প্রায় ২০ বছর বন্ধ থাকার পর চালু হচ্ছে মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাবনার কাজীরহাট নৌ-রুটে ফেরি চলাচল। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরি চলাচল শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে রাতে ফেরির সেই সার্চ লাইটের আলোর ঝলকানি, যাত্রী, হকার ও ফেরিওয়ালাদের হৈ হুল্লোড় পড়ে যাবে। এক কথায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেতে যাচ্ছে আরিচা নৌবন্দর। এতে দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর চাপও কমে যাবে।
জনশ্রুতি রয়েছে, ভারত-পাকিস্তান বিভাগের আগে থেকেই যমুনা নদীর পাড়ে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচা ঘাট ছিল দেশের একটি বড় নৌবন্দর। কলকাতা-আসাম রুটের জাহাজ স্টিমার এই ঘাটেই ভিড়তো। এখানে ছিল বড় বড় পাটের গুদাম। এই ঘাটকে ঘিরে আরিচায় গড়ে উঠেছিল জমজমাট ব্যবসা কেন্দ্র।
পাকিস্তান আমলে এই ঘাটের গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়।
১৯৬৪ সালে ঢাকা-আরিচা সড়ক চালু হওয়ার পর আরিচা থেকে যমুনা পাড় হয়ে নগরবাড়ি এবং আরিচা থেকে যমুনা-পদ্মা পাড় হয়ে গোয়ালন্দ ঘাটের সঙ্গে চালু করা হয় ফেরি সার্ভিস। সেই সঙ্গে আরিচা-নগরবাড়ি হয়ে ওঠে উত্তরবঙ্গ এবং আরিচা-গোয়ালন্দ হয়ে ওঠে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গের সড়ক যোগাযোগের অন্যতম প্রধান প্রবেশ পথ। ১৯৬৩ সালে ৩১শে মার্চ কর্ণফুলি নামে একটি ফেরি সার্ভিস দিয়েই আরিচা দৌলতদিয়া নৌরুটের যাত্রা শুরু হয়। দেশ স্বাধীন হওয়া পর দ্রুত বাড়তে থাকে আরিচা ঘাটের গুরুত্ব। একপর্যায়ে আরিচা ঘাটকে নৌবন্দরের মর্যাদা দেয়া হয়। এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার যানবাহন পারাপার হতো। যাতায়াত ছিল গড় ৫০ হাজার মানুষের। ১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পর আরিচা ঘাটের গুরুত্ব কমে যায়। তার ওপর আরিচা ঘাটের কাছে যমুনা নদীতে নাব্যতা কমে যায়। এরপর সার্বিক দিক বিবেচনা করে ২০০১ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি আরিচা ফেরি ঘাট নিয়ে যাওয়া হয় পাটুরিয়াতে। সেই সঙ্গে মৃত্যু হয় এক সময়কার প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর আরিচা ঘাটের। শুধু রয়ে যায় কিছু লঞ্চ আর ইঞ্জিনচালিত নৌকা। তারপর থেকেই আরিচা ঘাটে নেমে আসে সুনসান নীরবতা। বন্ধ হয়ে যায় শত শত হোটেল-রেস্টুরেন্ট। ধস নেমে আসে বোর্ডিং ব্যবসায়। আর বেকার হয়ে পড়ে শত শত কুলি। এদিকে দীর্ঘ ২০ বছর পর ফেরি চলাচল শুরু হওয়ায় সম্পর্কে কথা হয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে।
পাবনার বাসিন্দা আজম আলী বলেন, ফেরি চলাচলের মধ্য দিয়ে আমরা উত্তর বঙ্গের মানুষজন সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবো। কারণ টানা ২০ বছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে যাতায়াত করে আসছি। বিকাল হলেই লঞ্চ বন্ধ রাখা হয়। ফলে আরিচা ঘাটেই রাতযাপন করতে বাধ্য হই। অথচ ফেরি থাকলে দিন রাত ২৪ ঘণ্টাই আমরা যাতায়াত করতে পারতাম। ফেরি পুনরায় চলাচল শুরু হওয়ায় আলহামদুলিল্লাহ। আরিচা ঘাটের এক হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, আরিচা কাজীরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য সবই স্থবির হয়ে পড়ে। দীর্ঘ ২০ বছর পর ফের এই নৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু হওয়ায় হয়তো আমরা এখন থেকে ব্যবসায় সুখের মুখ দেখতে পাবো। বিআইডাব্লিউটিসি আরিচা অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত ডিজিএম জিল্লুর রহমান বলেন, দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর পর আজ আমরা আবার পুনরায় আরিচা-কাজীরহাট নৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু হচ্ছে। আরিচায় একটি ও কাজীরহাটে একটি ঘাট তৈরিসহ মোট দুইটি ঘাট করা হয়েছে। আপাতত ২টি থেকে ৩টি ফেরি দিয়ে নৌরুট সচল রাখা হবে। যানবাহনের চাপ বেড়ে গেলে পর্যায়ক্রমে চাহিদা অনুযায়ী আরো ফেরি বাড়ানো হবে।