× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিনম্র শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদদের স্মরণ

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, সোমবার

বিনম্র শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদদের স্মরণ করেছে জাতি। করোনা মহামারির মধ্যেও নানা আয়োজনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। পালিত হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গান গেয়ে শহীদদের স্মরণে বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করে, শ্রদ্ধার ফুল হাতে মানুষের ঢল নামে শহীদ বেদিতে। স্মৃতির মিনারে শ্রদ্ধায় অবনত হয় লাখো মানুষ। আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরণ করা হয় একুশের আত্মত্যাগ ও মহিমা। ফেব্রুয়ারি মাস একুশের শহীদের স্মৃতিবাহী শোকাবহ মাস হলেও আত্মত্যাগ ও আত্মজাগরণের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের কারণে দিনটিকে উদ্‌যাপন করা হয় পরম মমতায়। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এ বছরের উদ্‌যাপনে কিছুটা ছন্দপতন ঘটে।
তবুও স্মৃতির মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
দিনের কর্মসূচি শুরু হয় একুশের প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে। এ সময় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে হাজারো মানুষের ঢল নামে। ৫২’র ভাষা আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাত ১২টা ১ মিনিট থেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে থাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানুষ আসতে থাকেন। তবে ভোরের আলো পূর্ব দিগন্তে উঁকি মারার সঙ্গে সঙ্গে মানুষজন ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আজিমপুর কবরস্থান ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছুটে যান। বেলা গড়াতেই বাড়তে থাকে মানুষের ঢল। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের অদূরে পলাশীর মোড়ে জড়ো হন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তল্লাশি শেষে তারা সারিবদ্ধভাবে ভেতরে প্রবেশ করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভিড় ক্রমেই বাড়তে থাকে। ফুলেল শ্রদ্ধা জানাতে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধা জানাতে একা কিংবা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনেকেই ফুলেল শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর একুশের প্রথম প্রহরে মানুষের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। এ ছাড়া সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এবার শহীদ মিনারের মূল বেদিতে একসঙ্গে পাঁচজন শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন- এমন নিয়মে রাতে ভিড় কম হয়। প্রতি বছর একুশের প্রথম প্রহরে প্রেসিডেন্ট ও সরকার প্রধানের তরফ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়েই শুরু হয় বাঙালির শ্রদ্ধা জানানোর পর্ব। মহামারির মধ্যে এ বছর তাদের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তাদের সামরিক সচিবরা। রাষ্ট্রপতির পক্ষে ফুল দেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম। আর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মধ্যরাতে ঘড়ির কাঁটা ১২টা ছোঁয়ার আগেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের সারি দেখা যায় শহীদ মিনারে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শহীদ মিনার সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের এই পালায় সকালে নামে মানুষের ঢল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের সারি আরো দীর্ঘ হয়। ফুল আর ছোট ছোট পতাকা হাতে লাইন বেঁধে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় বিভিন্ন বয়সের এবং  নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের সন্তানদের নিয়ে শহীদ মিনারে আসেন ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় শহীদ বেদি। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের পদচারণায় দিনভর মুখরিত শহীদ মিনারে বড়দের হাত ধরে এসেছিল শিশুরাও। অনেক স্কুল থেকেও খুদে শিক্ষার্থীরা হাজির হয়েছিল ব্যানার নিয়ে।
মহামারি কালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচজন এবং ব্যক্তিপর্যায়ে সর্বোচ্চ দু’জন একসঙ্গে শ্রদ্ধা জানানো শর্ত আরোপ করা হলেও তা মানতে দেখা যায়নি কাউকে। দুপুর ২টায় শহীদ মিনারের ঘোষণা মঞ্চ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের আনুষ্ঠানিকতার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। তবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে পারবে বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ঢাকার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় শহীদ মিনারেও একুশের প্রথম প্রহর থেকে ফুল দেয়ার পালা শুরু হয়। এ ছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আলোচনা সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, প্রতিযোগিতাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের শ্রদ্ধা নিবেদনের দৃশ্য দেখাতে পলাশীর মোড়ের অদূরে ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করা হয়। ওদিকে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো দিবসটি পালন করে। আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কোরআনখানির আয়োজনসহ দেশের সব উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।  সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবারের মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক করে ‘শিক্ষায় এবং সমাজে বহু ভাষার অন্তর্ভুক্তি সযত্নে লালন করি’। ভাষা শহীদদের স্মরণে এদিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর