অভ্যুত্থান বিরোধীরা যথারীতি রাজপথে অবস্থান নিয়েছেন। অন্যদিকে সঙ্কট সমাধানের জন্য প্রতিবেশীরা উদ্যোগ নিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে এসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আইসিয়ান) কূটনৈতিক উদ্যোগে আলোচনা করতে বুধবার থাইল্যান্ড পৌঁছেছেন মিয়ানমারে সামরিক জান্তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী উন্না মুয়াং লুইন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দিয়ে আরো বলছে, আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সহযোগিতা নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্কট সমাধানের একটি উপায় বের করতে উদ্যোগ নিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। কিন্তৃ দৃশ্যত দিনের শুরুতে তাদের এ পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে যাচ্ছিল। কারণ, মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রস্তাবিত সফর বাতিল করেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি থাইল্যান্ড পৌঁছেছেন বলে থাই সূত্রগুলো জানাচ্ছে।
১লা ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী সামরিক অভ্যুত্থানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সুচি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে।
তারপর এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে। কিন্তু দীর্ঘদিন পরে গণতন্ত্র পাওয়া সাধারণ মানুষ আবার তাদের কাছ থেকে সেই গণতন্ত্র কেড়ে নেয়া সহ্য করতে পারেনি। তারা রাস্তায় নেমে র্যালি করেছে। সাধারণ ধর্মঘট পালন করেছে। সামরিক জান্তার কঠোর হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে তারা রাজপথ কাঁপিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে কমপক্ষে তিনজনের রক্তে ভিজেছে রাজপথ। সামরিক জান্তার গুলিতে মারা গেছেন তারা। আজ বুধবার জাতিগত সংখ্যালঘুরা জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের স্টাফদের সঙ্গে নিয়ে বিক্ষোভ করেছে।
অন্যদিকে এই বিক্ষোভ এবং এর সঙ্গে গণঅসহযোগ আন্দোলনের ধর্মঘটে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। ইয়াঙ্গুনের ইলেকট্রনিকস পণ্যের দোকানমালিক উইন থেইন (৫৬) বলেছেন, অর্থনীতি মোটেও ভাল যাচ্ছে না। সেনাবাহিনী যদি ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয় বিজয়ী দলের কাছে তাহলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
সামরিক অভ্যুত্থানের ফলে ১০ টি দেশের সমন্বয়ে যে আসিয়ান তার মধ্যে মিয়ানমারের সুনাম আগের অবস্থানে নিয়ে গেছে। সূত্রগুলো বলেছেন, এ সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়া একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর কাছে পাঠায়। এতে বলা হয়, মিয়ানমারের জেনারেলরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে তাদের এই প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করতে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকে পর্যবেক্ষক পাঠাতে হবে। কিন্তু অবাক হওয়ার মতো বিষয় হলো, তারা সামরিক অভ্যুত্থানের কোনো নিন্দা জানায়নি। এক্ষেত্রে সামরিক জান্তা নতুন নির্বাচনের যে ঘোষণা দিয়েছে তার কোনো সময়সীমা উল্লেখ করেনি। কিন্তু তারা এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি করে রেখেছে। ফলে দৃশ্যত মনে হচ্ছে, তারা এই নির্বাচন জরুরি অবস্থার শেষে বা এক বছর পরে দিতে পারে। ওদিকে গত ৮ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে পার্লামেন্টের শতকরা ৮৩ ভাগের বেশি আসনে বিজয়ী হয়েছে অং সান সুচির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। সামরিক জান্তার অভিযোগ, ওই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। তবে তারা প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে তাদের সমর্থকরা চাইছে নির্বাচনে তাদেরকে বিজয়ী বলে মেনে নেয়া হোক।