বান্দরবান পৌর আওয়ামী আওয়ামী লীগের নেতা মিলন অবৈধভাবে পাহাড় কেটে তৈরি করলেন নতুন ইটভাটা। জেলার রুমা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ী এলাকা রুমানা পাড়ায় গড়ে উঠছে এ নতুন ইটভাটাটি। মানুষের নিত্য ব্যবহৃত ঝিরিতে বাঁধ দেয়া হয়েছে। এখন পাড়ার শত খানিক পরিবার পানির সংকটে ভুগছে। পাড়ার পাশে ইটভাটা নির্মাণে বন-জঙ্গলের গাছ পালা উজারের সম্ভাবনায় পাড়ার লোকজনদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এখন পাড়াবাসীরা আশঙ্কা করছে ইটভাটা নির্মাণের কারণে পানি সংকট, কাঠ ও গাছের অভাবে তাদের নিজ ভিটা থেকে উচ্ছেদ আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইটভাটা নির্মাণে মালিক পক্ষের কাছে নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র। এদিকে স্থানীয় প্রশাসনের এই ইটভাটার ব্যাপারে রয়েছে উদাসীনতা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় পাড়াবাসীরা এখন অসহায় বোধ করছে।
সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ইটভাটি নির্মাণ করা হচ্ছে রুমা উপজেলা সদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের রুমানা পাড়ায়। ইটভাটার নিকটে রয়েছে রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের রিজার্ভ ফরেস্ট। তিনটি ছোট-বড় পাহাড় কেটে ইটভাটা প্রস্তুতির কাজ চলছে। পাহাড় কাটতে বড় বড় বুলডোজার ব্যবহৃত হচ্ছে। পাহাড় কাটতে গিয়ে মাটি ভরাট হয়ে তিনটি ঝিরি ও ছড়ার পানির উৎসের প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। যে ঝিরিতে সারা বছর পাড়াবাসীদের পানির চাহিদা মেটাতো। সেই ঝিরিগুলো এখন মৃত্যুর মুখে পতিত হয়েছে। ইটভাটায় গিয়ে কেরানি দায়িত্বে থাকা মো: দিদারুল ইসলামকে পাওয়া যায়। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, কাজের শুরুতে ৬০ জন শ্রমিক ছিলো। ম্যানেজার শ্রমিকদের পাওনা মজুরি টাকা না দেয়ায় অনেক জন চলে গেছে। তাদের মধ্যে কারোর বাড়ি জেলার লামা উপজেলা আর নোয়াখালী জেলায়। শ্রমিক শাহরিয়ার ও আব্দুল্লাহ বাড়িও নোয়াখালি। শ্রমিকরা জানান, প্রতি রাউন্ডে পোড়ানো হবে তিনলাখ ইট। প্রায় ২০-২৫ রাউন্ড অর্থাৎ ৬০-৭৫ লাখ ইট পোড়ানো হবে।
নতুন রুমানা পাড়ারকার্বারী (পাড়াপ্রধান) কাপঙির বমের সঙ্গে দেখা হলে তিনি জানান, ইটভাটা করার জন্য প্রতি বছর সাড়ে ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হবে এই শর্তে বান্দরবানের মিলন ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরের পর কাগজের ফটোকপি দেয়ার কথা ছিল। ঠিকাদার মিলন এখনো তাকে চুক্তির কোনো কাগজ দেয়নি বলে জানান।
রুমানা পাড়ার বাসিন্দা নল তিলির বম বলেন, ইটভাটা স্থাপনের কারণে শুধু মাত্র পাহাড় কেটে মাটি ভরাট করে ছড়ায় পানি উৎসের প্রবাহ বন্ধের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। ভাটায় ইট পোড়াতে লাখ লাখ মণ লাকড়ি প্রয়োজন হবে। প্রতি মণ মাত্র ৫০ টাকায় লাকড়ি সরবরাহ করতে হবে বলে ইটভাটার পক্ষের লোকজন পাড়াবাসীকে জানিয়েছে। ইটভাটার জন্য লাকড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে নেয়া রাঙ্গামাটির ফারুয়া রিজার্ভ বনসহ আশপাশের এলাকায় কোনো স্থানে গাছ আর থাকবে না বলে আশঙ্কা করছেন তারা। পরে ঘর-বাড়ি তৈরিতে কোনো গাছ- বাঁশ পাওয়া যাবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইটভাটা তৈরিতে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমতি বা ছাড়পত্র নেই মালিক পক্ষের।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে ঠিকাদার মিলন এর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, দুর্গম এলাকায় সড়ক নির্মাণে এই ইট ব্যবহার হবে। ইটভাটা নির্মাণে বৈধ কাগজ পত্র আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যান্য জায়গায় যেভাবে ইটভাটা হয়, সেভাবে করছি। বান্দরবানের নিয়ম কানুনতো সবাই জানেন। বান্দরবানের পরিবেশ অধিদপ্তরের ইনস্পেক্টর আব্দুস সালাম বলেন, রুমায় ইটভাটা নির্মাণে কোনো অনুমতি নেই। যদি কেউ করে থাকে তা ভেঙ্গে দিয়ে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়ামিন হোসাইন বলেছেন, ইটভাটা স্থাপনের কথা শুনেছি। ইটভাটা পরিদর্শন করে বৈধ কাগজ পত্র কিংবা প্রশাসেনের অনুমতিপত্র আছে কিনা তা দেখে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।