× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে এবং সফরের আগে-পরে মোমেন যা যা বললেন...

শেষের পাতা

তারিক চয়ন
৩ মার্চ ২০২১, বুধবার

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শপথ নেন ২০শে জানুয়ারি। এর ২০ দিন পর ১০ই ফেব্রুয়ারি ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার এ ‘বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের নয়াদিগন্ত দৃশ্যমান’- শিরোনামে একটি মতামত কলাম লিখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। যার প্রথম লাইন ছিল- যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিস্তৃত এবং এর ঐতিহাসিক শেকড় রয়েছে। সেখানে লেখা হয়- আমরা প্রতিবেশী, আঞ্চলিক এবং বিশ্বব্যাপী ক্রীড়নকদের সঙ্গে, বিশেষত: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে অর্থনৈতিক কূটনীতি অব্যাহত রাখবো। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কগুলো গণতান্ত্রিক নীতি, শান্তি, সমৃদ্ধি এবং ব্যক্তি স্বাধীনতায় আমাদের অভিন্ন মূল্যবোধের দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর থেকে দু’দেশের সম্পর্ক ক্রমবর্ধমান, ২০০৯ সাল থেকে যা আরো বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি লেখেন- বাইডেন প্রশাসনের কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশা যৌক্তিকভাবেই বেশি।

ডেইলি স্টার-এ এই কলাম লেখার এক সপ্তাহ পর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে কীভাবে আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা যায় তা নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলারের সঙ্গে আলোচনা করেন মোমেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয় (বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির আলোচনা, মানবজমিন ১৮ই ফেব্রুয়ারি)।

এর ক’দিন পর বাইডেন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নে মোমেন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন বলে খবর বের হয়। মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমেরিকা যাচ্ছি, এখানে আমাদের কয়েকটি মিটিং আয়োজন হয়েছে।
বিশেষ করে নতুন সরকার আসছে। নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের ?উন্নয়ন চাই। আমি ব্রড বেইজড আলাপ করবো। তারা নতুন একটা ফরেন পলিসি দিয়েছে। স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখানে ভূ-রাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেসব আমরা তাদের তুলে ধরবো। সুতরাং তারাও আমাদের সেভাবে দেখে। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী সম্পর্কের উন্নয়ন করতে চাই। আমাদের অনেক সম্ভাবনা আছে, আর আমেরিকাও অনেক বড় দেশ। তাদের সঙ্গে যদি আমাদের সম্পর্ক আরও উন্নত করতে পারি, দিস ইজ এ উইন-উইন।’ তিনি জানান,  সফরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এবং চেয়ারম্যান অব দি সিনেট ফরেন রিলেশন্স কমিটির বৈঠকে যোগ দেবেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের দেশ সম্পর্কে কোনো কোনো সময় নেতিবাচক প্রচারণা বিদেশে হয়। আমরা সেই নেতিবাচক প্রচারণা নিয়ে সেখানে দু’য়েকটা মিডিয়াতে সাক্ষাৎকার দেবো। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- নেতিবাচক প্রচারণার জবাব দেয়া। যেমন ধরুন- বলা হয় আমরা খুব বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করি। একেবারে মিথ্যা কথা। আমাদের দেশে কালেভদ্রে দু’য়েকটা হয়। আমেরিকাতে পুলিশ অনেক লোক মারে, ইচ্ছা করে মারে না, মরে যায়। গত এক বছরে দেখেন ১০০৪ জনকে পুলিশ মেরে ফেলেছে। উইদাউট ডিউ প্রসেস অব দি ল’। ইচ্ছা করে তো মারে না, বিভিন্ন কারণে মারা যায়। আর আমাদের এখানে মনে হয়, যেন আমরা ইচ্ছা করে করেছি!’ (বাইডেন সরকারের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যুগান্তর ২২ ফেব্রুয়ারি)।

তিনদিনের সফরে ২২শে ফেব্রুয়ারি রাতে ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন মোমেন।

কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে কালের কণ্ঠের এক প্রতিবেদনে বলা হয়- ব্লিনকেন ছাড়াও সিনেটের আন্তর্জাতিক-বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান বব মেনেন্দেজসহ কয়েকজন সিনেটরের সঙ্গে মোমেনের বৈঠক হবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘কাউন্সিল ফর ফরেন রিলেশন্স’-এ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও নিউলাইনস ইনস্টিটিউটে রোহিঙ্গা-বিষয়ক দু’টি আলাদা বৈঠক এবং যুক্তরাষ্ট্র চেম্বারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি সাক্ষাৎকার দেবেন। (মোমেন-ব্লিনকেন বৈঠক বুধবার, বাইডেন প্রশাসনের মনোভাব জানার পাশাপাশি নিজেদের অবস্থান তুলে ধরবে বাংলাদেশ ২৩শে ফেব্রুয়ারি)।

তবে, ওয়াশিংটনে পৌঁছানোর পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেনের সঙ্গে মোমেনের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, ‘সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্থনি ব্লিনকেন আজকে (২৩শে ফেব্রুয়ারি) টেলিফোনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে কথা বলেন।’ বলা হয়, ওই ফোনালাপে দক্ষিণ এশিয়া ও বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার বিষয়ে উভয় নেতা আগ্রহ ব্যক্ত করেন। আর ঢাকার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আলাপে যুক্তরাষ্ট্র আবার বৈশ্বিক নেতৃত্বে ফেরত আসবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রাখার জন্য নতুন মার্কিন সরকারকে অভিনন্দন জানান। উভয় পক্ষ গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রসারে একসঙ্গে কাজ করতে একমত হয়েছে। মোমেন আশাবাদ ব্যক্ত করেন, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন খুব শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবেন।

দুই পক্ষই জানায়, মুখোমুখি বসে কথা না বলতে পারার জন্য ব্লিনকেন দুঃখ প্রকাশ করেন।

যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে সোমবার (১লা মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মোমেন। এ নিয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যু নিয়ে মোমেন বলেন, ‘মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে আমার কোনো কথা হয়নি। পরবর্তীতে হোয়াইট হাউস থেকে একজন ডেপুটি আমাকে ফোন করে বলেন ‘তারা ইন্দো-প্যাসিফিকে সিকিউরিটি নিয়ে দৃঢ় একটি প্রোগ্রাম করতে চান’। আমি বলেছি, ‘আমরা এখন আমাদের উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত। প্রথমত: আমাদের লোকদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান দিতে হবে। তাদের আমাদের সুন্দর একটি জীবন দিতে হবে। এ ছাড়া সব দেশ আমাদের বন্ধু। সুতরাং খাদ্য ও ভালো জীবন দেয়ার বিষয়ে আমরা বেশি উদ্বিগ্ন।’ তবে কে তাকে ফোন করেছেন জানতে চাইলে মোমেন বলেন, ‘নাম বলতে পারবো না। একজন ভদ্র মহিলা আমাকে ফোন করেছিলেন। তারা বলেছেন, বঙ্গোপসাগরের নিরাপত্তা নিয়ে তারা চিন্তা-ভাবনা করে। আমি বলেছি এটি নিয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করি না। আমরা অনেক বেশি নিরাপদ।’

বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীর বিষয়ে মোমেন বলেন, ‘মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি আপনারা প্রায়ই আমাদের উপদেশ দেন সুশাসন ও আইনের শাসন নিয়ে। আমরা আইনের শাসন ও আইনের বিচার চাই এবং আমরা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। কিন্তু আমাদের মধ্যে একটি গ্যাপ রয়ে গেছে। আমাদের দেশের এক আত্মস্বীকৃত পলাতক খুনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। এখন সময় এসেছে তাকে আপনারা ফেরত পাঠান। এই সপ্তাহে আপনারা একজন ইসরাইলিকে ফেরত পাঠিয়েছেন, একই কাজ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে করা উচিত। জবাবে ব্লিনকেন (আমাকে) বলেছেন, এটি বিচার বিভাগের কাজ, তারা স্বাধীন।’

আল-জাজিরার প্রতিবেদনের প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, ‘আল-জাজিরার কথিত অনুসন্ধানী রিপোর্টটি একটি নাটক ছিল এবং অত্যন্ত ‘দুর্বল নাটক’ ছিল। এতে তদন্তের কোনো উপাদান নেই. যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান ও সিনেটর অনেকের সঙ্গে আমার নানা বিষয়ে আলাপ হয়েছে। কিন্তু তাদের কেউই আল-জাজিরার প্রতিবেদন প্রসঙ্গে কোনো কথা তোলেননি। তবে ভয়েস অব আমেরিকা, আমেরিকার সময়, আমেরিকা প্রতিদিন, আমেরিকার বাংলা টিভিসহ আরো দু’-একটা টিভিতে সাক্ষাৎকার প্রদানকালে তারা এ নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন। আমরা বলেছি, আল-জাজিরা একটা নাটক লিখেছে। তার স্ক্রিপটা ছিল ভুলে ভরা এবং দুর্বল, যা একেবারেই বেমানান। যদি এটি সত্য হতো তবে অবশ্যই সরকার তদন্ত করতো। আল-জাজিরার কথিত অনুসন্ধানে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একজন ব্যক্তিকে তার ভাইদের অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। যা একেবারেই ঠিক নয়। এক ভাইয়ের অপরাধে অন্য ভাইকে অভিযুক্ত করা যায় না।’ এ সময় মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন উচ্চপদস্থ রাজনীতিবিদের পরিবার বিশেষত তার ভাইয়ের মাফিয়া সিন্ডিকেটের দীর্ঘ বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের ওই রাজনীতিকের মাফিয়া সম্রাট  ভাইয়ের জন্য কেউ কিন্তু তাকে অভিযুক্ত করেনি বা প্রশ্ন তোলেনি। কারণ ওই রাজনীতিবিদ তার ভাইয়ের ঠিক বিপরীত চরিত্রের ছিলেন এবং ভালো ছিলেন।’

এদিকে মোমেন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদ কারাগারে মারা যান। তার মৃত্যুতে অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) ভুক্ত ১৩টি দেশের ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনার এক যৌথ বিবৃতিতে মুশতাকের মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকারের কাছে তার মৃত্যুর দ্রুত, স্বচ্ছ, স্বাধীন এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে আহ্বান জানান। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে ব্রিটিশ হাইকমিশনার, ফ্রান্স ও জার্মানির রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলারও। এরপরই মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এর সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরও।

এসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে মোমেন বলেন, ‘এ নিয়ে কূটনীতিকদের হৈ চৈ করার কিছু নেই। আমাদের দেশ একটা তাজ্জবের দেশ। একজন মারা গেলে সে কি কারণে মারা গেছে আমরা জানি না! বিদেশিরাও এটা নিয়ে খুব উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দেশের লোক করুক, এটা নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু বিদেশিরা এতে মাতব্বরি করবেন কেন? আমরা যদি বিদেশে উদ্বেগ প্রকাশ করি, কোনো বিদেশি মিডিয়া পাবলিসিটি দেয় না। এজন্য কেউ উদ্বেগও প্রকাশ করে না। এই যে সমপ্রতি বিদেশে রাষ্ট্রদূত মারা গেল তা তো আমেরিকান মিডিয়া এনটারটেইন করে না, করবেও না। বাংলাদেশেও এগুলো সব বর্জন করা উচিত।’
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর