দেশের সকল কারাগারে বন্দি সংবেদনশীল মামলার আসামি ও ‘ভিআইপিদের’ সঙ্গে সাক্ষাতে নজরদারি করছে কারা কর্তৃপক্ষ। কারাবিধি অনুযায়ী ১৫ দিন পর ওই সব বন্দিদের সঙ্গে যারা সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন তাদের ব্যক্তিগত পরিচয়, সমাজে সার্বিক অবস্থান, তার কর্মক্ষেত্র, তার নামে কোনো ক্রিমিনাল মামলা আছে কিনা, তার রাজনৈতিক পরিচয় ও সাক্ষাতের কারণ জানার পর তাদের অনুমতি দিচ্ছেন কারাগার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। যদি কোনো সাক্ষাৎ প্রার্থীর বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ তার বিষয়ে নেতিবাচক তথ্য পাচ্ছেন তাহলে তাকে ভিআইপি ও সংবেদনশীল মামলার আসামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেয়া হচ্ছে না। গত ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ভিআইপিও সংবেদনশীল মামলার আসামির সঙ্গে যারা সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন সে কক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন উপস্থিত থাকছেন। তাদের কথা পর্যবেক্ষণ ও রেকর্ড করা হচ্ছে। কারাগারের শৃঙ্খলার স্বার্থে এ উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছে কারা অধিদপ্তর।
গত ৬ই জানুয়ারি কাশিমপুর কারাগারে এক কর্মকর্তার কক্ষে এক নারীর সঙ্গে সময় কাটান হলমার্কের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ। সেখানকার ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় দেখা যায় যে, সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায় এবং ডেপুটি জেল সুপার গোলাম সাকলায়েনের উপস্থিতিতে এক নারী কারাগারে যান।
এ ঘটনায় তোড়পাড় সৃষ্টি হয়। কারাগারে ভিআইপি বন্দিদের সাক্ষাতে যাতে কোনো ধরনের নিয়মের ভঙ্গ না হয় এ জন্য কারা অধিদপ্তর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বিষয়ে কারা অধিদপ্তরের ডেপুটি জেলার (প্রিজন্স ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) মো. মোজাম্মেল খান মানবজমিনকে জানান, ‘কারা বিধি অনুযায়ী একজন বন্দির সঙ্গে ১৫ দিন পর তাদের স্বজন এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকা লোকজন সাক্ষাৎ করতে পারেন।
তিনি আরো বলেন, ‘কারাগারে বন্দি অবস্থায় যে সব ভিআইপি, সংবেদনশীল মামলার আসামি, জঙ্গি ও সন্ত্রাসী রয়েছে তাদের সাক্ষাৎ কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে জেল কোড অনুযায়ী দিন ও সময় পর্যবেক্ষণ করা হয়। শুধু তাই নয়, এসব মামলার আসামিদের সাক্ষাৎকারের সময় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন উপস্থিত থাকছেন। তাদের সকল কথা পর্যবেক্ষণ ও রেকর্ড করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, কারাবিধি অনুযায়ী কোনো ভিআইপি সাক্ষাতের সময় পান ২৫ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ মিনিট। কিন্তু, কোনো কোনো বন্দি দীর্ঘ সময় তাকে দেখতে যাওয়া দর্শনার্থীর সঙ্গে কথা বলেন। এটা জেল কোডের লঙ্ঘন। দীর্ঘ সাক্ষাৎ হলে তাকে আবেদনে সেটি উল্লেখ করতে হবে। কিন্তু, এর আগে এর কোনো বালাই ছিল না। এক শ্রেণির কারাগারের অসাধু কর্মকর্তা ও কারারক্ষীরা অবৈধভাবে অর্থ পেয়ে ওই সকল ভিআইপিদের এ সুবিধা দিতেন।
সূত্র জানায়, ঢাকাসহ যেসব কারাগারে ভিআইপি বন্দি রয়েছে তাদের আগে কারাগারের কোনো কোনো কর্মকর্তা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা ও কারারক্ষীরা আর্থিকভাবে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। তাদেরও নজরদারি করছে কারা অধিদপ্তর। ইতিমধ্যে একাধিক কারাগারের কারারক্ষীদের একটি নামের তালিকা করেছে কারা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তাদের বিষয়েও তদন্ত চলছে।