× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে সহকর্মীদের শোক

বিনোদন

বিনোদন ডেস্ক
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, রবিবার

নিজের সফল ও দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বড় ও ছোট পর্দায় অসংখ্য কাজ করেছেন এটিএম শামসুজ্জামান। তার চলে যাওয়ায় সহকর্মীরা ভাসছেন শোকে। সেই শোকই তুলে ধরা হলো-

সোহেল রানা: শতবর্ষেও এটিএম শামসুজ্জামানের মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। মানুষ, শিল্পী, লেখক, গল্পকার হিসেবে তার সঙ্গে কারোর তুলনা করা যেতো না। চলচ্চিত্রাঙ্গনে যাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল আমার তার মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন। তিনি শিল্পী হিসেবে কোন মানের ছিলেন সেটা তো সবাই জানে। যে তার সংস্পর্শে এসেছে সেই তার বন্ধু হয়ে গেছে। তার কোনো শত্রু ছিল না।
একটা ঘটনা খুব মনে পড়ছে, আমরা একসঙ্গে হজ পালন করেছিলাম। ওই বছর তিনি হজে যাবেন জানতাম না। উনি নারিন্দার পীর সাহেবের সঙ্গে গিয়েছিলেন। ৩০ জনের মতো একটা কাফেলায়। জেদ্দা এয়ারপোর্টে নেমে হঠাৎ করে তার সঙ্গে দেখা হয়। পরে আমাকে উনি জিজ্ঞেস করেন, আপনি কোন কাফেলার সঙ্গে আসছেন? পরে বললাম, কারোর সঙ্গে আসিনি। একা এসেছি। আল্লাহ যেদিকে নিয়ে যাবে সেদিকেই যাবো। তিনি বললেন, আমাদের সঙ্গে আসেন। তখন গেলামও। আমাকে তার কাফেলার সঙ্গে যুক্ত করলেন। নামাজ পড়া থেকে শুরু করে সবকিছু একসঙ্গেই করতাম। এটাই সব থেকে বেশি মনে পড়ছে।  প্রচুর আড্ডা দিতাম আমরা। মেকআপ রুমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করতাম। অনেক কিছু শিখেছি তার কাছ থেকে।

আনোয়ারা: উনি সাধারণত ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। পর্দার খারাপ মানুষের চরিত্রে অভিনয় করলেও বাস্তবে অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। উনার সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। তা বলে শেষ করা যাবে না। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুক সেই দোয়া করি।

ফারুক: এটিএম শামসুজ্জামানের মতো অভিনেতা শত বছরেও আসে না। তার চলে যাওয়ায় যে ক্ষতি হলো সেটা পূরণ হওয়ার মতো নয়। তার সঙ্গে অনেক অনেক স্মৃতি রয়েছে। সেগুলো কেবল চোখের সামনে ভেসে আসছে। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন, সেই দোয়া করি।

হানিফ সংকেত: বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে ঝরে গেল আরো একটি নক্ষত্র। সকলের প্রিয় অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। আমাদের এটিএম ভাই। বর্ণাঢ্য যার অভিনয় জীবন। অত্যন্ত মেধাবী, প্রাণবন্ত, বিনয়ী, সহজ-সরল, সাদামাটা মানুষ ছিলেন তিনি। ছিলেন একজন আদর্শ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। অসুস্থতার সময় নিয়মিত তার খোঁজ-খবর রাখতে চেষ্টা করতাম। রুনী ভাবীর সঙ্গে নিয়মিত কথা হতো। এটিএম ভাই ছিলেন ‘ইত্যাদি’র বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোর প্রায় নিয়মিত শিল্পী। এছাড়াও আমার অন্যান্য অনুষ্ঠান ও অনেকগুলো নাটকে তাকে নেয়ার সুযোগ হয়েছিলো। তাই কাছ থেকে দেখেছি, গভীরভাবে মেশার সুযোগ পেয়েছি। ‘ইত্যাদি’র প্রতি তার একটা বিশেষ দুর্বলতাও ছিল। হাসপাতালে দেখতে গেলে সুস্থ হয়ে আবারও ‘ইত্যাদি’র ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। আর তাই প্রথম যখন কিছুটা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন তখনই ভাবী আমাকে জানিয়েছিলেন এটিএম ভাই ‘ইত্যাদি’তে অভিনয় করতে চান। অনেক শিল্পীরই বিকল্প তৈরি হয় কিংবা করা যায় কিন্তু এটিএম শামসুজ্জামানের কখনোই কোনো বিকল্প ছিল না, আর তৈরি হবে কিনা জানি না। তার প্রতিটি চরিত্রই ছিল তার অভিনয় নৈপুণ্যে আলাদা বৈশিষ্ট্যের। এই মহান শিল্পীর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা তার মাগফিরাত কামনা করছি।

