× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শত বছরের রাস্তা বিক্রি

বাংলারজমিন

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
২৮ জানুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার কুটি বাজারের শত বছরের পুরনো রাস্তার জায়গা বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। জায়গার ক্রেতারা সেখানে টিনের ঘর নির্মাণ করায় বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাঘাত ছাড়াও লোকজনের চলাচলে সৃষ্টি হয়েছে চরম দুর্ভোগ। এদিকে জায়গা বিক্রির সাফ কবলা দলিল অবৈধ ঘোষণার দাবিতে ওই রাস্তার পাশের দোকান ভিটির মালিক ও ব্যবসায়ীরা আদালতে একটি মামলা করেছেন। মামলার বিবরণ ও ব্যবসায়ীদের বক্তব্য অনুসারে, কুটি মৌজার ১৫২২ দাগে ওই রাস্তার জায়গার পরিমাণ মোট ৮ শতক ১২ পয়েন্ট। এর মধ্যে সরকারি জায়গা ২ শতক। রাস্তাটির দৈর্ঘ্য ২০০ ফুট ও প্রস্থ ২০ ফুট। ব্যক্তি মালিকানাধীন ৬ শতক ১২ পয়েন্ট জায়গার মধ্যে কসবার ফজলুর রহমান গত বছরের ২৯শে নভেম্বর কুটির বাইসার গ্রামের মোস্তাক আহমেদের কাছে ৫৯৯২ নং সাফ কবলা দলিলমূলে ৪ শতক ৬ পয়েন্ট এবং তার ভাই আজিজুর রহমান ৬০৯৩/২০ নং সাফ কবলা দলিলে কুটি গ্রামের এম এ মতিন, মো. শামীম রেজা ও জাজিয়ারা গ্রামের জীবন মোদকের কাছে ১ শতক ৬ পয়েন্ট জায়গা বিক্রি করেন। এরপরই গত ৬ই ডিসেম্বর রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত জায়গাটিতে বিএস রেকর্ডে ফজলুর রহমান ও আজিজুর রহমানের স্বত্বকে অবৈধ দাবি করে তাদের দলিল দু’টি বেআইনি ঘোষণার দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যুগ্ম জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতে মামলা করেন ১৫ ভিটি মালিক ও ব্যবসায়ী।

মামলায় দাবি করা হয় আজিজুর রহমান ও ফজলুর রহমানের নাম বিএস রেকর্ডে অবৈধভাবে সৃজন করা হয়েছে। ওই জায়গার পূর্বের বিভিন্ন রেকর্ডের উল্লেখ করে মোহাম্মদ আলীসহ বাদী পক্ষের ভিটি মালিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, সিএস রেকর্ডে ৯৩৪ নম্বর খতিয়ানের ১০৮৬ দাগে রাম সুন্দর ডাক্তারের নামে জমির পরিমাণ ৮ শতক উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এসএ ১০৬৬ নং খতিয়ানের ১০৮৬ দাগে আজিজুর রহমান ও ফজলুর রহমানের পিতা আবদুল গনি ও তাদের চাচা আবদুল গফুর ভূঁইয়ার নামে ১০ শতাংশ এবং ১০৬৫ খতিয়ানের ১০৮৬ দাগে মাহফুজুল আলমের নামে ৩ শতাংশ জমির মালিকানা রেকর্ড হয়। কিন্তু সিএস রেকর্ডে জমির পরিমাণ মোট ৮ শতাংশ উল্লেখ থাকলেও এসএ খতিয়ানে জমির পরিমাণ মোট ১৩ শতাংশ দেখানো হয়। এরপরই ১৯৮৪ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর মাহফুজুল আলম ১০৬৬ নং খতিয়ানের রেকর্ড বাতিল চেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাব-জজ আদালতে (৮৬/৮৫ নং) একটি মামলা করেন। এই মামলায় মাহফুজুল আলমের পক্ষে একতরফা রায় হয়। এতে এসএ খতিয়ানের রেকর্ড বাতিল হওয়ায় সাবেক ১০৮৬ এর হাল ১৫২২ দাগে আজিজুর রহমান ও ফজলুর রহমানের জমির মালিকানা বৈধ নয় বলে দাবি করেন তারা। তহশিলের রেকর্র্ড অনুসারে ৮ শতক ১২ পয়েন্ট জায়গা সাবেক সেমে ১০৮৭/১০৮৮ এবং বর্তমান ১৫২২ দাগে রয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের অভিযোগ জায়গা বিক্রির দলিল করার সময় ১৫২২ এর সাবেক ওই দাগ ছাড়াও ১০৮৮,১০৯০,১০৯১ ও ১০৯২ দাগ উল্লেখ করা হয়। ব্যবসায়ীরা বলেন, ১৯৫৫ সালের পূর্বে যেসব দলিল হয়েছে সেখানেও ওই জায়গাটিকে রাস্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া আছে। রাস্তার পাশের ভিটি মালিকদের দলিলের চৌহদ্দিতে এটিকে রাস্তা হিসেবে দেখানো আছে। তবে আজিজুর রহমান বলেছেন, জায়গাটির কাগজপত্র তাদের রয়েছে। তাছাড়া জায়গার খাজনাও নিয়মিত পরিশোধ করে আসছেন তারা এবং জায়গা তাদের ভোগদখলেই রয়েছে। যারা মামলা-মোকদ্দমা করেছেন তাদের কোনো অস্তিত্ব নেই। তাদের প্রত্যেকের ভিটিতে আমাদের ২/৩ হাত করে জায়গা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, কুটি বাজারে রাজনৈতিক বিরোধ, দলাদলি আছে। দু’গ্রুপের দ্বন্দ্বের কারণেই এ মামলা-মোকদ্দমা। না হলে আমাদের রেকর্ডের জায়গা, দখলের জায়গা নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা হওয়ার কোনো কারণ নেই। রাস্তা এখনো আছে, অতীতেও ছিল। এদিকে জমির ক্রেতা স্থানীয় ভূমি অফিসে তার নামে নামজারীর আবেদন করলে এর বিরুদ্ধে আপত্তি দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি অফিস) এটি তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান কসবার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাসিবা খান। এদিকে বাজারের রাস্তার ওই জায়গা বিক্রির পর সেখানে টিনের ঘর তুলে দখল নেন ক্রেতারা। এরপর থেকে বাজারের গুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তা দিয়ে ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহন বন্ধ রয়েছে। সেখানে এখন কোনো গাড়ি পার্কিং করতে পারছে না। পণ্য লোড-আনলোডে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া সাধারণের চলাচলও ভীষণভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। রাস্তাটির দু’পাশে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ব্যাংক-বীমা অফিস রয়েছে। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে একটি মামলাও করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা অভিযোগ করেন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই সেখানে কাজ করা হচ্ছে। টিনের ঘরের পর সেখানে পাকা ঘর নির্মাণের চেষ্টা চলছে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ বাজারের একটি কুটি বাজার। যেখানে সরকারিভাবেই প্রতিশতক জায়গার মূল্য ২২ লাখ টাকার ওপরে নির্ধারিত। তবে  ৪০/৫০ লাখ টাকা দরে বিক্রি হয় বাজারের প্রতি শতক জায়গা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর