অনলাইন

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই সাজগোজ করে বের হন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণী

স্টাফ রিপোর্টার

২০২১-০২-০৪

সোহানা আফরিন। লম্বা, শ্যামবর্ণের আকর্ষণীয় তরুণী। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই সাজগোজ করে বাসা থেকে বের হন। একেক দিন একেক রকম সাজে। কখনও টিশার্ট-প্যান্ট, কখনও শাড়ি। বাতাসে ছড়িয়ে যায় দামী পারফিউমের ঘ্রাণ। গাড়িতে ওঠার আগে-পরে মানুষের দৃষ্টি কেড়ে নেন তিনি। অবশ্য সন্ধ্যা ছাড়া দিনের বেলাতেও কখনও কখনও এভাবেই বের হতে হয়। দুই-তিন ঘন্টার মধ্যে আবার ফেরেন বাসায়। মাঝে মধ্যে রাত শেষে সকালে ফেরা হয় তার।

আফরিন বলেন, এটি পার্ট টাইম জব। এই জব বদলে দিয়েছে সোহানা আফরিনের জীবন-যাপন। মাস শেষে আগে যেখানে দুশ্চিন্তা হতো টাকা আসবে কোত্থেকে। বাসা ভাড়া, নিজের লেখাপড়ার খরচ। সবমিলিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ ছিলো না। এখনতো দু’হাতে খরচ করতে পারেন। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এই মেয়ে এখন প্রতি মাসে টাকা পাঠান মা-বাবার কাছে বরিশালের মুলাদীতে। পরিবারের সবাই জানেন তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকরি করেন।
আগে মেয়েদের সঙ্গে মেসে থাকতেন। দুই মাস হলো তিন বান্ধবী মিলে বাসা নিয়েছেন ঝিগাতলায়। নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে আফরিনের (ছদ্মনাম) সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, মা-বাবা বড় সন্তান তিনি। বাবা গরীব কৃষক। ঢাকায় মেয়েদের একটি কলেজে অনার্সে ভর্তি হন। টিউশনি করে ও বাবার পাঠানো অল্প টাকায় টেনে টেনে চলতেন। কষ্টের শেষ ছিল না। এরমধ্যেই এক আপু তাকে নিয়ে যান এক পার্টিতে। তার আগে পার্লারে গিয়ে সাজেন দু’জন। রাত ৯টার দিকে যান বনানীর এক বাসায়।

বাসায় ঢুকেতো সোহানা হতভম্ব। পার্টি বলতে বাসায় দু’জন পুরুষ মানুষ। একজন বেশ পরিচিত। রাজনীতি করেন। একটি দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতা। অন্যজন তার ব্যবসায়ী বন্ধু।

টেবিলে সাজানো খাবার। সঙ্গে রেড ওয়াইন। সিনিয়র ওই আপা তাকে বুঝিয়ে বলেন, একজনের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে হবে। পুরো রাত। বিনিময়ে টাকা পাবে। তাছাড়া তাদের অনেক প্রভাব। সুসম্পর্ক রাখলে ভালো। কাজে আসবে। গল্পটি প্রায় এক বছর আগের।

সেইরাতে দু’ তরুণী দু’পুরুষের সঙ্গে রাত্রি যাপন করেন। সেই থেকে শুরু। টাকার নেশা পেয়ে বসে সোহানাকে। তার ডাক পড়ে বিভিন্ন তারকা হোটেলে, বাসায়। তার পুরুষ সঙ্গীরা সব বিত্তশালী। সোহানাকে হাই প্রোফাইল গার্ল হিসেবে জানেন এই জগতের পরিচিতরা।

সম্প্রতি একটি অনলাইন গ্রুপে কাজ করেন এই তরুণী। গুলশানের একটি হোটেলে পরিচয় হয়েছিলো এক যুবকের সঙ্গে। তার মাধ্যমেই যুক্ত হন সেখানে। অনলাইনে এসর্কট সার্ভিস দেন এই যুবক। এজন্য কিছু ছবি তোলতে হয় তাকে। মুখ আড়াল করা ছবি। সঙ্গে সংক্ষিপ্ত প্রোফাইল। লম্বা, গায়ের রং.. এসব।

খদ্দেরকে তা দেখিয়ে তবেই (তাদের ভাষ্যমতে) ‘প্রোগাম কনফার্ম’ করা হয়। এই মাধ্যমে সোহানার আয় বেড়েছে বেশ। করোনার শুরুতে ভাটা পড়েছিলো। এখন আবার তুঙ্গে। সোহানা জানান, গুলশান, উত্তরা ও এলিফ্যান্টে রোডে ফ্ল্যাট বাসাও রয়েছে এই অনলাইন সার্ভিস গ্রুপের। যে কারণে তিনি সদস্য হয়েছেন। আয় থেকে ৩০ পার্সেন্ট নেন অনলাইন কর্তৃপক্ষ।

সোহানা জানান, এসব প্রোগামে যাওয়ার আগে খদ্দের কোন এলাকার তা জেনে নেন। যেনো পরিচিত কারও কাছে যেতে না হয়। তিনি বলেন, এই পথ থেকে সরে যাবেন শিগগিরই। এখানে টাকা আছে তবুও এটা কোনো সুন্দর জীবনযাপন না। হঠাৎ করেই এই পথে চলে এসেছেন তিনি। অসংখ্য মানুষের মনোরঞ্জন করতে হয়। এটা আর ভালোলাগে না তার। মাস্টার্স শেষ করে নিজেই ছোটখাটো একটি ফ্যাশন হাউজ চালু করবেন। মেয়েদের চাকরি দেবেন। সংসার করবেন।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status