বাংলাদেশে বৈদেশিক বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে কাজ করা ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান (এনবিপি) বাংলাদেশে এর একটি শাখা বন্ধ করার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেয়েছে। এনবিপি পাকিস্তানের একটি প্রধান বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং এর সদরদপ্তর করাচীতে অবস্থিত। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক হওয়া সত্বেও এটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। বাংলাদেশে এর চারটি শাখা রয়েছে। চট্টগ্রাম ও সিলেট এবং রাজধানীর গুলশান ও মতিঝিলে এসব শাখা অবস্থিত। এর মধ্যে সিলেটের সোবহানীঘাটে অবস্থিত শাখাটি বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের প্রধান কার্যালয়ের কাছ থেকে এনবিপি-বিডি অনুমোদন পেলো।
ডেইলি পাকস্তানের এক প্রতিবেদনে এসব নিশ্চিত করে বলা হয়ঃ আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রে শাখাটি ব্যাংকটির জন্য কোনো উপকারে আসছিলো না (যে কারণে শাখাটি খোলা হয়েছিল) যার ফলস্বরূপ শাখাটির কার্যক্রম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা নেন।
জানা গেছে, সিলেটে ১৩ বছর কার্যকর থাকার পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। সিলেট শাখাটি ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে ব্যাংকের তৃতীয় শাখা হিসেবে খোলা হয়েছিল। ওই শাখাটি ছাড়া বাকি তিনটিতেও বর্তমানে ব্যাংকটির তেমন কোনো গ্রাহক নেই বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালে পাকিস্তানের করাচীতে এনবিপির যাত্রা শুরু হয়।
বর্তমানে প্রায় দেড় হাজার শাখা রয়েছে ওই দেশে। পাশাপাশি ২১টি দেশেও শাখা রয়েছে ব্যাংকটির। বাংলাদেশে আগে থেকেই ব্যাংকটির শাখা থাকলেও স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের হাতছাড়া হয় এনবিপির শাখা। এ সময় এনবিপির সব সম্পত্তি ও বিনিয়োগ অধিগ্রহণ করে সোনালী ব্যাংক। এরপর ব্যাংকটি রাজধানীর মতিঝিলে শাখা খুলে বাংলাদেশে আবার কার্যক্রম শুরু করে ১৯৯৪ সালের আগস্টে। দ্বিতীয় শাখাটি বন্দর নগরী চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে উদ্বোধন করা হয়েছিল। সিলেটের পর ব্যাংকের চতুর্থ শাখাটি রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত।
২০১৭ সালে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খবর বের হয়- ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ৯৫ শতাংশ এরই মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে। আটকে গেছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার আমানত। এই অবস্থায় বছরের পর বছর লোকসান গুনছে ব্যাংকটি। খেলাপি হয়ে পড়া ১ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকার গ্রাহকদের খুঁজেও পাচ্ছে না ব্যাংকটি। তাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রমালিকানাধীন এই বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের সুবিধাভোগী কারা, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
পাকিস্তানের গণমাধ্যম দ্য ডন-এর এক প্রতিবেদনে তখন বলা হয়েছিল- হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী এনবিপির বাংলাদেশ অংশের দুর্নীতির দায়ে ব্যাংকটির সাবেক প্রেসিডেন্ট সাঈদ আলী রাজা, এনবিপি বাংলাদেশ শাখার সাবেক প্রধান কর্মকর্তা ইমরান বাট ও সাবেক মহাব্যবস্থাপক ওয়াসিম খানকে গ্রেপ্তার করেছে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (এনএবি)। এনএবির কর্মকর্তাদের বরাতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়- কমপক্ষে ১৬ জন ব্যাংকটির নানা কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে সলিমুল্লাহ, প্রদীপ, কাজী নিজামসহ কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিকও রয়েছেন। এসব ব্যক্তির কারণে পাকিস্তানের জাতীয় রাজস্বের সাড়ে ১৮ কোটি ডলার (১ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা) ক্ষতি হয়েছে বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়।
এখন প্রায় সাড়ে তিন বছর পর বাংলাদেশে ব্যাংকটির একটি শাখা বন্ধ করার কারণ হিসেবে এসব অভিযোগকেই বড় করে দেখছেন সচেতন মহল।