ঘড়ির কাঁটাটা বড্ড দ্রুতগতিতে ঘুরছে। কোনভাবে তাকে আটকে রাখতে পারছেন না বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। যার ভয়ে তটস্থ বিশ্ব, তার সঙ্গে যেন উপহাস করছে সময়। মঙ্গলবার এবং বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত তার প্রেসিডেন্সির ক্ষমতা টিকে আছে। এত স্বল্প সময়ে তিনি কি করবেন! কাকে ‘সাইজ’ করবেন! কাকে ক্ষমা করবেন! নাকি নিজে অথবা পরিবারের সদস্যদের ভবিষ্যত বিচার থেকে দায়মুক্তি দেবেন! অসংখ্য চিন্তাভাবনা তার মাথার মধ্যে কিলবিল করছে এখন। এমনই সময়ে মঙ্গলবার তিনি প্রায় ১০০ ব্যক্তিকে দায়মুক্তি দিতে চলেছেন বলে খবর প্রকাশ করেছে অনলাইন সিএনএন। এতে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে ভালভাবে জানেন এমন তিনজন সূত্র জানিয়েছেন, যাদেরকে তিনি ক্ষমা করতে চলেছেন তার মধ্যে রয়েছে হোয়াইট কলার ক্রিমিনাল, উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিরা। তবে এই তালিকায় তিনি নিজে থাকছেন না বলে মনে করা হচ্ছে।
কেন? এর উত্তরও দিয়েছে সিএনএন। ক্ষমতার শেষ মেয়াদে ট্রাম্প তার নিজেকে, নিজের পরিবারের সদস্যদেরকে এবং ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডি জুলিয়ানসহ বহুল বিতর্কিত সব মিত্রকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু নিজের, পরিবারের সদস্যদের ক্ষমা করে দেয়ার বিষয়টি ট্রাম্পের জন্য খুব জটিল হয়ে উঠেছে ৬ই জানুয়ারি দাঙ্গার পর। তার বিরুদ্ধে মার্কিন কংগ্রেসে অভিশংসন প্রস্তাব উঠেছে দ্বিতীয়বারের মতো। ফলে তিনি এ যাত্রায় নিজেকে দায়মুক্তির ঘোষণা নাও দিতে পারেন। তবে তিনি জানেন, ক্ষমতার শেষ মিনিটেও তিনি ঝড় তুলে দেয়ার মতো ক্ষমতা রাখেন। পারমাণবিক অস্ত্রের কোড ব্যবহার করে ইরানের ওপর চালাতে পারেন সামরিক হামলা। নিয়ম অনুযায়ী, বুধবার ২০ শে জানুয়ারি দুপুর ১২টা নাগাদ আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি প্রেসিডেন্ট। এ সময়ে তিনি যা চাইবেন, নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে তা-ই করে দিতে পারেন। কিন্তু ৬ই জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার পর তার উপদেষ্টারা তাকে বুঝিয়েছেন, তিনি যেন নিজেকে দায়মুক্তি বা ক্ষমা দেয়ার ঘোষণা না করেন। কারণ, তিনি যদি এমন ঘোষণা দেন, তাহলে এটাই প্রতীয়মাণ হবে যে, তিনি অপরাধী। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ অনেক উপদেষ্টা তাকে বুদ্ধি দিয়েছেন, তিনি যেন ক্যাপিটল হিলে তা-ব চালানো কাউকে দায়মুক্তি না দেন। তবে প্রথমদিকে ওই হামলাকারীদের পক্ষ নিয়েছিলেন ট্রাম্প। তিনি বলেছিলেন, তার সমর্থকরা কোনো অন্যায় করেননি। ট্রাম্পের মিত্র সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম রোববার ফক্স নিউজকে বলেছেন, ক্যাপিটল হিলে বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত সবাইকে ক্ষমা করে দিতে প্রেসিডেন্টের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন বিপুল পরিমাণ মানুষ। লিন্ডসে গ্রাহামের মতে, এসব মানুষকে ক্ষমা করে দেয়া জলে তা হবে অন্যায়।
হোয়াইট হাউজের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেকে ক্ষমা করে দেয়ার কোনো পেপারওয়ার্ক এখনও করা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০ শে জানুয়ারি হোয়াইট হাউজ ত্যাগ করবেন ট্রাম্প। এদিন নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত তিনি যেকাউকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। এতে আরো নজরকাড়া নামের মধ্যে রয়েছে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। যারা প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা পাচ্ছেন তার মধ্যে তিনি নেই বলে জানা গেছে। তবে যে তালিকা করা হয়েছে তা এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত নয়। এ তালিকা পরিবর্তন করা হতে পারে। ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা স্টিফ ব্যানন এই ক্ষমা পাচ্ছেন কিনা তাও স্পষ্ট নয়। হোয়াইট হাউজের ভিতরে এখনও যেসব উপদেষ্টা অবস্থান করছেন- কাকে ক্ষমা করা হবে, তাদের নাম তারা এখনও সুপারিশ করছেন। এর মধ্যে রয়েছেন হোয়াইট হাউজের বাইরের লোকজনও। তারা কয়েক মাস ধরে বা তাদের মক্কেলদের মাধ্যমে এ বিষয়ে তদ্বির চালাচ্ছেন।
ট্রাম্প যাদের ক্ষমা করে দেবেন তার মধ্যে থাকতে পারেন ফ্লোরিডার পাম বিচে চোখের একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক ডা. সলোমন মেলগেন। স্বাস্থ্যসেবার প্রতারণার ফলে কয়েক ডজন মানুষের মৃত্যুর জন্য তাকে অভিযুক্ত করে জেলে পাঠানো হয়েছে। তিনিও আশা করছেন প্রেসিডেন্টের ক্ষমার তালিকায় তার নামটি থাকুক। নিউ জার্সির ডেমোক্রেটিক সিনেটর বব মেন্ডেজের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন তিনি। তাকে স্বাস্থ্যখাতে জালিয়াতির জন্য ২০১৮ সালে ১৭ বছরের জেল দেয়া হয়েছে। ওদিকে হোয়াইট হাউজের মধ্যে শেষ মুহূর্তে ক্ষমা করে দেয়ার আবেদনের স্তূপ জমে উঠেছে। রোববার নিউ ইয়র্ক টাইমস রিপোর্ট করেছে যে, এই ক্ষমা আদায় করে দেয়ার জন্য কিছু মানুষ হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ ডলার।