প্রতিদিন হাজারো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে মানুষ। যার ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। দেশে বাড়ছে হাজারো বেকার। এরমধ্যে কেউ পুঁজির জন্য করতে পারছেন না ব্যবসা। আবার কেউ চাকরির জন্য ঘুরছেন। চাকরি না পাওয়ার হতাশায় কেউ যেমন ভোগেন মানসিক অস্বস্তিতে আবার কেউ বেছে নেন আত্মহত্যার মতো জঘন্য পথ। এদিকে রাজধানী ঢাকার যানজটে অতিষ্ঠ মানুষ। এর মুক্তি চান নগরবাসী।
এমন প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল প্ল্যাটফরম (ডিমা) বানিয়েছেন ইমতিয়াজ উদ্দিন আজাদ নামের এক তরুণ উদ্যোক্তা। এ মোবাইল অ্যাপসটি দেবে বহুমুখী সেবা ও নানা সমস্যার সমাধান।
ডিমা: একজন মা যেমন তার সন্তানের সর্বোচ্চ মঙ্গলের জন্য চেষ্টা করে থাকেন ডিমা বা ‘ডিজিটাল মা’ অ্যাপসটিও সেই ভূমিকা পালন করবে। এর ব্যবহারকারী হবে দেশের সাধারণ মানুষ। অন্যান্য অ্যাপসের মতোই সহজেই ব্যবহার করা যাবে এই অ্যাপসটি। শুধু বেকার ভাতা বা কর্মসংস্থান সৃষ্টিই নয়, এই অ্যাপসটি দেবে বহুমুখী সেবা ও নানা সমস্যার সমাধান। যেমন: যানজট নিরসন, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন, মোবাইল ব্যাংকিং ইত্যাদি।
ডিমার উদ্দেশ্য: ক্ষুদ্র বিনিয়োগে সম্মিলিত উদ্যোগে ব্যাপক শিল্প, কলকারখানা গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা এবং বেকারত্ব দূরীকরণে কাজ করা। বেকারদের বেকার ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করা। ব্যবসায়িক লেনদেন ও ধারদেনা নেয়া বা দেয়ার ব্যবস্থাকে ঝুঁকিমুক্ত করা। বিদেশি কোম্পানিগুলো বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিজ্ঞাপনের বিকল্প ব্যবস্থা করা। ক্ষুধার্তকে খাদ্য সরবরাহ করা।
যেভাবে কাজ করবে ডিমা: ডিমা অ্যাপস যে কেউ তাদের ভালো একটি বিজনেস আইডিয়া শেয়ার করতে পারবে।
যেমন: আপনার এলাকায় একটি কারখানা দিলে খুব ভালো চলবে, এর জন্য খরচ হতে পারে ৫০ লাখ টাকা। অথচ আপনার পকেটে আছে মাত্র ১০ হাজার টাকা। আপনার এলাকা এবং এর আশেপাশের সবার কাছে অ্যাপসের মাধ্যমে বিষয়টির একটি নোটিফিকেশন মোবাইলে যাবে। যাদের এই কারখানা তৈরিতে আগ্রহ থাকবে তারা অ্যাপসের মাধ্যমে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করবে এবং কতো টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে তা উল্লেখ করবে। যেমন কেউ ১০,০০০/- কেউ ৫০,০০০/- কেউ এক লাখ, ২ লাখ এভাবে ৫০ লাখ টাকা হয়ে গেলে ডিমা কর্তৃপক্ষ সবাইকে ডেকে অর্থ সংগ্রহ করে কারখানাটি তৈরি করে দেবে। এতে করে যে কেউ সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে একটি কারখানার মালিক হয়ে যেতে পারে!
কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ডিমা: ডিমা অ্যাপসের মাধ্যমে একদিকে প্রচুর পরিমাণে বিজনেস আইডিয়া আসতে থাকবে আর অন্যদিকে সেগুলো তৈরি হতে থাকবে। এখানে বিজনেস আইডিয়া হিসেবে ক্ষুদ্র মুদির দোকান থেকে শুরু করে বৃহৎ কলকারখানা, ইন্ডাস্ট্রি পর্যন্ত হতে পারে। এভাবে ব্যাপক কলকারখানা প্রতিষ্ঠিত হতে থাকলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি হবে। ফলে বেকার সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে থাকবে বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এখানে যে কেউ সামান্য টাকার বিনিময়ে যেমন একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হচ্ছে অন্যদিকে সেখানে তার একটি ভালো কর্মসংস্থানও হচ্ছে।
ব্যবসা সুদৃঢ় করতে ডিমা: আমাদের দেশে সাধারণত যৌথভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে গেলে উভয়ের মধ্যে মতানৈক্য থাকে এবং একে অপরের প্রতি ভুল বুঝাবুঝি তৈরি হয় এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থায়ী হয় না, এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল প্ল্যাটফরম ডিমা-এর নেতৃত্বে পরিচালিত হবে। সে ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে আস্থা, বিশ্বাস ও একতাবদ্ধতা তৈরি হবে এবং ব্যবসা দীর্ঘস্থায়ী হবে। এক পর্যায়ে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর নির্ভর করতে হবে না। কারণ ক্ষুদ্র বিনিয়োগের মাধ্যমে বৃহৎ বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হবে বাংলাদেশে।
বেকারদের যেভাবে ভাতা দিবে ডিমা: ডিমা সকল বিনিয়োগের ওপর এককালীন ২ শতাংশ চার্জ হিসেবে এবং প্রতি মাসের ব্যবসায়ের প্রফিটের ৫ শতাংশ থাকবে ডিমা’র। ডিমা উক্ত সকল প্রফিটের ২০% রাখবে এই অ্যাপসটি পরিচালনার জন্য আর বাকি ৮০ শতাংশ রাখবে বেকারদের বেকার ভাতা দেয়ার জন্য।
ডিমা-এর মাধ্যমে যখন হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের উপর এবং মাসিক যে বিশাল অঙ্কের প্রফিট আসবে সেখান থেকে বেকারদের জন্য মিনিমাম ৫০০০/- টাকা করে বেকার ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এখানে ডিমা’র প্রফিটকে ৫০০০/- দিয়ে ভাগ করে যে সংখ্যা বের হবে ওই সংখ্যাই হচ্ছে বেকারদের সংখ্যা।
আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি করবে ডিমা: ডিমা’র আরেকটি বড় কার্যক্রম হচ্ছে ব্যবসায়ীদের লেনদেন। প্রত্যেক ব্যবসায়ীর কমবেশি ডিউ থাকে। এই ডিউ’র কারণে অনেক বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উঠে আসতে পারে না। আর এই ডিউ সহজে আইনের মাধ্যমেও কালেকশন করাও কঠিন হয়ে পড়ে।
এখানে প্রত্যেক ব্যবসায়ী ডিমা’র মাধ্যমে লেনদেন করতে পারবে। যেমন রহিম নামে একজন ব্যবসায়ী করিমের কাছ থেকে ১০,০০০/- টাকা মূল্যের পণ্য কিনবে, সেক্ষেত্রে রহিম পণ্যের বিনিময়ে ৫,০০০/- টাকা প্রদান করবে অবশিষ্ট টাকা বাকিতে প্রদান করতে চায়, সেক্ষেত্রে রহিমকে ৫,০০০/- টাকা ডিমাতে জমা দিতে হবে, আর করিম পণ্য প্রদান করলে রহিম ডিমার অ্যাপস্-এর মাধ্যমে কনফার্ম করার সঙ্গে সঙ্গে করিমের অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাবে। এখানে অবশ্যই ডিমা’র সঙ্গে ব্যাংকিং ফ্যাসিলিটি যুক্ত থাকবে। এতে করে পণ্য নিয়ে একে অপরকে প্রতারিত হওয়া বা করার সুযোগ থাকবে না।
একই সঙ্গে বাকি টাকা রহিম কবে দেবে সেটা ডিমা অ্যাপস্-এর মাধ্যমে অবশ্যই জানাতে হবে। এবং সেই তারিখের ভেতরে টাকা প্রদান না করলে রহিম ডিমা’র ব্লক লিস্টে স্বয়ক্রিয়ভাবে চলে যাবে। আর ব্লক লিস্টে কারও নাম থাকলে সে ব্যক্তি দেশের সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে।
