তুই যদি আমার হইতিরে বন্ধু। আমি হইতাম তোর। কোলেতে বসাইয়া বন্ধু করিতাম আদর তুই যদি আমার হইতিরে...। গ্রাম বংলার এক প্রেমিকের এমন বিচ্ছেদি গান হৃদয় ছুঁয়ে যায় যে কারো। কিন্তু এ গান এখন আর তেমনটা শোনা যায়না। দিন বদলেছে। বিচ্ছেদি গান শুধু ঠাঁই নিয়েছে বয়াতির আসরে। এখন হাই হ্যলোতেই একাকার হয়ে যায় দুজন।
সেটা কোন রিসোর্ট, বাগানবাড়ি, হোটেল কিংবা ফ্ল্যাটে। রাস্তাঘাটে বেহায়াপনা দেখে ওদের লজ্জা না লাগলেও যারা দেখেন তারা লজ্জায় মুখ লুকিয়ে নেন। কিন্তু কদিন ধরে একটি প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মকর্তার সহায়তায় দুজনের রঙ্গলীলা দেশজুড়ে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর প্রতিষ্ঠানটি যদি কারাগার হয় তাহলেতো চোখ কপালে উঠার কথা। কারাগারে তাদেরই স্থান হয় যারা অপরাধী। শাস্তির আড়ালে সংশোধনের পথও এটা। কিন্তু সেই কারাগারের এক কয়েদি আলাদা রুমে বাইরে থেকে এক নারী এনে পাক্কা ৪৫ মিনিট একান্তে সময় কাটায়! এমন নজিরবিহীন ঘটনাই ঘটলো কাশিমপুর কারাগারে। কর্তৃপক্ষের সহায়তায় প্রাথমিক তদন্তে এটা প্রমাণিত হয়েছে। পাঁচ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখানেই কি শেষ হবে ঘটনার? কারাগারে অনিয়মের চিত্র কদিন পরপরই পত্রিকার পাতার শিরোনাম হচ্ছে। কিন্তু কারাগারে নারীরঙ্গ এটাই প্রথম। কর্তৃপক্ষ কি লাজ শরমের বালাই খেয়েছেন। না হলে এত বড় ঘটনার পর তারা নিজ দায়িত্বে থাকেন কি করে? নিজ থেকেই পদত্যাগ করে চলে যেতেন। এটা তো বাংলাদেশ। এখানে এমনটা হওয়ার উদাহরণ নেই। তাই এটা আশা করাও বৃথা। কারাগারের এ চিত্রই আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সারা দেশে কি হচ্ছে। হলমার্ক গ্রুপের সৃষ্টিই যেন হয়েছে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডকে জায়েজ করার জন্য। লোন কেলেঙ্কারিতে আলোচনায় এসে কত যে কাণ্ড করেছে তার ইয়াত্তা নেই। ভুল তথ্য দিয়ে জামিন নিয়ে একবার আলোচনায় আসে। সেই জামিন আবার বাতিল হয়। হলমার্ক গ্রুপের পেছনের রাঘব বোয়ালদের নামও বেরিয়ে আসে। সবাই রয়েছেন বহাল তবিয়তে। সেসব থাক এখন। কারাগারের ভেতর হেরেম খানাও আছে হলমার্কের ঘটনাই জানান দিল। বাইরে থেকে নারী এনে একান্তে সময় কাটানো। কারাগারে এমন আমুদে জীবন কাটানো কয়েদি বাইরে আসার প্রয়োজন কি? যেখানে সরকারি কর্মকর্তারা থাকেন তার পাইক পেয়াদা। পাহারাধার। এমন রাজকীয় জীবন ছেড়ে আসতে কার মন চায়? এখন যদি অন্য কয়েদিরাও এমন দাবি তুলে স্লোগান দেয় তাদের কি দোষ দেয়া যাবে? অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শুক্রবারই সাংবাদিকদের বলেছেন, কারাগারে বন্দি অবস্থায় নারীসঙ্গ জঘন্যতম অপরাধ। কারাগারের ভেতরে নারী-সঙ্গের প্রমাণ মিললে, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি তদন্তে গঠন করা হয়েছে, তিন সদস্যের কমিটি। এ কমিটিই তদন্ত করতে প্রাথমিক প্রমাণ পেলে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের ডেপুটি জেলারসহ তিন জনকে প্রত্যাহার করে কারা অধিদফতর। প্রত্যাহার হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর ডেপুটি জেলার মো. গোলাম সাকলাইন, সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর আব্দুল বারী এবং সহকারী প্রধান কারারক্ষী মো. খলিলুর রহমান। আজ আরো দুই কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শুক্রবার চ্যানেল 24 এর একটি প্রতিবেদনে কাশিমপুর কারাগারের একটি সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশিত হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ওই ফুটেজে দেখা গেছে, গত ৬ জানুয়ারি কারাগারের কর্মকর্তাদের অফিস এলাকায় হলমার্কের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমদ ঘোরাফেরা করছেন। কিছুক্ষণ পরই বাইরে থেকে এক নারী সেখানে প্রবেশ করেন। তার পরনে ছিল বেগুনি রঙের সালোয়ার কামিজ। কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায় ও ডেপুটি জেলার সাকলাইন এ সময় সেখানে ছিলেন। ওই নারী দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে কারাগারের কর্মকর্তাদের কক্ষ এলাকায় প্রবেশ করেন। সে সময় তার সঙ্গে দুই যুবক ছিল। ডেপুটি জেলার সাকলায়েন তাকে সেখানে রিসিভ করেন। ওই নারী সেখানে প্রবেশ করার পর অফিস থেকে বেরিয়ে যান ডেপুটি জেলার সাকলায়েন। এর অনুমানিক ১০ মিনিট পর কারাগারে বন্দি তুষার আহমদকে ওই অফিসে নিয়ে আসা হয়। এরপর দুজন একে একে একটি রুমে যান। সেখানে তারা ৪৫ মিনিট অবস্থান করেন। এ রিপার্ট প্রচার হলে দেশজুড়ে বয়ে যায় সমালোচনার ঝড়। আবারও প্রমাণ হলো আসলেই বাংলাদেশে সবই সম্ভব। গ্রাম বাংলার সেই বিচ্ছেদি গীতিকার বেঁচে থাকলে হয়তো লিখতেন- তুই তো আমারিই বন্ধু থাকবি চিরকাল/ বন্দি কিংবা মুক্ত থাকি / থাকবি অঙ্গদাশরে বন্ধু/ রইবি অঙ্গদাশ/ মনে চাইলে ছুটে আসবি/ থাকবেনা কোন বাধা/ পাইক পেয়াদা সবই যে আমার টাকায় কেনা।