বিনোদন বিষয়ক সিনিয়র সাংবাদিক মোশাররফ রুমী চলে গেছেন গতকাল। এদিন বিকেলে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বেশ কিছুদিন থেকে তিনি অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তার চলে যাওয়ায় বিনোদন অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময় অবধি দৈনিক মানবজমিনের বিনোদন বিভাগের প্রধান হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। এদিকে অনেক শিল্পী ও সাংবাদিক তাকে স্মরণ করছেন নিজেদের মতো করে। অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন ছিলেন মোশাররফ রুমী। এ অভিনেতাও ফেসবুকে স্মৃতিচারণ করে পোস্ট দিয়েছেন।
চঞ্চল চৌধুরী লিখেন, মৃত্যু এখন খুব স্বাভাবিক সংবাদে পরিনত হয়েছে। গত এক বছরে এত পরিচিত আর আপন জনের মৃত্যু সংবাদ শুনতে হয়েছে যে, মৃত্যু এখন সহজতর। তবে কিছু মানুষের চলে যাওয়া ভাবনার পিঠে অনেক বড় ধাক্কা দিয়ে যায়। গতকাল প্রথম যখন ফেসবুকে দুঃসংবাদ টা দেখি, মোটেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। রুমী ভাই নেই...। পেশাগত কাজের কারনেই অনেক সাংবাদিকের সঙ্গেই আমার শ্রদ্ধা, আন্তরিকতা এবং ভালোবাসা কিংবা স্নেহের সম্পর্ক। কিন্তু রুমী ভাইয়ের সাথে সম্পর্কটা ছিল একেবারেই ভিন্ন। আমি তখন সবে মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের ছাত্র। খিঁলগাও তিলপা পাড়াতে আমার বড় ভাই,আমি আর বড় ভাইয়ের এক বন্ধু একসাথে থাকি।ভাই আর ভাইয়ের বন্ধু ডাক্তার, তখন তারা ব্যাচেলর। তিনজনই রুটিন করে নিজেরাই রান্না করে খাই। তখন রুমী ভাইয়েরাও ঐ একই বাসায় ভাড়া থাকতেন। রুমী ভাইয়ের আম্মা মাঝে মধ্যেই রাত বিরাতে, আমার ভাইকে দিয়ে চিকিৎসা নিতেন। ভাই যেহেতু কোন ভিজিট নিতো না, সে কারনে খালা আম্মা প্রায়ই সুন্দর সুন্দর রান্না করে রুমী ভাইকে দিয়ে পাঠিয়ে দিতেন। খালা আম্মার হাতের রান্না ছিল অসাধারন ।
খালা আম্মা যেদিন রান্না করে পাঠাতেন, সেদিন আমরা ঈদের আনন্দ উদযাপন করতাম। কষ্ট করে আমাদের আর রান্না বান্না করতে হতো না।
এভাবেই রুমী ভাই আমাদের খালাতো ভাই হয়ে গেলেন। অনেক পরে যখন আমার অভিনয়ের টুকটাক সুনাম ছড়াতে লাগলো তখন রুমী ভাইয়ের দাবীই ছিল অন্যরকম। কোথাও কোন অনুষ্ঠানে দেখা হলেই সবাইকে বলতেন, চঞ্চল আমার খালাতো ভাই। পত্রিকায় আমার অনেক ইন্টারভিউ করেছেন রুমী ভাই। মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হতো। আমি জিজ্ঞাস করতাম, কেমন আছেন খালাতো ভাই? রুমী ভাইয়ের অভিমানী উত্তর,
একবারও তো খবর নাও না মিয়া। এখন তুমি অনেক বড় স্টার, আমাগো কথা কি তোমার মনে থাকে? যাই হোক, আম্মা তোমার কথা প্রায়ই বলে। তোমাকে দেখতে চাইছে, সময় পাইলে আম্মাকে একটু দেইখা আইসো।
রুমী ভাইয়ের কাছে খালা আম্মা ছিলেন সমস্ত পৃথিবী। এতো কথা আমি কেন বলছি? রুমী ভাইয়ের মৃত্যু আমাকে অন্য এক স্মৃতিতে নিয়ে গেল। ভালো থাকবেন খালাতো ভাই.। খালা আম্মার কাছে থাকবেন।