পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফসি), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড ‘অনিয়ম-দুর্নীতিতে’ ডুবতে বসার ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করতে কমিটি করে দিয়েছে হাইকোর্ট। কমিটি ২০০২ সাল থেকে এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেখভালের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দায়ও নিরূপণ করবে। মঙ্গলবার ৭ সদস্যের কমিটি চূড়ান্ত করে দেন বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের ‘কারণ উদ্ঘাটন’ (ফেক্ট ফাইন্ডিং) কমিটির সুপারিশ করা হলে তার সঙ্গে সাবেক সচিব ও একজন বিচারককে যুক্ত করে আদালত।
কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর একেএম সাজেদুর রহমান খানকে সভাপতি ও বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. সারোয়ার হোসেনকে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক একেএম ফজলুর রহমান, ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক মো. কবির আহাম্মদ, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৪ এর মহাব্যবস্থাপক মো. নুরুল আমীন। এ ছাড়া আদালত যে দুজনকে কমিটিতে যুক্ত করেছে, তারা হলেন- সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মহিদুল ইসলাম ও সাবেক সচিব নুরুর রহমান।
হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ঠগবাজ ব্যবসায়ী, প্রতারকরা যাতে জনসাধারণের অর্থ আত্মসাৎ করতে না পারে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকবেন। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এদের গোপন আঁতাত, পরিকল্পনা ভেঙে দিতে হবে।
দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি-উন্নয়নের জন্য সরকার প্রধান যেখানে ক্লান্তিহীন কাজ করে যাচ্ছেন। সেখানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেখভালের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বিশেষ করে ডিজিএম, জিএম, নির্বাহী পরিচালক ও ডেপুটি গভর্নররা ঠগবাজ, প্রতারক ও অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। এই বিপর্যয়ের জন্য তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।
বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফসি) বিদেশি অংশীদার ‘টিজ মার্ট ইন-করপোরেটেডের আইনজীবী ওমর ফারুক এ কমিটির বিষয়ে আদালতকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যাদের নিয়ে এই কমিটি করেছে, তারা কোনো না কোনো সময় এজিএম ছিল, ডিজিএম ছিল। তারা এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। কেবল একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তদন্ত হলে তা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। পরে আদালত তার বক্তব্য শুনে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাবিত কমিটির সঙ্গে দুজন স্বাধীন-নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে যুক্ত করে কমিটি চূড়ান্ত করে দেয়।
আদালত আদেশে বলেছে, এই তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের সঙ্গে কমিটির কোনো সদস্য জড়িত থাকলে বা কোনো সদস্যের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে সেই সদস্য দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকবেন। কমিটি তদন্তের প্রয়োজনে এই তিন আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।