× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

করোনার উর্ধ্বগতি ঠেকাতে দ্রুততার সাথে টিকা প্রদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রয়োজন

মত-মতান্তর

গাজী মিজানুর রহমান, সাবেক সিভিল সার্ভেন্ট এবং লেখক
১০ মার্চ ২০২১, বুধবার

করোনার প্রতিষেধক টিকা দেয়া শুরু হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের একজন স্বাস্থ্যকর্মীর টিকা নেয়া দৃশ্য অন্তর্জালের নানা জায়গায় ঘুরে ফিরে আসে। তিনি আঙ্গুল দিয়ে যদি ‘ভি’ চিহ্ন না দেখাতেন, তাহলে মনে হতো চার-পাঁচজন মানুষ চেপে ধরে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে ইঞ্জেকশন দিচ্ছেন। সারা দেশের মানুষ দেখবে, এটা একটা বিরল সুযোগ- এই বিবেচনায় সেদিন ওই ছবি তোলার সময় অন্যেরা ছবিটার ভাগীদার হতে চেয়ে তাকে ঘিরে ধরেছিলেন। কিন্তু টিকা দেয়া-নেয়ার এই আগ্রহ প্রথম এবং দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বেশ ভালো থাকলেও তৃতীয় সপ্তাহে এসে তাতে ভাটা পড়েছে ।
সপ্তাহ-ভিত্তিক টিকা নেয়ার তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১ম সপ্তাহে ৭,৩৬,৬৮০ জনকে টিকা দেয়া হয়। দ্বিতীয় সপ্তাহে ১৫,৭১, ৪৭৭, তৃতীয় সপ্তাহে ৮,০২,৩৬৮, এবং চতুর্থ সপ্তাহে ৫,৭১,৬২৭ জন টিকা নিয়েছেন। এভাবে ৭ই মার্চ পর্যন্ত সর্বমোট ৩৬,৮২,১৫২ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে । দ্বিতীয় সপ্তাহে ১৫ লাখ ৭১ হাজার ডোজ টিকা দেয়ার সাফল্য আর ধরে রাখা যায়নি ।
বিবিসি নিউজ বাংলা তাদের রিপোর্টে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে জানিয়েছিল যে, টিকা দেয়া কর্মসূচি শুরুর পর দুই সপ্তাহে ৬০ লাখ ডোজ টিকা দেয়া হবে। এখন দেখা যাচ্ছে, এক মাসেও সেই লক্ষ্য অর্জিত হয়নি । পরিকল্পনার সাথে বাস্তবতার গ্যাপগুলো কোথায় তা ভেবে দেখতে হবে ।
বাংলাদেশের অনেক মানুষ গুজবে একটু বেশি বিশ্বাসী। তারা অনেকক্ষেত্রে কিছুটা সন্দেহবাদীও বটে। আবার হুজুগের কারণে তাদের অনেকেই অতিরিক্ত উৎসাহী হলে, হুজুগ কেটে গেলে আবার পুনরায় নিরুৎসাহী হয়ে যায়। এগুলো সবই শিক্ষায় পশ্চাতপদতার কারণ থেকে উদ্ভূত সিনড্রম। এই জনসমষ্টিকে উদ্বুদ্ধ করতে হলে উন্নত দেশের জনগণের জন্য প্রযোজ্য পরিকল্পনার অতিরিক্ত কিছু পদক্ষেপ নিতে হয়। প্রশাসন সেরকম কিছু কাজ করেছে, তা অস্বীকার করা যায় না। উদাহরণ সরূপ বলা যায়, বয়সের সীমা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৪০-এ নিয়ে আসার এবং টিকা-কেন্দ্রে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে গেলেই তাৎক্ষণিক নিবন্ধন করার সুযোগ দেয়ার কথা। এর জন্য টিকা কেন্দ্রে মানুষের উপস্থিতি বেড়েছিল। কিন্তু দেখা গেল, উপস্থিত মানুষদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে অনলাইন নিবন্ধনকারীদের এসএমএস পাঠিয়ে তারিখ দিতে বিলম্ব হয়ে যাচ্ছিল। ফলে সেখানে নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হলে গতি স্লথ হয়ে এলো। দেখা যায় যে, জেলা পর্যায় পর্যন্ত টিকা কেন্দ্রে ভিড় বেশি থাকায় তাৎক্ষণিক নিবন্ধন প্রক্রিয়া্র ফলে অনলাইন নিবন্ধনকারীদের টিকা নেয়ার দিন-তারিখ পিছিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ের টিকা কেন্দ্রে যেহেতু গ্রামের মানুষ আসে, এবং তাদের অনলাইনে আবেদন করার পারদর্শিতার অভাব আছে, তাদের আগ্রহ সৃষ্টি করার জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে তাৎক্ষণিক নিবন্ধনের জন্য স্বেচ্ছাসেবী নিয়োজিত করে এ কাজটি করা যেতে পারে। এতে অনলাইন নিবন্ধনকারীদের সার্ভিস ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে হয় না ।
আগেই বলেছি, সাধারণ মানুষ অনেক কান-কথা শোনে এবং তা কান থেকে কানে প্রবাহিত করে । প্রথম দিনে যখন টিকা কার্যক্রম উদ্বোধন করা হলো, সেদিন নীতিমালা অনুযায়ী অগ্রাধিকার পাওয়া মানুষদেরকে অর্থাৎ চিকিৎসা পেশার এবং আইনশৃঙ্ক্ষলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যসহ অন্যদের টিকা দেয়া হলো। সেদিনই মানুষ বলতে শুরু করলো, ভিভিআইপি মানুষেরা তো টিকা নিলনা! অন্যদের এক-দুই সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করে তারপর তারা নেবেন! তারপর যেই কয়েকজন মন্ত্রী টিকা নিলেন, বিরোধী অবস্থানের কয়েকজন নিলেন, তখন বাতাসটা একটু ঘুরে গেল। ঠিক সে সময়ে জার্মানী এবং ফ্রান্স থেকে একটা ধোঁয়া তোলা হলো যে, অক্সফোর্ড- এর টিকা ৬৫ বছরের উপরের বয়সী মানুষদের কোনো কাজে আসবে না। এসব কারণে কিছু নেতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। পরে জার্মানী এবং ফ্রান্স দুই দেশসহ গোটা ইউরোপে অক্সফোর্ডের টিকার ব্যাপারে (আমাদের দেশে আমদানীকৃত কোভিশিল্ড এই টিকার অন্তর্ভূক্ত ) ৬৫ বছরের অধিক বয়স যাদের তাদের জন্যও স্বীকৃতি মিললো । তখন সব বাধা দূর হলো।
টিকা প্রদানে গতি না আনতে পারলে পরিকল্পনা অনুযায়ী সময়ের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক মানুষকে টিকা দেয়া সম্ভব হবে না। তাই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতি সপ্তাহে মাঠের অবস্থা জানতে হবে। এর মধ্যে মাঠ পর্যায়ের মানুষ কী কী পরামর্শ দেয় , টিকা নেয়া বা না নেয়া সম্পর্কে তাদের অভিমত কি, তা প্রশাসনের উচ্চতর পর্যায় পর্যন্ত গোচরিভূত করার পদ্ধতি থাকতে হবে। আমরা জানি যে সেরকম রিপোর্ট প্রদানের ব্যবস্থা আছে। জেলা প্রশাসকগণ পাক্ষিক ভিত্তিতে যে গোপনীয় রিপোর্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে থাকেন, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে টিকা প্রদান বিষয়ক অনুচ্ছেদ নিশ্চয়ই আছে। এই রিপোর্ট থেকে যদি ধারাবাহিকভাবে মানুষের প্রতিক্রিয়া জানা যায়, তাহলে পরবর্তী পরিকল্পনা গ্রহণের সময় তা থেকে অনেক লাভবান হওয়া যাবে। স্বাস্থ্য বিভাগের আনুষ্ঠানিক অন্য রিপোর্ট তো আছেই। করোনার উর্ধ্বগতি ঠেকাতে দ্রুততার সাথে টিকা দেয়া ছাড়া অন্য আর কোনো ভালো পথ দেখা যাচ্ছে না, কারণ সাধারণ মানুষ নিয়ন্ত্রণ মেনে এবং দূরত্ব বজায় রেখে চলতে এখনো অভস্ত হয়ে ওঠেনি ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর