দেশে সামরিক অভ্যুত্থানকে বানচাল করে দিতে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আবেগঘন আহ্বান জানিয়েছেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কাইওয়া মোয়ে তুন। এ কারণে শনিবার তাকে বরখাস্ত করেছে সামরিক জান্তা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এমআরটিভিতে শনিবার রাতে ওই রাষ্ট্রদূততে বরখাস্তের ঘোষণা দেয়া হয়। তাতে বলা হয়, তিনি একজন স্থায়ী রাষ্ট্রদূতের ক্ষমতা ও দায়িত্বের অপব্যবহার করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। ওদিকে বরখাস্তের পর রয়টার্সকে ওই রাষ্ট্রদূত বলেছেন, যতদিন পারি আমি এর বিরুদ্ধে (সামরিক জান্তা) লড়াই করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শনিবার অভ্যুত্থানবিরোধীদের বিরুদ্ধে সামরিক জান্তা যখন দমনপীড়ন তীব্র করেছে তখন তাকে বরখাস্তের এমন ঘোষণা দেয়া হয়।
গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সুচির সরকারকে ১লা ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনী। তারপর থেকে টানা বিক্ষোভ চলছে দেশটিতে। এরই মধ্যে শুক্রবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে রাষ্ট্রদূত কাইওয়া মোয়ে তুন বক্তব্য রাখেন। তিনি দেশে সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে কথা বলেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানান মিয়ানমারে মানুষকে উদ্ধার করে সামরিক জান্তাকে জবাবদিহিতায় আনতে প্রয়োজনীয় যেকোনো পদক্ষেপ নেয়ার। তিনি বলেন, সামরিক অভ্যুত্থানের তাৎক্ষণিক ইতি ঘটাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আরো সম্ভাব্য শক্তিশালী পদক্ষেপ প্রয়োজন। এর মধ্য দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে নিষ্পেষণ বন্ধ করাতে হবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে গণতন্ত্র। তিনি আরো জানান, অং সান সুচির সরকারের পক্ষ অবলম্বন করে তিনি জাতিসংঘে বক্তব্য রাখছিলেন। এ সময় তিনি তিন আঙ্গুল উঁচিতে বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন। তার বক্তব্য শেষ হতেই জাতিসংঘে অন্য সহকর্মীরা বিরল প্রশংসা করেন তার। জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের এমন সাহসকিতার প্রশংসা করেন। শুক্রবার তিনি বলেন, মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের কড়া নিন্দা অব্যাহতভাবে জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। নিরস্ত্র মানুষকে নৃশংসভাবে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা হত্যা করছে। এরও নিন্দা জানাই আমরা। যুক্তরাষ্ট্র জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখবে। বিশেষ করে চিন, কাচিন, রাখাইন ও শান রাজ্যে রোহিঙ্গা ও ঝুঁকিতে থাকা অন্য জনগোষ্ঠীকে এই সহায়তা দেয়া হবে। শুক্রবার গ্লোবাল জাস্টিস সেন্টারের প্রেসিডেন্ট আকিলা রাধাকৃষ্ণান মিয়ানমারের জনগণের পক্ষে রাষ্ট্রদূত কাইওয়া মোয়ে তুন যে শক্তিশালী বিবৃতি দিয়েছেন তার সাহসিকতার প্রশংসা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন। তিনি অবৈধ সামরিক জান্তার অপসারণ দাবি করেছেন।