× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সিন্ডিকেট চক্র ডিবির কব্জায় / সরকারি তার-ট্রান্সফর্মার চুরি করে কারখানায় বিক্রি

অনলাইন

শুভ্র দেব
(৩ বছর আগে) জানুয়ারি ২৭, ২০২১, বুধবার, ৬:০২ অপরাহ্ন

চারজনের টিম। প্রত্যেকের পরনে রিফ্লেক্টিং ভেস্ট। মাথায় হেলমেট। হাতে কাটার-শাবল। সঙ্গে পণ্য পরিবহনের পিকআপ। দেখতে অবিকল বিদ্যুৎ বিভাগের মাঠকর্মী। বোঝার উপায় নেই তারা চোর। অথচ রাতের আঁধারে তারা সরকারি বিদ্যুতের তার-ট্রান্সফর্মার চুরি করে বিক্রি করছে ব্যক্তিমালিকানাধীন কারখানায়।
বছরের পর বছর কখনো তার, কখনো ট্রান্সফর্মার চুরি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এতে সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার ওয়ারি বিভাগ সম্প্রতি এমন একটি চোর চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে। চক্রটি ঢাকার কদমতলীসহ আরো কিছু এলাকার ছোট ও মাঝারি ধরনের কারখানায় চুরি করা তার বিক্রি করে আসছিল।
২০শে জানুয়ারি ঢাকার কদমতলী ও গাজীপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেনÑ মো. বাদল বিশ্বাস (২৬), আহাম্মদ আলী মাতব্বর (৩৫), মো. আলমগীর (২৭) ও মো. রফিকুল ইসলাম (৩০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৮৭০ কেজি হাই ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক অ্যালুমিনিয়ামের তারের ২৩টি কয়েল, একটি পিকআপ, প্লাস্টিক কাভারের হাতলযুক্ত তার কাটার কাজে ব্যবহৃত লোহার ১টি কাঁটার, ১টি লোহার শাবল, ৩ জোড়া হাতমোজাসহ রিফ্লেক্টিং ভেস্ট জব্দ করা হয়েছে। পরে ডিবির এসআই বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বাদী হয়ে ডিএমপির কদমতলী থানায় তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন।

ডিবির সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আরিফুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ৭-৮ বছর ধরে চক্রটি বিদ্যুতের তার চুরি ও বিক্রি করছিল। চক্রের সদস্যরা পেশাদার অপরাধী। এদের প্রত্যেকের নামে একাধিক মামলা আছে। চুরি করা পণ্য বহন ও চক্রের সদস্যদের যাতায়াতের জন্য যে গাড়ি ব্যবহার করতো তারা- সেটির চালকও এই চক্রের সদস্য। তবে চক্রের মূল হোতা এখনো পলাতক। তাকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। তিনি বলেন, চক্রটির কাছ থেকে আমরা ৮৭০ কেজি তার উদ্ধার করেছি। এগুলোর বাজারদর ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। কিন্তু তারা বাজারদরের চেয়ে তুলনামূলক কম দামে কারখানায় বিক্রি করে।
ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই চক্রটি নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল যেখানে বিদ্যুতের নতুন লাইনের কাজ চলছে এমন জায়গাকে টার্গেট করে। ওইসব এলাকায় বিদ্যুতের অ্যালুমিনিয়ামের তার, পিলারসহ অন্যান্য সামগ্রী থাকে। অমাবস্যার রাতে যখন গ্রামের লোকজন ঘুমিয়ে পড়ে তখন তারা অবিকল বিদ্যুৎ বিভাগের মাঠকর্মীদের পোশাক পরে ওইসব এলাকায় যায়। তারপর ফেলে রাখা তারের কয়েল থেকে কাটার দিয়ে তার কেটে সঙ্গে থাকা পিকআপে উঠায়। পরে এসব তার ঢাকা ও আশেপাশে জেলার বিভিন্ন অ্যালুমিনিয়ামের সামগ্রী তৈরির কারখানা ও ভাঙারি দোকানে কেজি দরে বিক্রয় করে। ভালোমানের এসব তার চারশ থেকে পাঁচশ’ টাকা করে বিক্রি করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়- বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী নিয়ে বেশ কয়েকটি চক্র সক্রিয়। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অ্যালুমিনিয়ামের তার, ট্রান্সফর্মার চুরি করে। আর এসব সামগ্রীর ক্রেতা হচ্ছে বিভিন্ন কারখানা। যারা কম দামে এসব সামগ্রী কিনে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে। ডিবির হাতে গ্রেপ্তার চক্রটি যেসব কারখানায় এসব অ্যালুমিনিয়াম তার বিক্রি করে সেগুলোর নাম-ঠিকানা দিয়েছে। এসব কারখানার মালিক বিভিন্ন চক্রের কাছ থেকে চুরি করা তার কমদামে কেনে।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারি বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আ. আহাদ মানবজমিনকে বলেন, বিদ্যুতের তার চুরি করে তারা সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। গ্রামগঞ্জ থেকে চুরি করা অ্যালুমিনিয়ামে তার মাঝারি ও ছোট কারখানায় কম দামে বিক্রি করে আসছিল। এই চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরো কিছু সদস্য পলাতক আছে। তাদেরকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এছাড়া জেনেশুনে চুরি করা এসব তার যারা কিনছেন তাদেরও তদন্ত সাপেক্ষ আইনের আওতায় আনা হবে। সংঘবদ্ধ চোরচক্রের মতো অন্যান্য সংঘবদ্ধ অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর