সকালে ঘন কুয়াশা কেটে যেতেই ঝলমলে আকাশ। তাই টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ। এতে অবশ্য অবাক ক্রিকেট সমর্থক থেকে বোদ্ধা বিশ্লেষকরা। ক্যারিবীয়রা ভুলের খেসারত দিতে শুরু করেন সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে। ক্রিজে শুধু আসা যাওয়ার মিছিল। দলের ৮ ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফেরেন স্কোর বোর্ডে তখন মাত্র ৮৮ রান। তবে মান বাঁচান রভম্যান পাওয়েল। তার ৪১ রানে ভর করেই প্রথম ম্যাচে করা ১২২ ছাড়ানো সম্ভব হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
গতকাল ৪৩.৪ ওভার খেলে ১৪৮ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম ম্যাচের মতোই ছিল টাইগার বোলারদের দাপট। এই ম্যাচে দারুণভাবে নিজেকে ফিরে পেয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৪৩ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার ৪ উইকেটের দেখা পেলেন এই তরুণ অফস্পিনার। আর দুইবারই জিতলেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। গতকাল ৯.৪ ওভার বল করে খরচ করেন ২৫ রান। প্রথম ম্যাচে তার শিকার ছিল মাত্র এক উইকেট। তাই শঙ্কা ছিল সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে একাদশে জায়গা পাওয়া নিয়ে। তবে আস্থা রেখেছে দল, তিনিও দিয়েছেন তার প্রতিদান। অন্যদিকে মোস্তাফিজ তার দুর্দান্ত ফর্ম ধরে রেখে গতকালও নেন ২ উইকেট। প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে ৪ উইকেট নেয়া সাকিবের শিকার ২টি। তবে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই নড়বড়ে তরুণ পেসার হাসান মাহমুদ। ৯ ওভার বল খরচ করেছেন ৫৪ রান। নিয়েছেন মাত্র ১ উইকেট। নিজের অভিষেক ম্যাচে তার শিকার ছিল ৩টি।
গেল বছর দেশের মাটিতে শেষ ওয়ানডে সিরিজে মিরাজ তিন ম্যাচ খেলে ব্যর্থ ছিলেন। ২০১৮তে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে প্রথম ৪ উইকেটের দেখা পেয়েছিলেন। এরপর ২০ ইনিংস বল করার সুযোগ পেয়ে মাত্র তিন ম্যাচে নেন সর্বোচ্চ ২ করে উইকেট।
মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে এদিনও দলকে প্রথম উইকেট উপহার দেন মোস্তাফিজ। আগের ম্যাচেও একই উইকেটে খেলা হয়েছে। এদিন ব্যাটে বল আসছিল। কিন্তু ফিজ লাইন লেন্থ ধরে রেখেছিলেন দারুণভাবে। সেই সঙ্গে তার দীর্ঘ দিন ধরে বল ভিতরে ঢোকানোর পরিশ্রমটাও সফল হয়েছে। এদিনও তার ভিতরে ঢোকা বলে আউট জন সুনিল অ্যামব্রিস। গালিতে ক্যাচ লুফে নেন মিরাজ।
এরপর মিরাজের বলে এলোমেলো হয়ে যায় ক্যারিবীয়দের ব্যাটিং লাইন। চতুর্থ ওভারে জোড়া আঘাতে কেয়র্ন অটলি ও জশুয়া দা সিলভাকে বিদায় করেন এই অফস্পিনার। ২ চার ও এক ছয়ে ৪৪ বলে ২৪ রান করেন অভিষিক্ত অটলি। এরপর সাকিবের শিকার আন্দ্রে ম্যাকার্থি। তার বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। প্রথম ম্যাচে দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ে প্রতিরোধ গড়া কাইল মেয়ার্স এদিন রানের খাতা খোলার আগেই রান আউট হন। মাত্র ৪১ রানে তখন ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে উইন্ডিজ। এরপর দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন বনার ক্রুমার। কিন্তু ব্যক্তিগত ২০ রানে তাকে সাজঘরে ফেরান হাসান মাহমুদ।
১১ রান করে সাকিবের বলে বিদায় নেন অদিনায়ক জেসন মোহাম্মদও। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যর্থ রেমন রিফার। মিরাজের বলে এলবিডব্লিউ রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরায় বাংলাদেশ। এরপর শুরু হয় রভম্যান পাওয়েলের লড়াই। শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে দলকে দেড়শ রানের কাছে নিয়ে যান তিনি। নবম উইকেটে তাকে দারুণ সঙ্গ দেন আলজারি জোসেফ। তিন চারে ১৭ রান করা এই টেল এন্ডার ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে সফরকারীদের সর্বোচ্চ ৩২ রানের জুটি ভাঙেন মোস্তাফিজ। আর মিরাজের শেষ ওভারে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে বলের নাগাল পাননি পাওয়েল। বেলস ফেলে দেন মুশফিক। ৬৬ বলে দুই চার ও এক ছক্কায় ৪১ রান করেন পাওয়েল। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে উইকেটশূন্য থাকেন টাইগারদের অভিজ্ঞ পেসার রুবেল হোসেন।
গতকাল মিরাজ বলেন, ‘আমার পারফর্মেন্সে আমি অনেক খুশি। গত ম্যাচে ভালো জায়গায় বল ফেলতে পারিনি। এই বিষয়ে সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছিলাম যা অনেক কাজে দিয়েছে। আমাদের স্পিন কোচকেও (সোহেল ইসলাম) অনেক ধন্যবাদ। তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ পেয়েছি।’