× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

জনশক্তি রপ্তানিতে ৩ চ্যালেঞ্জ

প্রথম পাতা

এম এম মাসুদ
৬ মার্চ ২০২১, শনিবার

করোনা মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে আসায় বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিতে মারাত্মক ধস নেমেছে। প্রতিবছর যেখানে ৬ থেকে ৮ লাখ বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে যায়, সেখানে গত বছর গেছে মাত্র ২ লাখ ১৭ হাজার কর্মী। এর মধ্যে এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাইতে বলতে গেলে কোনো কর্মীই যায়নি। উল্টো করোনাকালীন প্রায় ৫ লাখ প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছে। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর বাংলাদেশের বৃহত্তম দুটি শ্রমবাজার মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজার খোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেখানে ফের নতুন করে সিন্ডিকেট চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক শ্রমবাজারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জনশক্তি রপ্তানিতে এমন পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিদ্যমান শ্রমবাজার ধরে রাখার জন্য সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস। এ অবস্থায় চলতি বছর রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে রেকর্ড হলেও আগামীতে জনশক্তি রপ্তানি না বাড়লে আর নতুন বাজার সৃষ্টি না হলে ধস নামার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে মোট ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে যান। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৩৪ হাজার ১২৪ জন। ২০২০ সালে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে মাত্র ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৯ জন। এর মধ্যে মহিলা গেছে ২১ হাজার ৯৩৪ জন।

জনশক্তি রপ্তানিবিষয়ক গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট বলেছে, আগের বছরগুলোর মতো নতুন কোনো শ্রমবাজার উন্মোচিত হয়নি। এ ছাড়া নারী শ্রমিকদের বিদেশ যাওয়ার হারও কমেছে।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, জনশক্তি রপ্তানির ৩টি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। প্রথমত, বন্ধ হওয়া শ্রমবাজার নতুন করে চালু করা। দ্বিতীয়ত, যেসব শ্রমিক দেশের বাইরে আছেন তাদের যেন দেশে ফেরত আসতে না হয়। তৃতীয়ত, যারা দেশে ফেরত এসেছে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। সরকার এই ৩টি বিষয় ভালোভাবে দেখভাল করলে আশা করা যায় আমাদের হারানো শ্রমবাজার ফিরে পাবো।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অদক্ষ শ্রমিকরা যত সহজেই বিদেশের বাজারে প্রবেশ করতে পারছে দক্ষরা তত সহজে পারছে না। কারণ দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর বিষয়টি অনেকটাই ‘কমপ্ল্যায়েন্স’ নির্ভর। তাছাড়া প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই তাদের শ্রমবাজারে যেতে হচ্ছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি তাদের আরো প্রতিযোগিতায় ফেলেছে। এমন পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার এবং বিদ্যমান শ্রম বাজারগুলোতে দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে আরো কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি করেন ফোর-সাইট ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, মহামারির মধ্যে গত নভেম্বরে সৌদি আরবে তার জনশক্তি রপ্তানির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে তার এজেন্সির কাছে সৌদি আরব থেকে ৭০০-৮০০ জন শ্রমিক পাঠানোর চাহিদা আছে।
আরেক রপ্তানিকারক আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা সৌদি আরবে আড়াইশ’র মতো পরিচ্ছন্নতা কর্মী পাঠিয়েছি। আমরা আরো ১ হাজার কর্মীর খোঁজ করছি। কিন্তু আবেদনকারীর সংখ্যা অত্যন্ত স্বল্প।

করোনা পরবর্তী বাংলাদেশিদের জন্য পুনরায় শ্রমবাজার খুলে দেয়া দেশগুলো হলো- সৌদি আরব, ওমান, কাতার, জর্ডান ও সিঙ্গাপুর। বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের অন্যতম গন্তব্যস্থল সৌদি আরব। ওমানের শ্রমবাজার পুনরায় খোলার পর ৩ হাজার ৬৭৩ জন নিয়োগ পেয়েছেন দেশটিতে।

বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক মহাসচিব আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, বর্তমানে প্রধানত সংযুক্ত আরব আমিরাতেই শ্রমিক পাঠাচ্ছি। এ মাসে দুবাইয়ে ২০০ জন শ্রমিকের চাহিদা আছে। তবে কর্ম সন্ধানীদের কাছ থেকে সন্তোষজনক সাড়া পাওয়া যায়নি।

সিন্ডিকেট: ২০১৭ সালে ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণ করে এক বছরেই কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। ওই সময় কর্মী প্রতি দেড় লাখ টাকা অভিবাসন খরচের কথা বলা হলেও নেয়া হয় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিদেশগামী কর্মীদের মেডিকেলে আনফিট দেখিয়েও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। এক্ষেত্রে দায়ী কারো কোনো সাজা হয়নি।

বায়রা সিন্ডিকেট নির্মূল ঐক্যজোটের দাবি- ২০১৭-১৮ সালে ১০টি এজেন্সির মাধ্যমে মাত্র ২ লাখ ৫৯ হাজার কর্মী পাঠানো হয়। অথচ ১৫ লাখ কর্মী পাঠানোর সুযোগ ছিল। ফলে দেশ হারায় বিপুলসংখ্যক কর্মী পাঠানোর সুযোগ।
বিএমইটি তথ্য অনুযায়ী, গত প্রায় দুই বছর ধরে কর্মী রপ্তানি প্রায় বন্ধ রয়েছে মালয়েশিয়ায়। ২০১৭ সালে দেশটিতে যান ৯৯ হাজার ৭৮৭ জন কর্মী। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে যান প্রায় ১ লাখ ৭৬ হাজার। তবে কর্মী রপ্তানির নামে দু’দেশের মধ্যে গড়ে ওঠে একটি চক্র। বাংলাদেশি ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির গঠিত ওই চক্র হাতিয়ে নেয় কয়েক হাজার কোটি টাকা।

বিশ্বের ১৭৩টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির চুক্তি রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে জনশক্তি রপ্তানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ছাড়া ইউরোপের হাতেগোনা কয়েকটি দেশে। অপ্রাতিষ্ঠানিক হিসাব অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশে ১ কোটির বেশি বাংলাদেশি কর্মরত আছেন।



 
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর