× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চলনবিলে থামছে না পুকুর খনন

বাংলারজমিন

চলনবিল (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
২৫ জানুয়ারি ২০২১, সোমবার

কৃষকদের আন্দোলন বিভিন্ন কর্মসূচির পরেও শস্য ভাণ্ডার খ্যাত চলনবিল এলাকায় থামানো যাচ্ছে না পুকুর খনন।  ইউএনও মো. মেজবাউল করিম তাড়াশে যোগদানের পরে গত বছরের ডিসেম্বরে পুকুর খননের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার ফলে পুকুর খননকারীরা আতঙ্কিত হয়ে কিছুদিন পুকুর খনন বন্ধ রাখেন। কিন্তু কিছুদিন বন্ধ রাখার পরে আবারো বেপরোয়া গতিতে ফসলি জমি কেটে পুকুর খনন শুরু করেন তারা।
স্থানীয় ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি নিজেরা অধিক মুনাফার আশায় জমি মালিকদের ভুলভাল বুঝিয়ে ফসলি উর্বর জমিতে পুকুর খনন করছে। এভাবে যত্রতত্র ও অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের ফলে আশেপাশের জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে অনাবাদি হয়ে পড়ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, খাল, নদী দখল করে পুকুরের পাড় করায় পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হওয়ায় জলাবদ্ধতার কারণে এ বছর এ চলনবিলের বিভিন্ন মাঠে সরিষার আবাদ অন্য বছরগুলোর তুলনায় অনেক কম হয়েছে। সরিষার আবাদ কম হওয়ায় এ বছর সরিষা ফুল থেকে কাঙ্ক্ষিত মধু আহরণও সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, প্রান্তিক কৃষকরা মহাজনদের কাছ থেকে ধার-দেনা নিয়ে বোরো আবাদ করেন। ধান ঘরে তুলতে না তুলতেই মহাজনরা সুদসহ তাদের পাওনার জন্য কৃষকদের চাপ দেয়। কিন্তু ধান কাটার মৌসুমে ধানের দাম একটু কম হওয়ায়, উৎপাদন খরচ তুলতেই কৃষকদের হিমশিম খেতে হয়।
তাই বাধ্য হয়ে অধিক মুনাফার আশায় পুকুর খননের দিকে ঝুঁকে পড়ছে কৃষকরা। নিচু জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ায় গণহারে চলতে থাকে পুকুর খননের প্রতিযোগিতা। সরকারি অনুমতি ও জমির শ্রেণি পরিবর্তন ছাড়া পুকুর খনন বেআইনি হলেও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রতিবছর চলনবিল এলাকায় শত শত পুকুর খনন অব্যাহত রয়েছে বলে স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ।
কৃষি বিভাগের সূত্রমতে, গত এক দশকে এ উপজেলায় পুকুর খননের ফলে প্রায় ৭শ’ হেক্টর কৃষি জমি কমেছে। যা বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
চলনবিলের তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ২০১৩ইং সাল থেকে ২০২০ইং সাল পর্যন্ত শুধু তাড়াশ উপজেলায় ফসলি উর্বর জমি কেটে প্রায় ৬৫০টির মতো পুকুর খনন করা হয়। এভাবে যত্রতত্র পুকুর খননের ফলে প্রায় ৪শ’ হেক্টর আবাদি জমি কমেছে। চলতি বছরেও এ উপজেলায় শতাধিক পুকুর খনন চলমান থাকলেও পুকুর খনন বন্ধে নেই কোনো উদ্যোগ।
স্থানীয় কয়েকটি সূত্র থেকে জানা যায়, তাড়াশ সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক  মো. রুহুল আমিন খননকৃত পুকুরে গিয়ে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দাবি করেন। মিটলে তারা পুকুর খনন করতে পারেন আর না মিটলে অভিযান চালিয়ে ধরে এনে মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা করার হুমকি দেন তিনি।
সূত্র মতে, তাড়াশ উপজেলার পুকুর খননকারী চক্রের মূলহোতা উপজেলার কোহিত গ্রামের আল মাহমুদ, বিনসাড়া গ্রামের মনিরুল ইসলাম, নওগাঁ গ্রামের আলামীন, নাদোসৈয়দপুরের শফিকুল ইসলাম ও শোলাপাড়া ও আব্দুল জলিল প্রতিটা পুকুর খননের জন্য জমির মালিকদের কাছ থেকে প্রতি বিঘা জমি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নেন। তারাই সাধারণত প্রশাসন, পুলিশ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে চুক্তি করে পুকুর খনন করে দেন।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফুন্নাহার লুনা বলেন, এখানকার ফসলি জমি উর্বর। চলনবিল থেকে উৎপাদিত ফসল এলাকার খাদ্যর চাহিদা পূরণ করে দেশের অন্য জেলায় রপ্তানি করা হয়। কিন্তু যত্রতত্রভাবে তিন ফসলি জমিতে পুকুর খননের ফলে আগামীতে অত্র অঞ্চলে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা  নির্বাহী অফিসার মো. মেজবাউল করিম বলেন, আমি যোগদানের পরে পুকুর খনন বন্ধে উপজেলার পৌর এলাকার জাহাঙ্গীরগাতি, বারুহাস ইউনিয়নের কাজিপুর ও তালম ইউনিয়নের লাউতা গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে পুকুর মালিকদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
 
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর