× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ওয়াশিংটনে মেরামতের রাজনীতি

প্রথম পাতা

অনিম আরাফাত
২২ জানুয়ারি ২০২১, শুক্রবার

আগে থেকেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম দিনটিকে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরে রেখেছিলেন জো বাইডেন। তাই শপথ গ্রহণের পর নষ্ট করেন নি একটি মিনিটও। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে করেন নি কোনো বিষোদগারও। তিনি বদলায় নয়, বদলে বিশ্বাসী। তাই গত ৪ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের যে ক্ষত হয়েছিল তা নিরাময়ে হাত লাগিয়েছেন। শুরু করেছেন মেরামতের রাজনীতি। এরই মধ্যে স্বাক্ষর করেছেন ১৭টি নির্বাহী আদেশে। ডনাল্ড ট্রাম্পের সময়কার একাধিক সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন।


সবার আগে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সামাল দিতে নেমেছেন বাইডেন। আগেই বলেছিলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যতো প্রাণ হারিয়েছে তার মাতৃভূমি, কোভিড কেড়ে নিয়েছে তার থেকেও বেশি। তাই কোভিড নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সব হেয়ালি শেষ করে, এখন বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী  একের পর এক কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন তিনি। শপথ অনুষ্ঠানে দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ইতিহাস রচনা করবো। আমাদের অনেক ক্ষত মেরামত করতে হবে, অনেক কিছু গড়তে হবে। অফিসের প্রথমদিনে তারই প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। বাইডেন ঘরে ও বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর। তবে এ জন্য ট্রাম্প জমানার নানা পদক্ষেপে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। অনেক কিছুই গড়তে হবে নতুন করে। এরই মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট আগামী দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সেই বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

প্রথমদিনেই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ৭টি দেশের ওপর সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা বাতিল করেছেন বাইডেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প শপথ গ্রহণের পর প্রথম ২৪ ঘণ্টায় স্বাক্ষর করেছিলেন ৮টি নির্বাহী আদেশে। তার পূর্বে থাকা বারাক ওবামা স্বাক্ষর করেছিলেন ৯টি নির্বাহী আদেশে। তবে তাদের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন বাইডেন। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন আদেশে স্বাক্ষর করেছেন প্রথম দিনেই। শপথ গ্রহণ করেই তিনি ওভাল অফিসে ছুটে যান। সাংবাদিকদের সামনেই সাবেক প্রশাসনের একাধিক নীতি পরিবর্তন করে স্বাক্ষর করেন। কোভিড পরিস্থিতি সামলাতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। সঙ্গে রেখেছেন জলবায়ু পরিবর্তনকেও। সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নষ্ট করার মতো সময় আর নেই হাতে। যুক্তরাষ্ট্রে জাতিগত সমতা নিশ্চিত ও অবহেলিত সম্প্রদায়গুলোকে নিয়ে কাজ করার আশ্বাসও দিয়েছেন। যেসব নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন তার মধ্যে রয়েছে- ফেডারেল প্রপার্টিতে এবং ফেডারেল কর্মচারীদের জন্য মুখে মাস্কপরা বাধ্যতামূলক করা। করোনাভাইরাস ইস্যুতে সমন্বয় রক্ষার জন্য হোয়াইট হাউসে একটি নতুন অফিস স্থাপন করা হবে। একইসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার যে প্রক্রিয়া সাবেক প্রশাসন নিয়েছিল তা স্থগিত করা হয়েছে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে আবার নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রকে যুক্ত করার বিষয়ে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন বাইডেন। দ্রুততার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবিলার একটি আদেশ দিয়েছেন। আবার কিস্টোন এক্সএল তেলের পাইপলাইন স্থাপনের অনুমোদন বাতিল করেছেন। মেক্সিকোর সঙ্গে সীমান্ত দেয়াল নির্মাণের বিষয়ে তহবিল সংগ্রহও বাতিল করেছেন বাইডেন। তিনি অভিবাসীদের সমস্যা সমাধানে একটি নির্দেশ দিয়েছেন। বাইডেনের প্রেস সেক্রেটারি জেন পসাকি জানিয়েছেন, আগামী দিনে যে বিপুল পরিমাণ নির্বাহী আদেশ দেয়া হবে তা প্রথম কার্যদিবসে শুধুমাত্র শুরু হয়েছে। সামনের দিন ও সপ্তাহগুলোতে আরো নির্বাহী আদেশ ঘোষণা করা হবে।

প্রথম ১০০ দিনে যা যা করবেন বাইডেন: ক্ষমতা হাতে পাওয়ার প্রথম ১০০ দিনে জো বাইডেনের প্রথম টার্গেট হচ্ছে জনগণের জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা। তার প্রশাসন প্রথম ১০০ দিনেই ১০০ মিলিয়ন মার্কিনিকে ভ্যাকসিন প্রদান করার লক্ষ্য হাতে নিয়েছে। ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ যেহেতু প্রায় ৯১ শতাংশ কার্যকর তাই তার প্রশাসন দ্বিতীয় ডোজ জমা না রেখে সেটা অধিকসংখ্যক জনগণের মধ্যে প্রদান করবে। প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে মার্কিনিদের জন্য করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিশ্চিতে ১৬০ বিলিয়ন ডলারের ফান্ড গঠন করবেন বাইডেন। এর অধীনে অভিবাসীসহ দেশটিতে অবস্থানরত সকলেই বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পাবে। কারাগারগুলোতে বন্দিদের কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়া থামাতে তহবিল বৃদ্ধি করবেন তিনি। একইসঙ্গে দেশজুড়ে একটি গণশিক্ষা কার্যক্রম চালু করবেন। এতে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ওপরে জনগণের আস্থা গঠনের চেষ্টা করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছেন জো বাইডেন। এর আগে মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন তিনি। এটি যদি কংগ্রেসে অনুমোদিত হয় তাহলে তা মার্কিন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট। তবে রিপাবলিকান আইন প্রণেতারা এর বিরোধীতা করতে পারেন বলে আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া প্রথম ১০০ দিনে বাইডেন বেকারত্ব ইনস্যুরেন্সের মেয়াদ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়াবেন। স্কুলগুলো খুলতে সেখানে নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টিতে ১৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবেন। ক্ষুদ্র ব্যবসাকে উৎসাহিত করতে ৪৪০ বিলিয়ন ডলার ঘোষণা করবেন। জরুরি তহবিল গঠন করতে রাজ্যগুলোকে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার করে প্রদান করবেন তিনি। বাইডেনের প্রথম ১০০ দিনেই ডনাল্ড ট্রাম্পের সময়কার কর ছাড় বাতিল করা হবে। ট্রাম্প তার ক্ষমতার প্রথমদিকে ২০১৭ সালে ওই কর ছাড় অনুমোদন করেছিলেন। জো বাইডেন দাবি করেছেন, এর ফলে মূলত ধনী আমেরিকানরাই লাভবান হচ্ছেন। তাই এটি তিনি বাতিল করে দেবেন।

সামনের দিনগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন। যেসব জনগোষ্ঠী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের জন্য আলাদা তহবিল গঠন করবেন জো বাইডেন। ২০৫০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নিয়ে আসতে ২ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্লিন এনার্জি পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন তিনি। এছাড়া, বিশ্ব নেতাদের নিয়ে একটি জলবায়ু সংকট সম্মেলন আয়োজনেরও পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া, এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষদের সুরক্ষার যে অঙ্গীকার জো বাইডেন করেছিলেন তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন তিনি। আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে তৃতীয় লিঙ্গ ও সমকামীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে তিনি তহবিল বরাদ্দ করবেন। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়ার ক্ষেত্রে যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা তিনি প্রত্যাহার করবেন। এরই মধ্যে এ নিয়ে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করা হয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর