর পাহাড়তলি, ২ নম্বর জালালাবাদ, ৪ নম্বর চান্দগাঁও, ৯ নম্বর পাহাড়তলি, ১০ নম্বর কাট্টলি, ১২ নম্বর সরাইপাড়া, ১৪ নম্বর লালখানবাজার, ২৩ নম্বর পাঠানটুলি, ২৭ নম্বর উত্তর হালিশহর, ২৮ নম্বর মোগলটুলি, ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ি, ৩১ নম্বর আলকরণ, ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গীবাজার, ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ড সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে নগরজুড়ে আলোচিত হচ্ছে। নির্বাচনে এসব ওয়ার্ডে সহিংসতা বাড়তে পারে। তাই এলাকার সাধারণ মানুষ শঙ্কিত। এর মধ্যে চকবাজার, বাকলিয়া, ফিরিঙ্গীবাজার, পাহাড়তলি, চান্দগাঁও আবাসিক, পুরাতন চান্দগাঁও, আগ্রাবাদ, বায়েজিদ, মোহরাসহ বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় কয়েকটি মামলাও হয়। তাই নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে- নির্বাচন কমিশনে দিনদিন অভিযোগের সংখ্যাও বাড়ছে।

উল্লেখ্য, আগামী ২৭শে জানুয়ারি চসিক নির্বাচনে ৭ জন মেয়র প্রার্থী, ৫৭ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী ও ১৭২ জন সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরসহ মোট ২৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৪১টি ওয়ার্ডে ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। চসিক নির্বাচনে এবার মোট ভোটার ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর