× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ইউরোপে সাইকেলের স্বর্ণ যুগ, সরব আলোচনায় বৃটিশ ও নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন

সাঈদ চৌধুরী
(৩ বছর আগে) জানুয়ারি ১৯, ২০২১, মঙ্গলবার, ৩:৩৯ অপরাহ্ন
ফাইল ফটো

বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সাইকেল চড়া নিয়ে এক যুগের বেশি সময় ধরে সর্বত্র আলোচনা হয়। নতুন করে আলোচনায় এসেছেন নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট। ক্ষমতা আরোহনের দিন সাইকেলে চড়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন তিনি। সম্প্রতি সংসদ থেকে পদত্যাগ করে কোন রকম নিরাপত্তা সহায়তা না নিয়ে সাইকেলে চড়েই বিদায় নেয়ার বিষয়টি বেশ মুখরোচক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।  

বৃটেনে যখন তৃতীয় লকডাউন চলছে, এমতাবস্থায় গেল সপ্তাহে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বাইসাইকেল চালিয়ে সাত মাইল দূর পর্যন্ত অনুশীলন করে টক অব দ্যা ইউরোপে পরিণত হন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বৃটেনের বেরিয়ে আসা তথা বেক্সিট আলোচনায় বরিস জনসন এমনিতেই বেশ আলোচিত। তার ছোটখাটো বিষয় এখন ইউরোপ জুড়ে রসঘন আলোচনার খোরাক জোগায়।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বলা হয়েছে, পূর্ব লন্ডনের অলিম্পিক পার্কে প্রধানমন্ত্রীকে সাইকেলে দেখার পর বিরোধী লেবার পার্টি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। তবে লকডাউনের নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিদিন ঘরের বাইরে শরীরচর্চা অনুমোদিত আছে।

২০১৯ সালে তেরেসা মে’র গমনের পর বরিস জনসন বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী হন।
তারও আগে  কনজারভেটিভ দলের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। এসময় আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচন করে নিজের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমানেও সক্ষম হন। তখন মিডিয়ায় তার শখ ও সফলতার বর্ণনা আসতে থাকে।

সেবছর নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ক্রিস্টমাসের কেনাকাটা করতে পারেননি জনসন। বড় দিনের উপহার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, কেউ হয়তো আমাকে সাইকেল উপহার দেবে না, তবে নিজেই একটি সাইকেল কিনে নিতে হবে।

বরিস জনসন ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত হেনলির সংসদ সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৮ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত লন্ডনের মেয়র ছিলেন। এরপর তিনি আক্সব্রিজ ও সাউথ রাইস্লিপের সংসদ সদস্য হন। ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত পররাষ্টমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তখনও সাইকেল তার প্রিয় সঙ্গী ছিল। সব সময় তার সখের কাজ হচ্ছে ফুটপাথ দিয়ে সাইকেল চালিয়ে ঘুরে বেড়ানো। সাইকেল চালানোর সময় মোজা যেন চেইনে আটকে না যায়, সেজন্য পায়ে লম্বা মোজা পরতে হয় তাকে।

লন্ডনের মেয়র থাকাকালীনও সাইকেলে চড়ে বেড়াতেন তিনি। মেয়র নির্বাচিত হবার পরপরই একদিন ইস্ট লন্ডনে সাইকেল চালিয়ে এসে বাংলাদেশী কমিউনিটিকে চমৎকৃত করেছিলেন। সেদিন তাকে আমার সম্পাদিত ইউকে এশিয়ান রেস্টুরেন্ট ডাইরেক্টরি আনুষ্ঠানিক ভাবে উপহার দিয়েছিলাম। যেখানে বৃটেনে বাংলাদেশী প্রায় ১০ হাজার রেস্টুরেন্ট ও টেকওয়ে সহ এশিয়ান সকল রেস্তোরাঁর নাম ঠিকানা ও মজাদার খাবারের রেসিপি রয়েছে। বরিস জনসন এতে মুগ্ধ হয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন।

লন্ডনে সাইকেল চালানোর জন্যে উন্মুক্ত রাস্তা করেছেন বরিস জনসন। আরো উপযুক্ত রাস্তা তৈরি ও বৃদ্ধি করার আগ্রহ রয়েছে। একবার পার্লামেন্টের বাইরে থেকে তার সাইকেল চুরি হয়ে গিয়েছিল। তখন তিনি কেঁদেছিলেন বলে কনজারভেটিভ প্রধানের প্রতিযোগিতার সময় বেশ রসের সাথে উল্লেখ করে সরব হাততালি পেয়েছিলেন।

মূলত স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষার জন্য বরিস জনসন সাইকেল চড়েন। অন্যকেও উৎসাহিত করেন। অ্যান্টি ওবেসিটি বা মোটা হয়ে যাবার মত কঠিন রোগ নিবারণ করতে এটি বেশ সহায়ক। মোটা শরীরের মানুষ করোনা আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রেও আশঙ্কা বেশি। সে কারণে অ্যান্টি ওবেসিটি ক্যাম্পেন চালু করেছে বৃটেন৷ এতে সাইক্লিং ও হাঁটার বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করা হয়। সাইকেল ব্যবহারের ফলে গাড়ির ব্যবহার কমলে বায়ু দূষণের মাত্রা কমবে৷ শারীরিক ফিটনেসের পাশাপাশি নির্মল বাতাস সংরক্ষণ হবে।

এদিকে নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট ২০১৭ সালে তৃতীয় বার ক্ষমতায় আরোহনের প্রথম দিন সাইকেল চড়ে সরব আলোচনার জন্ম দেন। অনেকই তাকে বরিস জনসনের সমর্থক হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। সেদিন কোন রকম প্রটোকল ছাড়াই সাইকেলে চড়ে মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য রাজপ্রাসাদে গিয়েছিলেন তিনি।

মার্ক ২০১০ সাল থেকে নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। প্রায়ই তিনি সাইকেল চড়ে অফিস করতেন। বাইসাইকেলে সর্বত্র ঘুরেছেন আপন মনে। বৃটেনের মত নেদারল্যান্ডের রাস্তায় সাইকেল-পরিকাঠামো গড়ে তুলেছেন। অতিরিক্ত মেঘ ও ঠান্ডা না থাকায় সাইকেল নিয়ে প্রতিনিয়ত বিনোদন ও ব্যায়াম করেছেন। সাইকেলের জন্য নির্মিত পথে কোন রকম ট্রাফিক জামে পড়তে হয়নি তাকে।

২০১৭ সালে ৩য় বার ক্ষমতা গ্রহনের পরই প্রধানমন্ত্রী নেদারল্যান্ডে দশ বছর ব্যাপী একটি সাইকেল প্রকল্প গ্রহন করেন। দেশের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় সাইকেলের ব্যবহার বাড়ানোর এ প্রয়াস বেশ সফল হয়েছে। সাইকেল লেন প্রায় ৩৫ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করা হয়েছে। নেদারল্যান্ডের উতরেখ শহরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আন্ডারগ্রাউন্ড সাইকেল পার্কিং রয়েছে।  

গত শুক্রবার সাইকেল চড়ে নেদারল্যান্ডের রাজা উইলিয়াম আলেক্সান্ডারের সঙ্গে শেষ দেখা করতে যান মার্ক রুট। সম্প্রতি সামান্য একটি অভিযোগের কারণে তার সরকার পদত্যাগ করে। এই পদত্যাগের খবর জানাতে রাজার বাড়িতে তিনি সাইকেল চড়ে গিয়েছিলেন। একই ভাবে সংসদ থেকে তার সখের সাইকেল নিয়ে কোন রকম নিরাপত্তা সহায়তা ছাড়াই বাড়ি ফিরে গেছেন। সাইকেল চড়ার এই ছবি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।

একবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেদারল্যান্ড সফরে গেলে প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট তাকে সাইকেল উপহার দেন। ভারতীয় মিডিয়ায় এটি বেশ আলোচিত হয়। একসময় সাইকেল চালিয়ে অফিস করার মতো চমক দেখাতে চাইতেন বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ। তবে অনেকে তখন সেটাকে স্ট্যান্ডবাজি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ইউরোপে ডাচ প্রধানমন্ত্রীও সাইকেলপ্রেমী হিসেবে পরিচিত। সরকার প্রধানদের সাইকেল প্রীতি নতুন প্রজন্মের মধ্যে বেশ প্রভাব বিস্তার করেছে। বলা যায়, ইউরোপে সাইকেলের এখন স্বর্ণ যুগ চলছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর