× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

গৌরব ঐতিহ্যের ১৪৭ বছর

শিক্ষাঙ্গন

আতিক হাসান শুভ
(৩ বছর আগে) মার্চ ১৬, ২০২১, মঙ্গলবার, ১:৪৫ অপরাহ্ন

রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী কবি নজরুল সরকারি কলেজের ১৪৭ পূর্ণ হয়েছে। ইতিহাস ঐতিহ্যের হাজারো স্মৃতির ধারক বাহক ঐতিহ্যবাহী এই কলেজটি। ১৮৭৪ সালের ১৬ই মার্চ তৎকালীন ঢাকা মাদ্রাসা নামে এর সূচনা হয়। চার বার নাম পরিবর্তন হয়ে আজকের এই কবি নজরুল সরকারি কলেজ। ১৪৭ বছর ধরে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য বহনকারী একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এটি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এ কলেজের শিক্ষার্থীদের ছিল অসামান্য অবদান।
বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার জর্জ ক্যাম্বেল এর আমলে 'গধফৎধংধ জবভড়ৎসং পড়সসরঃঃবব' এর অনুমোদনে মহসিন ফান্ডের টাকায় ১৮৭৪ সালে কলকাতা আলিয়া মাদ্রসার মডেলে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে তিনটি নতুন মাদ্রাসা স্থাপন করা হয়। যদিও হাজী মোহাম্মদ মহসিনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নবপ্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাগুলোর নাম দেয়া হয় মহসিনিয়া মাদ্রাসা, তথাপি ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা বহুল পরিচিতি লাভ করে ঢাকা মাদ্রাসা নামে। বৃটিশ শাসনামলে বাংলাদেশে এগুলো ছিল মুসলমানদের জন্য করা প্রথম সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

১৯১৫ সালের ১৬ নভেম্বর এক সরকারি আদেশে মাদ্রাসার ব্যয়ভার বহন করার দায়িত্ব বাংলার সরকারের ওপর ন্যস্ত করা হয়।
১৮৮০ সালে প্রথম অধ্যক্ষ মওলানা ওবায়দুল্লাহ আল ওবায়দীর তত্ত্বাবধানে মুসলিম স্থাপত্যরীতি অনুযায়ী মাদ্রাসা ভবন তৈরি করা হয়।

মাদ্রাসায় সাতটি শ্রেণি ছিল। আরবি বিভাগে শুধু আরবি শিক্ষার্থীরা পড়ত। ইংরেজি বিভাগে (পরবর্তীতে এ্যাংলো পারসিয়ান বিভাগ) ইংরেজি শিক্ষার্থীরা পড়ত। ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মাদ্রাসার ৩৩৮ জন ছাত্রের মধ্যে ২০২ জন ছাত্রই ছিল এ্যাংলো পারসিয়ান বিভাগের। ১৯১৫ সালে সরকার কর্তৃক অন্যান্য মাদ্রাসার মতো নিউ স্কিম পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর প্রেক্ষিতে ঢাকা মাদ্রাসা হাই মাদ্রাসা হয়। ১৯১৬ সালে এ্যাংলো পারসিয়ান বিভাগ আলাদা হয়ে ঢাকা গভঃ মুসলিম হাই স্কুল হয়।

ঢাকা মাদ্রাসা এতোটাই জনপ্রিয় ছিল যে, দূর-দূরান্তের মুসলিম শিক্ষার্থীদের একমাত্র লক্ষ্যই ছিল ঢাকা মাদ্রাসা। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ছাত্র ভর্তি না হওয়ায়, ১৯২৩ সালে ঢাকা মাদ্রাসাকে ইসলামিক ইন্টারমেডিয়েট কলেজে রূপান্তরিত করা হয়।

১৯৫৮ সালের জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সুপারিশে ১৯৬২ সালে মাদ্রাসা তুলে দিয়ে মাদ্রাসার ক্লাসগুলোকে মাধ্যমিক ক্লাসে পরিণত করা হয় এবং ঢাকা মাদ্রাসা পরিচিতি লাভ করে ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজের স্কুল বিভাগ হিসাবে। এরপর ১৯৬৮ সালে কলেজ থেকে স্কুল আলাদা হয়ে গিয়ে নাম হয় ইসলামিয়া সরকারি হাই স্কুল, ঢাকা। কলেজের প্রধান ভবনের নিচতলায় উত্তর-পূর্বাংশের এই স্কুলের কার্যক্রম এখনও চলছে। ১৯৬৮ সালে স্কুল আলাদা হয়ে যাবার পর কলেজের নামও পাল্টিয়ে রাখা হয় সরকারি ইসলামিয়া কলেজ, ঢাকা। ১৯৭২ সালে পুনরায় নাম পরিবর্তন করে ‘কবি নজরুল সরকারি কলেজ’ রাখা হয়। অদ্যাবধি এ নামেই পরিচিত হয়ে আসছে। ১৯৭৪ সালে ১৬৯ জন ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ২১,০০০ জন।

১৯৯২ সাল থেকে কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে ১৬ই ফেরুয়ারি প্রতিষ্ঠানটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কবি নজরুল সরকারি কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্য শহীদ শামসুল আলম হল নামে এটি ছাত্রাবাস রয়েছে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য দুইটি দোতলা বাসও রয়েছে।

পূর্বে শিক্ষাঙ্গনটি ১৮ একর জুড়ে বিস্তৃত থাকলেও বতর্মানে মাত্র ০৩ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একটি খেলার মাঠ। মাঠের চারপাশে রয়েছে নানান প্রজাতির গাছপালা। অরণ্যময় মাঠ- যেখানে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করে। এছাড়া, ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারের পাশে দেয়ালের ওপর পাথরে খোদাই করে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন প্রামাণ্য চিত্র রয়েছে।

কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ প্রতিভাকে বিকশিত করার জন্য রয়েছে বিজ্ঞান ক্লাব। এছাড়া বিএনসিসি, রোভার ও স্কাউট, ডিবেটিং ক্লাব, চেস ক্লাব, ইংলিশ ক্লাব ও সাংবাদিক সমিতি রয়েছে। শিক্ষকরা এখানে মডারেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা বিভাগীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানান প্রতিযোগিতায় বরাবরই সাফল্য অর্জন করছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর