এখনো আইসিইউতে ডা. অন্তরা। তবে, তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। পরিবার চাইছে- তাকে নিয়ে গিয়ে আরো উন্নত চিকিৎসা দিতে। সেই প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ’র ১০ নম্বর বেডে রয়েছেন ডা. অন্তরা। লাইফ সাপোর্ট গতকাল দুপুর থেকে খুলে রাখা হলেও তিনি পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। কারণ- তার মাথা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া একটি পাও ভেঙে গেছে।
শুক্রবার সকালে ঢাকা-সিলেট হাইওয়ের রশিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় তছনছ হয়ে গেছে ডা. অন্তরার সংসার। ওই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তার স্বামী ডা. ইমরান। তিনি ছিলেন সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজের প্রভাষক। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন ডা. অন্তরা। অবশ্য ওইদিন খবর চাউর হয়েছিল অন্তরাও মারা গেছে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়। ডা. অন্তরা এখন আগের চেয়ে অনেক সুস্থ রয়েছেন। শনিবার তাকে মুখে খাবার দেয়া হয়েছে। তবে- পর্যবেক্ষণের জন্য এখনো তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকালে ডা. অন্তরার কয়েকটি অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর তাকে ফের আইসিইউতে আনা হয়। সকালের দিকে ডা. অন্তরার জ্ঞান ফেরে। এরপর থেকে তিনি স্বামী ডা. ইমরানের খোঁজ করছিলেন। স্বজনদের কাছে বার বার জানতে চেয়েছেন তার স্বামী ইমরান কেমন আছেন। স্বজনরা তাকে জানিয়েছেন- ডা. ইমরান অন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এতে আরো বিচলিত হয়ে উঠেছেন ডা. অন্তরা। তবে- এখনো তাকে স্বামীর মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানিয়েছেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সকলেই স্বাভাবিক আছেন। তবে ৩ জনের হাত-পায়ের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক ভাঙা থাকায় অবস্থা গুরুতর বিবেচনা করা হচ্ছে। আর বাকিদের ছোটখাটো জখম আছে। গুরুতর ৩ জনের মধ্যে নিহত ডা. ইমরান খানের স্ত্রীকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তবে তার আইসিইউ সাপোর্ট লাগছে না। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণসহ কয়েকটি কারণে তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য আইসিইউতে রাখা হয়েছে। এদিকে দুর্ঘটনায় আহত মোট ১৮ জন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। ওভারটেকিংয়ের কারণেই দুর্ঘটনা: ঢাকা-সিলেট রুটের রশিদপুরের মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ওভারটেকিংয়ের কারণেই হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তেও এসব তথ্য মিলেছে। লন্ডন এক্সপ্রেস গাড়ির যাত্রীদের জবানিতেই উঠে এসেছে এ তথ্য। লন্ডন এক্সপ্রেসের বাসচালক দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার আগে পথিমধ্যে একাধিকবার ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং করেছেন। এতে যাত্রীরাও বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। এ নিয়ে যাত্রীরাও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে গাড়ি চালানোর অনুরোধ জানিয়েছিলেন। সড়ক ও জনপথ সিলেট বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমানও জানিয়েছেন- ‘দুর্ঘটনা কিন্তু দ্রুত ওভারটেকিংয়ের জন্য হয়েছে। এ জন্য গতিনিরোধক নির্দেশনাও এখানে দেয়া এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ এদিকে- শুক্রবারের এ দুর্ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী একটি মামলা করা হয়েছে। দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন- এসআই লোকমান হোসেন বাদী হয়ে বাস দুইটির চালককে আসামি করে মামলা করেন। কিন্তু দুর্ঘটনায় দুই চালকই মারা গেছেন। তবে মামলায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে একটি আর্থিক পরিমাণও উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।