× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

একজন ‘উটুবার’ চা বিক্রেতার দুর্ভাবনা ও হায়দারের গান

মত-মতান্তর

কাজল ঘোষ
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, শুক্রবার

কি দেখার কথা কি দেখছি, কি শোনার কথা কি শুনছি, কি ভাবার কথা কি ভাবছি, কি বলার কথা কি বলছি। একজন চা বিক্রেতা রাজধানীর জনাকীর্ণ এক রাস্তার মোড়ে টি স্টলে বসে এই লাইনগুলো আওড়াচ্ছেন। সাতসকালে হঠাৎ এই গান কেন? এমন প্রশ্নে হোঁচট খায় চা বিক্রেতা। কেন? আফনে বুঝি দ্যাহেন নো। ইডা কি বলে তার মুঠোফোন এগিয়ে দেয়। আফনে উটুব দ্যাহেন। জাজিরা কি কইছে? বিষম খেলাম। জাজিরা মানে আল জাজিরা এই চা ওয়ালা চেনে নাকি? বুঝতে বাকি রইল না এটি সাম্প্রতিক প্রচারিত একটি প্রতিবেদন নিয়ে বলা।


৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেল থেকে যখন ক্যামেরা প্যান করি তখন চারপাশের অন্যান্য দৃশ্যও ভেসে ওঠে। স্থানটি রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা। দৃশ্যমাণ হচ্ছে মেট্টোরেলের পিলার। শোনা যাচ্ছে আগামী জুলাইতে এর এক অংশ চালু হবে। অল্পকদিন আগেই পদ্মাসেতুর সব শেষ স্প্যানটিও বসেছে। নিঃসন্দেহে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পাশাপাশি আল জাজিরার এমন প্রতিবেদনগুলোও মানুষের মধ্যে নানান মিশ্র আলোচনার খোরাক যোগাচ্ছে। ঘুরেফিরে আলোচনায় থাকা জনশ্রুতিগুলোকে হালে পানি ঢেলে দিচ্ছে। এটা আপনি, আমি এবং আমরা স্বীকার করি বা না করি।

জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী হায়দারের এই গানটি একসময় মুখে মুখে ছিল। অসাধারণ সুর আর ছন্দে গাওয়া গানটি আমজনতা নানান ভাবে গেয়ে থাকে। গানের এই কথাগুলোর অভিব্যক্তিতো বাস্তবতায় মূর্ত। গীতি কবির এই কাব্যময়তা কখনও কখনও হয়ে ওঠে অনেক বেশি বাস্তব। প্রসঙ্গের অবতারণা সঙ্গত কারণেই। গেল সপ্তাহের ঘটনা প্রবাহে একটি প্রতিবেদন নিয়ে দেশের আনাচে কানাচে সবখানেই আলোচনা। উত্তাপহীন রাজনীতির মঞ্চেও চলছে এ নিয়ে নানা তীর্যক বিতর্ক, মন্তব্য। আর এই আলোচনা বা বিতর্ক মূলত আল জাজিরার একটি প্রতিবেদন ঘিরে। আপনি শরীয়তপুরের জাজিরা বলুন আর কোথাকার আল বা কোথাকার জাজিরা যাই বলুন, প্রতিবেদনটির নির্মাণ ব্যয় নিয়ে যত প্রশ্নই করুন একটি মাধ্যম বেশকিছু বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান করেছে, টিভি পর্দায় তুলে ধরেছে এটা দৃশ্যমাণ।

এই প্রতিবেদন ঘিরে যে উত্তাপ তার রেশ দেখা গেছে সংবাদপত্রের পাতায় এবং বেশকিছু টেলিভিশন টকশোতেও। চলছে পাল্টা বিতর্ক। আল জাজিরার এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তর একটি প্রতিবাদ আর অন্যদিকে সেনা সদর থেকেও পৃথক আরেকটি প্রতিবাদপত্র পাঠানো হয়েছে। যা প্রকাশিত হয়েছে সর্বত্র।

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর প্রাথমিক আলোচনায় ছিল, হয়তো প্রতিবেদনটি যে চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে তা বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি। সরকার এখানে গণমাধ্যমের অবাধ প্রবাহের ধারাকেই লালন করেছে যা মহল বিশেষে সবখানেই প্রশংসনীয় হয়েছে। এটি এখনও দেশের প্রচলিত অন্তর্জালে দেখা যাচ্ছে। বরং এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর এর যা শিরোনাম ছিল ‘প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’ তার বিপরীতে সামাজিক মাধ্যম ছেয়ে গেছে, ‘উই আর হাসিনাস ম্যান’ শিরোনামের হ্যাশট্যাগে। এতেও একটি গণতান্ত্রিক রীতির প্রকাশ লক্ষ্য করা গেছে। সব ছাপিয়ে একটি আলোচনা আছে, খবর নেতিবাচক হোক আর ইতিবাচক হোক এ ধরণের প্রতিবেদন বিদেশি মিডিয়া করছে অথচ নিজ দেশে কোন বিষয়েই কোন অনুসন্ধান নেই কেন? আমজনতা এ প্রতিবেদনের সরকারি ভাষ্য নিয়ে আরও স্পষ্ট হতে চায়। যখন দেশে শক্তিশালী বিরোধীদল থাকে না, গণতন্ত্র স্বল্পমাত্রায় বিরাজিত, গণমাধ্যম অনেক ক্ষেত্রেই নরমসুরে কথা বলছে তখন বিদেশি মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদন কি চলমান দুর্নীতির আগুনে ঘি ঢেলে দিল এ প্রশ্নও অনেকের?  

পত্র পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বেশকিছু বিষয় ওঠে এসেছে। ডেইলি স্টার লিখেছে, যদি দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে এর সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। নিয়মবহির্ভূত কর্মকান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সরকারের দায়িত্ব। কেবলমাত্র আল জাজিরার প্রতিবেদনকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলা যথেষ্ট নয়। একেবারে শেষদিকে আরও লিখেছে, বাংলাদেশে আল জাজিরার প্রতিবেদনটি দেখতে কোনো প্রকার বাধা সৃষ্টি না করায় সরকারের প্রশংসা অবশ্যই করতে হবে। প্রযুক্তির এই যুগে এ জাতীয় ব্যবস্থাগুলো আর কোনো কাজে আসে না। সরকার সব   দেখেছে এবং সব শুনেছে। তারা কি আদৌ কিছু করবে? এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

প্রথম আলো লিখেছে, আল জাজিরার প্রতিবেদন এড়িয়ে গেলে জনগণ ভুল বার্তা পাবে। এর কারণ বিশ্লেষণে তারা সম্পাদকীয়তে বলছে, দুটি প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়ায় প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করা হলেও সেখানে যেসব বিষয় ওঠেছে সে প্রসঙ্গে সরাসরি কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

দেশজুড়ে এই প্রতিবেদনটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে এটি বলার অপেক্ষা রাখেনা। তা মোড়ে মোড়ে চায়ের স্টলে দাঁড়ালেই টের পাওয়া যাবে। এর জন্য খুব বেশি আড়ি পাতার দরকার নেই। আম জনতা এই প্রতিবেদনে বিশ্বাস করুক আর নাই বা করুক সেটি ভিন্ন তর্ক তবে এসবের বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য না পেলে এক ধরণের ভুল বোঝার অবকাশ থেকেই যাবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর