জরিমানা মওকুফের প্রতিশ্রুতিতে একটি বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানের মালিকের কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ উঠেছে সাভার কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের আশুলিয়া সার্কেলের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে। তিনি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ দাবি সংক্রান্ত কথোপকথনের একটি ভিডিও রয়েছে ওই মালিকের কাছে। সাভার এডভার্টাইজিং ফার্ম-এর মালিক ভুক্তভোগী মতিউর রহমান অভিযোগ করেন, সরকারের সকল নিয়ম মেনে স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করতে প্রতিষ্ঠানের নামে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন করা হয়। আমার জানা মতে বছর শেষে রিটার্ন দাখিল করতে হয়। প্রায় সাত মাস পর ভ্যাট অফিস থেকে মুঠোফোনে প্রতিষ্ঠানের রিটার্ন দাখিল করতে বলার পরদিন ভ্যাট কার্যালয়ে যাই। টানা দুইদিন টেবিলে টেবিলে ঘুরে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইদুর রহমানের কাছে যাই। তিনি বলেন, সময়মতো রিটার্ন দাখিল না করা হলে গ্রাহককে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।
সে অনুযায়ী ৫ মাসে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছে বলে জানতে পারি। এ ঘটনায় জরিমানা মওকুফের জন্য অনুরোধ করা হলে জরিমানার অর্ধেক ২৫ হাজার টাকা ঘুষ হিসেবে দাবি করেন ওই কর্মকর্তা। অন্যথায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার হুমকি দেয়া হয়। বাধ্য হয়ে তার সঙ্গে দেন-দরবার করে ২০ হাজার টাকা দিতে রাজি হই যার কথোপকথনের ভিডিও মুঠোফোনে ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু টাকা ম্যানেজ করতে না পারায় তার সঙ্গে আমি সাক্ষাৎ করতে পারিনি। সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইদুর রহমান প্রায়ই মুঠোফোনে ফোন দিয়ে মামলা দায়েরের হুমকি দিয়ে আসছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সাইদুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানের মালিক আমার কাছে আসার পর আমি তাকে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে বলেছিলাম। তার কাছে কোনো অনৈতিক দাবি করা হয়নি। ঘুষ দাবির ভিডিও প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কথোপকথনগুলো ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক বলেন, সাভার ভ্যাট অফিসে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন অজুহাতে গ্রাহকদের কাছ থেকে ঘুষ আদায় করেন কিছু অসাধু কর্মকর্তা। ভ্যাটের কাগজপত্র হালনাগাদ না থাকলে কোনো টেন্ডারে অংশ নেয়া যায় না এমন সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভ্যাট খুঁটিনাটি ভুলের জন্যও গ্রাহকদের কাছ থেকে ঘুষ আদায় করেন তারা। কাপড় বিক্রেতা জুয়েল মোল্লা বলেন, শপিং মল, মুদি দোকান, মিষ্টি বিক্রেতা, সুপার মার্কেটসহ অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংক লোন নিয়ে ব্যবসা করে থাকে। এজন্য ভ্যাটের হালনাগাদ কাগজপত্র খুব জরুরি। ব্যাংক লোনের কথা চিন্তা করেই ভ্যাট অফিসের কর্মকর্তাদের অনৈতিক চাহিদা পূরণ করতে বাধ্য হন ব্যবসায়ীরা। ঘুষ দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে, সাভার কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ও ডেপুটি কমিশনার খায়রুল আলম বলেন, এমন কোনো বিষয় আমার জানা নেই। তবে যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করেন তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।