× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আশ্রয়হীন ৮ পরিবারের কান্না

বাংলারজমিন

তোফায়েল হোসেন জাকির, সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা) থেকে
৬ মার্চ ২০২১, শনিবার

সোনা মিয়া, জরিনা বেওয়া ও নুরুজ্জামানসহ ৮টি ছিন্নমূল পরিবারের মানুষের বসবাস ছিল ঘাঘট নদীর একটি দ্বীপে। এ দ্বীপেই যুগ যুগ ধরে বসবাস করছিলেন তারা। এরই মধ্যে আইনি প্রক্রিয়ায় উচ্ছেদ করে দেয়া হয় তাদেরকে। কিন্তু তাদের পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। এখন অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। যেকোনো সময় সেখান থেকেও তুলে দেয়া হতে পারে তাদের।
শুক্রবার সরজমিন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের ঘাঘট নদীঘেঁষা পুরাণলক্ষ্মীপুর দ্বীপে চোখে পড়ে আশ্রয়হীন-গৃহহীন এসব পরিবারের করুণ চিত্র। কেউ খোলা আকাশের নিচে, আবার কেউ কেউ অস্থায়ী জরাজীর্ণ ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে জড়োসড়ো হয়ে রয়েছেন।
কপালে তাদের চিন্তার ভাঁজ।
জানা যায়, কামারপাড়া ইউনিয়নের পুরাণলক্ষ্মীপুর দ্বীপে সোনা মিয়া, জরিনা বেওয়া, জহুরুল ইসলাম, নজু মিয়া, নুর আলম মিয়া, নুরুজ্জামান, তাহের মিয়া ও আবু সাঈদ আকন্দ গংরা বাপ-দাদার আমল থেকে বসবাস করে আসছিলেন। তবে এই বসতভিটা ছাড়া অন্য কোনো জমিজমা কিংবা অর্থ সম্পদ ছিল না তাদের। তারা রিকশা-ভ্যান চালিয়ে ও দিনমজুুরি করে দুর্বিষহ জীবনযাপন করে আসছিলেন।
এদিকে, ওইসব ৮ পরিবারের বসতভিটার মালিকানা নিয়ে অপর একটি পক্ষের সঙ্গে আদালতে চলছিল আইনি লড়াই। মামলাটির বাদী ছিলেন একই গ্রামের জনৈক এক ব্যক্তি। এ মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে সম্প্রতি বাদীর পক্ষে রায় দেন আদালত। এ রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ১৭ দিন আগে ওই ৮ পরিবারকে আকস্মিকভাবে উচ্ছেদ করে দেন বাদী গংরা। এসময় ভেঙে ফেলা হয় ঘরবাড়ি। যেন চোখের সামনে নিমিষে শেষ হলো তাদের সহায় সম্বল। করার কিছুই নেই। কারণ, আইনের ঊর্ধ্বে গরিব-ধনী কেউ নয়।
বিদ্যমান পরিস্থিতির শিকার ৮ পরিবারের মানুষেরা এখন বসতভিটা-ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়হীন ও গৃহহীন হয়ে পড়েছে। নতুন করে জমি কিনে অন্য কোথাও ঘরবাড়ি বানাবে এমন সামর্থ্যও নেই তাদের। আপাতত অন্যের জমিতে সেই ভাঙা ঘরের টিন দিয়ে এক চালা ঘর তোলা হলেও, এ ঘরে নেই কোনো বেড়া। তবুও কোনোমতে বসবাস করে আসছে তারা। তাদের মধ্যে অনেকে বাস করছে খোলা আকাশের নিচে। এমনকি ঠিকভাবে দৈনন্দিন রোজগার না থাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তাদের। যেন দুর্ভোগ বা কষ্টের সীমা নেই বাস্তুভিটাহারা মানুষের। ভুক্তভোগী সোনা মিয়া বলেন, রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। এরই মধ্যে হারাতে হলো বাপ-দাদার বাস্তুভিটা। এখন অন্যের জমিতে এক চালা ঝুপড়ি ঘর তুলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দিনযাপন করছি। আরেক ভুক্তভোগী জরিনা বেওয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে স্বামী নইবর রহমান মারা গেছেন। তার রেখে যাওয়া বাস্তুভিটায় কোনোমতে বসবাস করছিলাম। এখন সেই ভিটাটুকুও হারাতে হলো। এখন ঘর তোলার মতো আর কোনো জায়গা-জমিও নেই। এমনকি জমি কেনারও সামর্থ্য নেই। তাই অন্যের জমিতে জরাজীর্ণ ঘরে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, সরকার যদি কোনো খাস জমি বন্দবস্ত দেয়াসহ একটি ঘর তৈরি করে দিতো, তাহলে হয়তো শেষ বয়সে সেখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই হতো। কামারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শামসুল আলম জানান, ইতিমধ্যে ওইসব ৮ পরিবারের মানুষের দুর্গতির বিষয়টি শুনেছি। যা খতিয়ে দেখে সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।

 
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর