× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সমস্যায় জর্জরিত ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা

শিক্ষাঙ্গন

আতিক হাসান শুভ, কবি নজরুল কলেজ সংবাদদাতা
(৩ বছর আগে) ফেব্রুয়ারি ২, ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:৩৮ পূর্বাহ্ন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিমুখী আচরণ ও অবহেলার কারণে অধিভুক্ত সাত কলেজের হাজারো শিক্ষার্থীর জীবন বিপর্যয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তীব্র সেশনজট, অনাকাক্সিক্ষত ফলাফল বিপর্যয়, ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতাসহ নানান ধরনের সমস্যার মাঝে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় আছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে আছে সাত কলেজ সমন্বয়কারীদের গাফিলতি। ফলে হাজারো শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বিপর্যয়কর হয়ে পড়েছে।
কলেজের নিয়মানুযায়ী  শিক্ষার্থীদের আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে ফলাফল পাওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় ফলাফলের জন্য। ইতিপূর্বে প্রায় দশ মাস পরে ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের  বিভাগের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ইংরেজি বিভাগের মাত্র এক তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী নি¤œমানের ফলাফল নিয়ে উর্ত্তীণ হয়েছে। এছাড়া দর্শন, উদ্ভিদবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতিসহ আরো বেশ কয়েকটি বিভাগের ফলাফলের অবস্থাও খুবই করুণ। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পরীক্ষার খাতা ভাল ভাবে মূল্যায়ন না করে গণহারে তাদেরকে ফেইল করানো হয়েছে।
যার ফলে, অধিভুক্ত সাত কলেজের হাজারো শিক্ষার্থীর জীবন বিপর্যস্ত।

ঢাকা কলেজের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইকবাল হোসেন বলেন, বাবা মায়ের স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলাম ঢাকা কলেজে। আমার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নরমাল একটা সাবজেক্ট এসেছিল, ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম ইংরেজি বিভাগে। কিন্তু ঢাবি সব স্বপ্নগুলো হত্যা করলো। শুধু স্বপ্নগুলোই হত্যা করলো না, হত্যা করেছে আমাদের ভবিষ্যত। আজ আত্মহত্যা করতাম যদি পরিবার না থাকতো। মায়ের মুখ চেয়ে বেঁচে আছি অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে।
ইডেন কলেজের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরোজ বলেন, আমি ইতোমধ্যে শেষ বর্ষে পাস করেছি। কিন্তু আমার কোন সিজিপিএ আসেনি। কারণ হিসেবে জানান, দ্বিতীয় বর্ষে একটি পরীক্ষায় ফেল রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে ঠিক কবে পরীক্ষা হবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই।
অধিভুক্ত ৭ কলেজের কার্যক্রমে হতাশ হয়ে তিতুমীর কলেজের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, সেশনজটের কারণে ৪ বছরের কোর্স শেষ করতে প্রায় ৭-৮ বছর সময় লেগে যায়। এছাড়া কোর্স শেষ হলেও রেজাল্ট নিয়ে ভোগান্তির অন্ত নেই। এরপর করোনার কারণে বন্ধ রয়েছে সব একাডেমিক শিক্ষা কার্যক্রম। যার ফলে আমাদের স্বপ্নগুলোতে মরীচিকা পড়ে যায়। অনেকেই আজ পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কবি নজরুল সরকারি কলেজের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার বলেন, ৭ কলেজে ভর্তি হয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। অধিভুক্ত সাত কলেজ পরিচালনার জন্য নীতিমালা থাকলেও এর কার্যকারিতা নেই। অতি শিগগিরই এর সুনির্দিষ্ট কার্যকরী নীতিমালা প্রয়োজন। নয়তো সেশনজটে বিপর্যস্ত হতে পারে সাত কলেজের লাখো শিক্ষার্থীর।
এছাড়াও সরকারি বাংলা কলেজের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের মো. রাকিব হোসেন অপ্রত্যাশিত ফলাফলের কারণে ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যার কথা বলেন।
দীর্ঘদিনের এই জটিল সমস্যা সমাধানে অধিভুক্ত সাত কলেজের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা চান এসব শিক্ষার্থীরা। সদ্য ফলাফল প্রাপ্ত  শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি গুলো হচ্ছে :
(১) ১৭-১৮ এবং ১৮-১৯ সেশনের যারা ৩ সাবজেক্ট অব্দি ফেল আছে তাদের কে পরবর্তী শ্রেণীতে উত্তীর্ণ করা।
(২) অনতিবিলম্বে ২/২.২৫/২.৫ এর নিয়ম বাতিল করা।
(৩) যারা ৩ সাবজেক্ট এর অধিক বিষয়ে ফেইল করেছে তাদের খাতা জবাবদিহি সহ পুনরায় মূল্যায়ন করা।
(৪) সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করা সহ বেশ কয়েকটি দাবি নিয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা দফায় দফায় আন্দোলন করলেও তা এখনো ফলপ্রসূ হয়নি। এক্ষেতে নতুন নীতিমালার কথাও জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে ৭ কলেজের প্রধান সমন্বয়ক ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খন্দকার বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছাত্রগুলো ভর্তি হয় ৭ কলেজেও কিন্তু একেবারে সব সমমানের না হলেও পরীক্ষা কোন কারণে সামান্য খারাপ হয়েছে ওরাই কিন্তু এই সাত কলেজে ভর্তি হচ্ছে। সেমিস্টার সিস্টেম হলে একই সমন্বয় পরীক্ষা হলে ফ্রাস্টেশন কমবে পাশাপাশি শিক্ষার মান বাড়বে। তখন চাকরির বাজারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলেন আর সাত কলেজ বলেন একই পর্যায়ে থাকবে। তাহলে ওদের মনে যেই হীনমন্যতা আছে তা দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের সুনির্দিষ্ট যৌক্তিক চাওয়া-পাওয়াগুলো পূরণ করা হলে আর কোন সমস্যা থাকবে না।
অন্যদিকে আলাদা নীতিমালা প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, সাত কলেজের সাত অধ্যক্ষের নেতৃত্বে কমিটি আছে। তাদের কলেজগুলো তাদের তত্ত্বাবধানে চলে। তাদের কোন দাবি বা সুনির্দিষ্টভাবে কোন ঘাটতি থাকলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্যই তা পূরণ করবে।


শিক্ষার মান বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সরকারি সাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ( ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ)  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছেন। বিগত ০৪ বছর পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সাত কলেজের সমস্যাগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করা হয়নি। যার ফলে শিক্ষার্থীদের হতাশা এবং ক্রোধ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ সহ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ অতি দ্রুত চাইছে সাত কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর