× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

‘মওদুদ আহমদের মতো আর কেউ এতটা নৈর্ব্যক্তিকভাবে রাজনীতির বিশ্লেষণ করেননি’

ফেসবুক ডায়েরি

আলী রীয়াজ
১৭ মার্চ ২০২১, বুধবার

মওদুদ আহমদ-এর জীবনাবসান হলেও তিনি অনেক দিন স্মরিত হবেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান ও জীবন বর্ণাঢ্য বললেও কম বলা হয়। একার্থে বৈপরীত্যে ভরপুরও। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ২০২১ সাল পর্যন্ত তাঁর রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হওয়াই স্বাভাবিক। ১৯৭৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রেই অবস্থান করেছেন, হয় সরকারে কিংবা প্রধান বিরোধী দলের নীতি নির্ধারণে। শাসনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিলো ওতপ্রোত। ফলে তাঁর নেয়া সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপ নিয়ে বিতর্ক না হওয়াই হচ্ছে অস্বাভাবিক, রাজনীতিতে তিনি অকিঞ্চিৎকর ছিলেন না যে তাঁকে এড়িয়ে গিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির দাবাখেলা বোঝা সম্ভব হবে। সেই খেলায় সকলে তাঁর সঙ্গে একমত হবেন এমনও আশা করা যায় না।
এমনকি তাঁর সমস্ত রাজনৈতিক জীবন নিয়েও আমার/আপনার ভিন্নমত, আপত্তি এবং বিরোধিতা থাকতে পারে।
মওদুদ আহমদ কেবল রাজনীতিবিদ ছিলেন না, ছিলেন আইনজীবী। সেটাই তাঁর কর্মজীবনের প্রথম পরিচয়। যারা ইতিহাসের দিকে তাকান তাঁরা জানেন যে, ১৯৬৯ সালে কথিত ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায়’ অভিযুক্তদের পক্ষে যে সব আইনজীবী ছিলেন তিনি তাঁদের একজন। পাকিস্তানি রাষ্ট্রযন্ত্রের সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত চেষ্টার ফসল ছিলো এই মামলা। তিনি তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। স্মরণ করা যেতে পারে যে, স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি নাগরিকদের অধিকারের পক্ষে আদালতে দাঁড়িয়ে ছিলেন রক্ষী বাহিনীর হাতে আটক অরুনা সেনের হয়ে তিনি মামলা লড়েছেন। আইনজীবী হিসেবে তাঁর সঙ্গে যারা কাজ করেছেন- এমনকি যারা তাঁকে রাজনীতির কারণে সমালোচনা করেছেন, তারাও একথা বলেছেন যে, তাঁর কাছে আইনের, যুক্তির অনেক কিছু শেখার আছে। আইনজীবী হিসেবে তিনি যাদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তাঁদের সকলের ব্যাপারেই আপনি- আমি একমত হবো তা নয়। সেই জন্য তাঁর যে সমালোচনা প্রাপ্য সেটা জীবদ্দশায় যেমন জীবনাবসানের পরেও তিনি তা পাবেন। কিন্তু আদালতের প্রাঙ্গণে তাঁর অনুপস্থিতি যে অনুভূত হবে সেটা তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরাও অকুন্ঠ চিত্তে স্বীকার করেন। এইসব নিশ্চয় অনেক অনেক দিন আলোচিত হবে।
কিন্তু যে কারণে মওদুদ আহমদ গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হবেন তা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতি বিষয়ে তাঁর গবেষণালব্ধ বইগুলো। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস পাঠ এবং বোঝার জন্য আমাদেরকে পড়তে হবে  ‘বাংলাদেশ কনস্টিটিউশনাল কোয়েস্ট ফর অটনোমি ১৯৫০-১৯৭১ (প্রকাশকাল – ১৯৭৮); ‘এরা অব শেখ মুজিব’ (প্রকাশকাল ১৯৮৪; বাংলা ভাষ্য ‘শেখ মুজিবের শাসনকাল’); ডেমোক্রেসি এ্যান্ড দ্য চ্যালেঞ্জ অব ডেভেলপমেন্ট (প্রকাশকাল ১৯৯৬); বাংলাদেশ এ স্টাডি অব ডেমোক্রেটিক রেজিম (প্রকাশকাল -২০১২); বাংলাদেশ- ইমারজেন্সি এ্যান্ড আফটারম্যাথ ২০০৭-২০০৮ (প্রকাশকাল ২০১৪)। এই সব আমাদের পাঠের দরকার হয় এই কারণে যে, মওদুদ আহমদ এই সব গ্রন্থে একাডেমিক রাজনীতিবিদ নন। তাঁর বিশ্লেষণ নৈর্ব্যক্তিক। যে কোনও একাডেমিক আলোচনার ক্ষেত্রে যা হয় এক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি; বিতর্কের সুযোগ আছে। কিন্তু এ কথা বলার সুযোগ নেই যে এগুলোতে একাডেমিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব আছে। আমার জানামতে বাংলাদেশের রাজনীতি বিষয়ে তাঁর অন্তত পাঁচটি বই আছে যেগুলোতে ১৯৫০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ের রাজনীতির ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। বাংলাদেশের আরও কোনো রাজনিতিবিদ এতটা নিষ্ঠার সঙ্গে এবং এতটা নৈর্ব্যক্তিকভাবে রাজনীতির বিশ্লেষণ করেছেন কিনা সেটা আমার জানা নেই। তাঁর মৃত্যুতে এ ক্ষেত্রে একটা বড় ক্ষতি হল।

লেখাটি লেখকের ফেসবুক থেকে নেয়া
(লেখক: প্রফেসর, ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র)
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর