দেশের আমদানি-রপ্তানির বিপরীতে যে পরিমাণ বীমা পলিসি করা হয় তার অর্থের পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘দেশে আমদানি-রপ্তানির বাজারে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার পলিসি খোলা হয়। কিন্ত বীমা কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে পাওয়া যায় মাত্র ২৮০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩২০০ কোটি টাকা। তাহলে বাকি ২৮০০ কোটি টাকা কোথায়?’ রোববার ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত দৈনিক বাণিজ্য প্রতিদিন আয়োজিত বীমা খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা বিষয়ক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান। কী-নোট উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ এবং প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্সের এমডি মো. জালালুল আজিম। ড. মোশাররফ বলেন, সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে বীমার আওতায় নিয়ে আসা দরকার। বীমা খাত নিয়ে হতাশার দিক থাকলেও এই খাত ভেতরে ভেতরে অনেক ভালো কাজ করে যাচ্ছে।
বীমা খাতকে একটা উল্লেখযোগ্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বীমা খাতকে একটা বিশ্বাসযোগ্য স্থানে দাঁড় করাতে চাই যেন মানুষের আস্থা তৈরি হয়। তিনি বলেন, বীমা খাত সবসময় মানুষের কল্যাণের কথা ভাবে। মানুষ যেন ভালো থাকে এটাই বীমা খাতের চাওয়া। দেশের সব মানুষ বীমার আওতাভুক্ত হলে এই খাত যেমন এগিয়ে যাবে তেমনি মানুষও এর দ্বারা উপকৃত হবে । এ সময় তিনি বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে বীমা খাতের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, আমাদের দেশের অর্থনীতিতে বীমা খাতের অবদান মাত্র ০.৫৭ শতাংশ। ভারতের অর্থনীতিতে তাদের বীমা খাতের অবদান ৩.৬৯, এমনকি ইন্দোনেশিয়াতে বীমা খাতের অবদান ২.৩৬। ড. মো: মোশাররফ হোসেন আরো বলেন, বাংলাদেশ একটি টেকসই অর্থনৈতিক অবস্থার দিকে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা বীমা খাত নিয়ে তার সমান্তরালে হাটতে পারিনি। তবে আমাদের অর্থনীতি সম্ভাবনাময়। আমরা যোগ্যতার সঙ্গে এগিয়ে গেলে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবো। সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান দেশের সকল পেশার সকল মানুষকে বীমার আওতায় আনতে বীমা খাতকে আস্থা অর্জন করতে হবে বলে জানান। ড. মিজানুর রহমান বলেন, এই খাতে সমস্যা যেমন আছে তেমনি সম্ভাবনাও আছে। যোগ্য মানুষদেরকে নিয়ে আসতে পারলে এই খাত এগিয়ে যাবে। বীমা খাতে এমন একটা জায়গা সৃষ্টি করতে হবে যেন মেধাবীরা এই অঙ্গনে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী হয়। তবে বীমা খাত নিয়ে মানুষের মধ্যে অনাস্থা এবং ভুল ধারণা রয়েছে, যা দূর করতে বীমা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে বলে । প্যানেল আলোচকের বক্তব্যে বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স একাডেমির চিফ ফ্যাকাল্টি মেম্বার এস এম ইব্রাহিম হোসাইন বলেন, বীমার ব্যপারে গ্রাহককে আলোকিত করতে হবে- তাহলে বীমা খাত টিকে থাকবে এবং এগিয়ে যাবে। আর প্রলুব্ধ করলে বীমা খাতে সাময়িক সফলতা আসলেও দীর্ঘ মেয়াদে টিকে থাকবে না। বীমা খাতের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারলে এ খাতের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়তে থাকবে। যথাযথ ভাবে প্রতিটা গ্রাহককে বীমা সম্পর্কে গাইড লাইন দিতে পারলে এ খাত দ্রুত উন্নত হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি এই খাতে নারীদের অংশগ্রহণকে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, নারীদের যদি সম্পৃক্ত করা যায় তাহলে গ্রাহক বেড়ে যাবে। তাই নারীদেরকে যত বেশি সম্পৃক্ত করা যায় তত বীমা খাতের জন্য কল্যাণ হবে। দেশের সব মানুষের সকল সম্পদকে বীমার আওতায় আনতে আইডিআরএ, সরকার এবং এসোসিয়েশনকে ভূমিকা নেয়ার জন্য আহবান জানান তিনি। তিনি বলেন, শ্রীলংকা ১৯২৯ সালে তাদের কৃষিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কৃষি বীমা চালু করে আর আমরা এখনও কৃষি বীমা চালু করতে পারিনি। তাই আমাদের কৃষি বীমা চালুর ব্যাপারে ভাবা উচিৎ। প্যানেল আলোচক সাইদুর রহমান বলেন, ইন্স্যুরেন্সে নেতিবাচক দিকটা বেশি কাজ করে। তবে এখান থেকে উত্তোরণের জন্য কাজ করছে আইডিআরএ।