বালুচিস্তান প্রদেশের দক্ষিণপশ্চিাঞ্চলীয় বন্দর নগর গাদোয়ারকে ‘পরবর্তী দুবাই’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। চীন-পাকিস্তানের অর্থনৈতিক করিডোর সিপিইসির আওতায় এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীনের নির্দেশে পুরো অঞ্চলটি কর্তৃপক্ষ সুরক্ষিত করে রেখেছে। এতে মৌলিক প্রয়োজন মেটাতেও সেখানে প্রবেশ করতে পারছে না স্থানীয়রা।এ খবর দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআই।
খবরে বলা হয়েছে, সাংবাদিক ফ্রান্সেকা মারিনোর দেয়া তথ্যানুযায়ি, গাদওয়ার বন্দরের মুক্ত অঞ্চল, শিল্পাঞ্চল গাদওয়ার ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (গিয়েদা) এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনস অথরিটি (ইপিজেডএ)- এসব স্থানই কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে শুধুমাত্র সুরক্ষিত রাখা হয়নি। সাধারণ মানুষ যারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে তাদেরকেও সমুদ্রসীমায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, ‘বন্দরের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া এবং ১৫ হাজার চীনা সেনা মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া সেখানে চীন ও পাকিস্তানের পতাকাও উড়ছে।
এসব কিছুই শুধুমাত্র বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নয়; বেইজিংয়ের স্বার্থরক্ষার পাশাপাশি বেলুচদের এখান থেকে দূরে রাখাও উদ্দেশ্য।’
তবে পাকিস্তানের একজন সেনা কিছুদিন আগে জানিয়েছিলেন, সিপিইসি প্রকল্পগুলোয় সম্প্রতি জঙ্গীহামলা বেড়ে যাওয়ার কারণে বালুচিস্তানে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে ইসলামাবাদ। পাক সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল বাবর ইফতেখারের মন্তব্য উদ্বৃত করে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম শিনহুয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আমরা সুরক্ষার পরিধি বাড়িয়েছি, সিপিইসিভুক্ত অঞ্চলে নিরাপত্তা রক্ষার জন্যই এ উদ্যেগ। পাশাপাশি আরো নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রদেশটিতে নিয়োজিত আধাসামরিক সেনার সংখ্যা এক ইউনিট থেকে দুই ইউনিটে উন্নীত করা হয়েছে।’ শিনহুয়ার প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, কিছুদিন আগে এখানে হামলার কারণে গোটা প্রদেশটিতেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, যাতে করে সিপিইসি প্রকল্পগুলোর কাজ মসৃনভাবে এগিয়ে যায়। সিপিইসি প্রকল্পগুলোয় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আরো নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ বালুচিস্তান বিপুল পরিমাণ প্রকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও অঞ্চলটি এখনো দরিদ্র এবং কম জনবহুল। বালুচরা প্রায়ই তাদের দুর্দশার বিষয়টি উপস্থাপন করে কিন্তু পাকিস্তান সরকার এর জবাব দেয় জোরপূর্বক অপহরণ, নির্যাতন ও হয়রানির মাধ্যমে। এছাড়া প্রদেশটিতে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি নিয়েও আপত্তি জানিয়ে আসছে বালুচরা। অন্যান্য প্রদেশের সাধারণ মানুষ বড় বড় প্রকল্পগুলোর সুফল ভোগ করলেও সিপিইসি বালুচিস্তানবাসীকে কোন সুবিধা দিচ্ছে না। সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে ক্ষুদ্ধ বেলুচরা ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করেছে। যার ধারাবাহিকতায় সিপিইসির বিভিন্ন স্থাপনায় বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রাণঘাতি হামলার সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে।
২০১৫ সালে চীন ৪৬ বিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্পটির ঘোষণা করে, যেখানে বালুচিস্তানকে একটি অখন্ড অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বস্তুত: সিপিইসি হচ্ছে সড়ক, রেলপথ বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি পরিকল্পিত নেটওয়ার্ক। প্রকল্পটির মাধ্যমে আরব সাগরে অবস্থিত পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় গাদওয়ার বন্দরটির সঙ্গে চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শিনজিয়ং অঞ্চলের সংযোগ ঘটবে। চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সংযোগের উন্নতির লক্ষ্যে এখানে সড়ক, রেলপথ এবং তেলের পাইপলাইন নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে। পাকিস্তান চাইছে সিপিইসির সাহায্যে চীনের পুঁজি, উৎপাদনক্ষমতা ও প্রযুক্তিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটাতে এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দ্বার উন্মোচন করতে। বিনিময়ে চীনও কিছু চাইছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির লক্ষ্য সিপিইসির মাধ্যমে আরব সাগরের সাথে একটা যোগাযোগের পথ; যা ভবিষ্যতে মালাক্কা প্রণালীর সঙ্গে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার একটি বাণিজ্যপথ হতে পারে।