যেমন: সরকারি কোনো বেতন ভাতা পাবে না, পাসপোর্ট-ভিসা প্রসেস হবে না, ব্যাংক সার্ভিস বন্ধ থাকবে, ব্যবসায়ীক কোনো ডকুমেন্ট প্রসেস করা যাবে না, চাকরির আবেদন করা যাবে না, কলেজ বা ভার্সিটিতে ভর্তি নিষেধাজ্ঞাসহ ইত্যাদি প্রতিবন্ধকতা সরকারিভাবে তৈরি করা গেলে ডিমা’র উদ্দেশ্য সফল ভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
এতে করে কোনো ব্যবসায়ী টাকার জন্য কাস্টমারের পেছনে পেছনে ঘুরতে হবে না, নির্ধারিত সময়ের ভেতর টাকা পেয়ে যাবে। দেশে ব্যবসা’র ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সময় মতো পাওনা আদায় করা।
এক্ষেত্রে একজন ছোট মুদির দোকানিও বাকিতে পণ্য দিতে গেলে ডিমা’র সহায়তা নেবে এবং কোনো খাতা-কলম ব্যবহার করা ছাড়াই সময় মতো টাকা পেয়ে যাবে। ব্যবসায়িক লেনদেন থেকে ২% চার্জ করবে ডিমা। ব্যবসায়ীরাও তাদের লেনদেনের নিরাপত্তার জন্য ২% দিতে কার্পণ্য করবে না। আর প্রাপ্ত প্রফিটের ৮০% বণ্টন হবে বেকারদের জন্য।
বিজ্ঞাপনে ডিমা: ডিমা’র আরেকটি সেবা হচ্ছে বিজ্ঞাপন। বর্তমানে বিজ্ঞাপনের সবচাইতে জনপ্রিয় এবং বৃহৎ প্ল্যাটফরম হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। সকল শ্রেণির মানুষ তাদের পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন অল্প খরচে এই সোশ্যাল মিডিয়াতে দিয়ে থাকে। যে কারণে শত শত কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে অধিকাংশ অ্যাকাউন্ট থাকে ভুয়া, যার কারণে বিজ্ঞাপনদাতার উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হয় না। অন্যদিকে ডিমাতে অল্প খরচে বিজ্ঞাপন দেয়া যাবে। এখানে কোনো ভুয়া আইডি থাকবে না। কারণ সকলেই তাদের ন্যাশনাল আইডি দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলবে। তাই বিজ্ঞাপনদাতার উদ্দেশ্য সোশ্যাল মিডিয়ার তুলনায় দ্বিগুণ সফল হবে। অন্যদিকে দেশের টাকা দেশেই থাকবে। আর এই বিজ্ঞাপন থেকে প্রাপ্ত প্রফিটের ৮০% বণ্টন হবে বেকারদের জন্য।
ক্ষুধার্তকে খাদ্য দেবে ডিমা: ডিমা’র অন্য আরেকটি মানবিক ফাংশন হচ্ছে ক্ষুধার্তকে বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করা। গরিব শ্রেণির মানুষ ছাড়াও অনেক পরিবার যেকোনো কারণে তাদেরকে একবেলা-দু’ বেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে! ক্ষেত্রবিশেষে এদেরকে খাওয়ানোর কেউ থাকে না কিংবা কারও কাছে চেয়ে খাওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না।
এক্ষেত্রে তারা ডিমা’র মাধ্যমে খাবারের রিকোয়েস্ট পাঠাবে। আশেপাশে অ্যাপস ব্যবহারকারী যে কেউ রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে খাবার পৌঁছে দেবে।
আর তার বিনিময়ে সহায়তাকারী কোনো পেমেন্ট পাবে না, সে পাবে ডিমা পয়েন্ট। আর এই পয়েন্ট যার যত বেশি থাকবে বেকার ভাতা পাওয়ার অগ্রাধিকার তার ততই বেশি থাকবে। এ পয়েন্টের জন্য একে অপরকে সাহায্য করতে প্রতিযোগিতায় নামবে।
দেখা যাচ্ছে ডিমা দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে যেমন বিপ্লব ঘটাবে তেমনি মানুষের ভেতরে সাহায্য-সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করা সহ নানা সমস্যার সমাধান দেবে। আর্টিফিসিয়াল সফট্ওয়্যারের তরুণ উদ্যোক্তা ইমতিয়াজ উদ্দিনের উদ্ভাবিত এই আইডিয়াটি প্রতিষ্ঠা করার জন্য সরকারি সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই। এবং সরকারের একটি সংস্থা বা অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেলে ডিমা’র প্রতি মানুষের বিশ্বাস বাড়বে। অন্যদিকে ডিজিটাল বিপ্লবের মাধ্যমে দেশও এগিয়ে যাবে।