দেশের অন্য সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলন, আমরণ অনশন, রাজনৈতিক সহিংসতা, ছাত্র সংঘর্ষ, হানাহানির ঘটনা নিয়মতি দেখা গেলেও সেখানে ব্যতিক্রম ছিলো শুধু খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) দুইজন শিক্ষকের সঙ্গে অসদাচারণ ও তদন্তে অসহযোগিতার দায়ে বাংলা ডিসিপ্লিনের মোহাম্মদ মোবারক হোসেন নোমান (১৮ ব্যাচ) এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের ইমামুল ইসলামের (১৭ ব্যাচ) বহিষ্কারাদেশকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাস দেখেছে ভিন্নরূপ। প্রতিবাদ ও নানা কর্মসূচিতে মুখোমুখি হয়ে পড়ে প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলন: খুলনা প্রেসক্লাবে ১৬ই জানুয়ারী দুই শিক্ষার্থীর বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসনকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয়।
আমরণ অবস্থান :২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম না মানায় বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আমরণ অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে বাংলা ডিসিপ্লিনের মোহাম্মদ মোবারক হোসেন নোমান (১৮ ব্যাচ) এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের ইমামুল ইসলাম (১৭ ব্যাচ)। রোববার (১৭ই জানুয়ারি) সন্ধ্যায় খুবির প্রশাসনিক ভবনের সামনে তারা আমরণ অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেও প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে আমরণ অনশনের হুমকি দেয়।
ভিসির আহ্বান আমলে না নিয়ে আন্দোলন: সকালে আমরণ কর্মসূচি পালনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান দেখা করেন। এসময় শিক্ষার্থীদের এ অবস্থান থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা সাময়িক, এখনো চূড়ান্ত নয়। আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবিধান মেনে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ গ্রহণ করুন।তবে শিক্ষার্থীরা তার কথা আমলে না নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যান।
আমরণ অনশন:বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করায় আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করে বাংলা ডিসিপ্লিনের মোহাম্মদ মোবারক হোসেন নোমান (১৮ ব্যাচ) এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের ইমামুল ইসলাম (১৭ ব্যাচ)।বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আমরণ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
অসুস্থ নোমান ও চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি:খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) অনশনরত দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে নোমান নামের এক শিক্ষার্থী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য হাসপাতালে নিতে চাইলে তিনি অস্বীকৃতি জানান।
পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের একজন চিকিৎসককে ডেকে আনলে তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে রাজি হন।
আলোচনায় সিটি মেয়র খালেক:বহিষ্কারাদেশ বাতিলের দাবিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) আমরণ অনশনরত দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে দেখা করেন খুলনা সিটি মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক। ২২শে জানুয়ারি সকালে তিনি অনশনরত দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেন ও পরে ভিসির কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাঁচজন প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করেন।
শিক্ষক অপসারণ:গুরুতর অসদাচরণ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসন বিরোধী কার্যক্রম ছাড়াও একাধিক অভিযোগে বাংলা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল ফজলকে চাকরি থেকে বরখাস্ত এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী ও বাংলা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক শাকিলা আলমকে অপসারণ করা হয়েছে।
গুরুতর অসুস্থ অনশনরত শিক্ষার্থীরা:বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আমরণ অনশনে বসা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে ইমামুল ইসলাম গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। শনিবার টানা পাঁচ দিনের অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়লে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।অন্যদিকে আরেক শিক্ষার্থী মোবারক হোসেন নোমানও অসুস্থ হয়ে পড়ে। রোববার সন্ধ্যায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
কুয়ার মধ্যস্থতা, প্রত্যাহারের আশ্বাস ও অনশনভঙ্গ:খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালমনাই অ্যাসোশিয়েশনের (কুয়া) মধ্যস্থতায় ৮ম দিনের মতো চলমান আমরণ অনশন থেকে সরে এসেছে দুই শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা দুঃখ প্রকাশ করে চিঠি দেয়ার পর সন্ধ্যায় প্রশাসনের শতাধিক ব্যক্তি নিয়ে সাবেক ভিসি ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান শরবত পান করিয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান এবং অতি দ্রুত শৃঙ্খলা কমিটির সভা ডেকে তাদের বিষয়টি সুরাহা করার কথা জানান।
বিশেষ বিবেচনায় শাস্তি মওকুফ:শৃঙ্খলা বোর্ডের সভায় বিশেষ বিবেচনায় দুই শিক্ষার্থীর শাস্তি মওকুফ করা হয়। যদিও মওকুফ কথা উল্লেখ করায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষকের চাকরিচ্যুতি কেন অবৈধ ঘোষিত হবে না জানতে চেয়েছেন আদালত:খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে বরখাস্ত ও দুই শিক্ষককে অপসারণের সিদ্ধান্তের আদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন উচ্চ আদালত। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তা জানাতে রুল জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পযন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার আদেশ স্থগিত করে ওই তিন শিক্ষককে চাকরিতে বহাল রাখারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
শিক্ষকদের শাস্তি প্রত্যাহারে প্রতিবাদ কর্মসূচি:খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) এক শিক্ষককে বরখাস্ত ও দুইজনকে অপসারণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) এক শিক্ষককে বরখাস্ত ও দু'জনকে অপসারণের সিদ্ধান্ত উচ্চ আদালতে স্থগিতের পর কর্তৃপক্ষকে অনতিবিলম্বে সিন্ডিকেট সভা ডেকে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।