ববিতা: আরো একজন প্রিয় মানুষকে হারালাম। হারানোর তালিকাটা দিন দিন শুধু বড় হচ্ছে। গেল বছর থেকে একদিকে করোনায় আমাদের সব থমকে গেছে। এরমধ্যে প্রিয় মানুষদের হারানোর কষ্ট বাড়ছে। এটিএম শামসুজ্জামানের মতো একজন শক্তিমান শিল্পী হারানোর ক্ষতটা সহজে শুকাবে না। উনার আত্মার শান্তি কামনা করছি।

অরুণা বিশ্বাস: আমি প্রথম ছবিতে কাজ করেছি ওনার সঙ্গে। প্রথম থেকেই আমি তাকে বাবাজি বলে ডাকতাম। আমার সেই বাবাজি চলে গেলেন। আমি অভিভাবক শূন্য হয়ে গেলাম। কতো স্মৃতি, কতো আশীর্বাদের কথা তার মনে পড়ছে। হাতে ধরে কতো কিছু শিখিয়ে গেলেন তিনি। তার চলে যাওয়াতে মনটা আমার ভীষণ খারাপ। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। বাবাজি ভালো থাকুক।

মিশা সওদাগর: আমার প্রথম ‘চেতনা’ ছবিতেই এটিএম ভাইকে পেয়েছি। সেই প্রথম থেকে একসঙ্গে অসংখ্য ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। অনেক কিছু তার কাছ থেকে শিখেছি। এটি আমার জন্য সৌভাগ্যের। কমেডি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার পর আমার মন খারাপ ছিল। তখন তিনি প্রথম ফোন করে বললেন, তুমি অনেক বড় অভিনেতা। ভিলেন-কমেডিতে সবাই পুরস্কার অর্জন করতে পারে না। এই দেশে আমি পেরেছি, এখন সেটা তুমি পেলে। আমরা একজন কিংবদন্তি শিল্পীকে হারালাম। আর পৃথিবী থেকে বিদায় নিলো একজন ভালো মানুষ। যুগে যুগে এমন শিল্পীর জন্ম হয় না। দেশ থেকে অনেক দূরে আছি। তাই শেষ দেখাটা দেখতে পেলাম না।

মীর সাব্বির: এটিএম শামসুজ্জামান একটি নাম। একটি ইতিহাস। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার পরিচালনায় তাকে নিয়ে কাজ করার ‘নোয়াশাল’ নাটকে। তিনি আমাকে নানারকম ভাবে ভালোবাসতেন এবং দোয়া করতেন। সব সময় বলতেন মীর সাব্বির তুমি সিনেমা বানাও। তিনি প্রায়ই তার বাসায় আমাকে ডাকতেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মজা করতেন। আমার পরিচালিত সিনেমার খোঁজ নেয়ার জন্য তিনি সর্বশেষ আমাকে ডেকেছিলেন তার বাড়িতে ১৮ই ডিসেম্বর ২০২০। আমি, আহসানুল হক মিনু এবং দেবাশীষ দে মিঠুন সেখানে গিয়েছিলাম। কখন যে আড্ডা মারতে মারতে সময় পার করে দিয়েছিলাম নিজেরাও টের পাইনি। সেটাই শেষ দেখা। আর কোনোদিন দেখা হবে না। কিন্তু যে দোয়া উনি করেছেন সেটা যতদিন বেঁচে থাকবো ভুলতে পারবো না।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর