ইউনাইটেড হাসপাতালের আগুনে কোভিড ইউনিটের পাঁচ রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত চার পরিবারকে হাইকোর্ট ৩০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার যে আদেশ দিয়েছিল, তা স্থগিত করে দিয়েছে চেম্বার আদালত। রোববার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারক মো. নূরুজ্জামান আট সপ্তাহের জন্য হাইকোর্টের আদেশ স্থাগতি করে দেন।
আদালতে ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান। রিটকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী অনীক আর হক, হাসান এম এস আজিম, মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ, নিয়াজ মোহাম্মদ মাহবুব। পরে মোস্তাফিজুর রহমান সাংবদিকদের বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত চার পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছিল, তা স্থগিত করে দিয়েছেন চেম্বার আদালত। তিনি আরো বলেন, এটা জনস্বার্থের কোনো মামলা না। যারা আবেদনকারী তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য। প্রশ্ন হচ্ছে, একটা বেসরকারি পক্ষ আরেকটি বেসরকারি পক্ষের বিরুদ্ধে রিট করার এখতিয়ার রাখে কিনা।
এ ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য আছে। তাছাড়া এ ঘটনায় প্রকৃতপক্ষে ইউনাইটেড হাসপাতালের দায় আছে কিনা সেটা সাক্ষ্য-প্রমাণের বিষয়। রিটে এই বিষয়টির নিরসন সম্ভব না। তার জন্য নি¤œ আদালতে মামলা করতে হবে। ফ্যাটাল অ্যাকসিডেন্ট অ্যাক্ট ১৮৫৫ অনুযায়ী দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু যদি হয়, তাহলে সেই মৃত্যুতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত, তারা ক্ষতিপূরণের মামলা অবশ্যই করতে পারবেন। তার জন্য নি¤œ আদালতে দেওয়ানী মামলা করতে হবে। হাই কোর্টের আদেশের অনুলিপি পেলে নিয়মিত লিভ টু আপিল করা হবে বলেও জানান ইউনাইটেড হাসপাতালের এই আইনজীবী। তবে রিটকারী আইনজীবী নিয়াজ মো. মাহবুুব মানবজমিনকে বলেন, আমরা চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে (ভ্যাকেট এপ্লিকেশন) আবেদন করব। রিট এখতিয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের অপজিশন লার্নেটরা বলছেন একটি বেসরকারি পক্ষ আরেকটি বেসরকারি পক্ষের বিরুদ্ধে রিট করার এখতিয়ার প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের রিটের এখতিয়ার আছে। গ্রীণ লাইনের বিরুদ্ধে রিট মামলা হয়েছে, দুই বাসের প্রতিযোগিতায় রাজিবের হাত কাটায় ঘটনাতেও রিট হওয়া নজির রয়েছে।
গত ১১ই জানুয়ারি বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুন লেগে কোভিড ইউনিটের পাঁচ রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত চার পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ৩০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে ফের নির্দেশ দেন। ১৫ দিনের মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তা পরিশোধ করতে বলা হয়। এছাড়া, আগুনে মারা যাওয়া চার রোগীর ক্ষতিগ্রস্ত চার পরিবারকে ১৫ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। একইসঙ্গে হাসপাতালে রোগীদের অধিকার রক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং অবহেলার দায়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
এর আগে, গত বছরের ২৭ মে রাতে গুলশানের বেসরকারি ওই হাসপাতালের প্রাঙ্গণে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য করা আইসোলেশন ইউনিটে আগুন লেগে পাঁচ রোগীর মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে তিনজনের কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিল। ওই পাঁচজন হলেন- মো. মাহবুব (৫০), মো. মনির হোসেন (৭৫), ভারনন অ্যান্থনি পল (৭৪), খোদেজা বেগম (৭০) ও রিয়াজ উল আলম (৪৫)।এই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও গাফিলতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন এবং নিহতদের পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে গত ৩০ মে একটি রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নিয়াজ মোহাম্মদ মাহবুব ।