× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আইন-শৃঙ্খলা / আইনের প্রয়োগটা পেশাদারিত্বের সঙ্গে হতে হবে

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী

নূর মোহাম্মদ
২৬ মার্চ ২০২১, শুক্রবার

স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের পুলিশ বাহিনীর সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। এক্ষেত্রে তাদের আইনের প্রয়োগটা পেশাদারিত্বের সঙ্গে হতে হবে। স্বাধীনতা বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশিদের জন্য সবচেয়ে বড় একটি অর্জন। একটি পরাধীন অবস্থা থেকে দেশ স্বাধীন হয়েছে। প্রত্যেকটি বড় ঘটনা বা বিষয়ের সঙ্গে আমাদের আশা-প্রত্যাশাগুলো জড়িত। আমাদের স্বাধীনতার একটি বড় বিষয় ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন করা। এরপরে স্বাভাবিকভাবে আমাদের সকলের প্রত্যাশা ছিল পরাধীনতাসহ আমাদের যে দুঃখ-দুর্দশা ছিল এগুলো কমবে। আর্থিকভাবে আমরা লাভবান হবো।
বেকারত্ব দূর হবে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর আমরা অতিক্রম করতে যাচ্ছি। যদি পেছনে ফিরে দেখি তখন উন্নত দেশগুলো আমাদেরকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছে। সেখান থেকে এখন আমাদের মাথাপিছু আয়, প্রবৃদ্ধি, গড় আয়ু বেড়েছে। ১৯৭১ সাল থেকে শুরু করে ২০২১ সাল এই ৫০ বছরে আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোন্‌ অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে? কথা হচ্ছে সবকিছুতেই যদি সন্তুষ্ট হয়ে যাই তাহলে আমাদের সামনে কিন্তু ওভাবে কিছু থাকে না। কিছুটা তো অপ্রাপ্তি থেকেই যায়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমরা যদি সামগ্রিকভাবে চিন্তা করি তাহলে দেখবো আগের তুলনায় আমাদের পুলিশ বাহিনীর সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।

একই সঙ্গে তাদের সুযোগ- সুবিধাও অনেক বেড়েছে। তারপরেও স্বাভাবিকভাবে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা আমরা যে পরিমাণ সেবা পুলিশের কাছ থেকে পাওয়ার আশা করি সেটা কতটুকু অর্জন করতে পেরেছি। ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই এটা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। কিন্তু আমাদের মতো দেশে পুলিশের যে কার্যক্রম সব মিলিয়ে আমরা যে খুব একটা খারাপ অবস্থানে আছি তেমনটা নয়। তবে আরো ডেভেলপমেন্ট এবং ইমপ্রুভমেন্টের দরকার আছে। পুলিশে যারা কাজ করেন তারা বিভিন্ন সময় বলে থাকেন ‘আমরা জনগণের পুলিশ’। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আসলেই আমরা জনগণের পুলিশ হতে পেরেছি? এখন যদি আমরা কোনো থানায় যাই এবং যে মাত্রায় প্রত্যাশা থাকে পুলিশ আমাদের জন্য করবে এটা তাদের (পুলিশের) কাছ থেকে পাচ্ছি কিনা? এটা একটি বিষয়। তারপরেও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি অনেক অপ্রাপ্তি, সমালোচনার মাঝেও পুলিশ কিন্তু এ পর্যন্ত অনেক কাজ করেছে। পুলিশের কার্যক্রমের ভালো দিকটা বলতে গেলে গত কয়েক বছরে দেশে যে জঙ্গিবাদের উত্থান ছিল পৃথিবীজুড়ে আমাদের দেশের পুলিশ কিন্তু এক্ষেত্রে খুব ভালো অবদান রেখেছে।

করোনা মহামারির সময়ও পুলিশ অগ্রভাগে থেকে কাজ করেছে। এক্ষেত্রে মনে করি এগুলো হচ্ছে পুলিশের ভালো এবং ইতিবাচক দিক। খারাপ দিকটা হচ্ছে, যে পরিমাণ আমাদের আশা-প্রত্যাশা ছিল ওই জায়গাটিতে এখনো যেতে পারিনি। হয়তো চেষ্টা করছি। তবে আমাদের মতো দেশে সবকিছুই পুলিশের কাছ থেকে আশা করবেন অর্থাৎ আমরা যারা আশা করবো আমাদের অবস্থানটা কি? পুলিশকে যে পরিমাণ সাহায্য করা দরকার সেটা কতটুকু করছি আমরা! মামলার ক্ষেত্রে প্রায়ই অভিযোগ আসে পুলিশ ভালোভাবে তদন্ত করছে না। এক্ষেত্রে জনগণ হিসেবে আমি কি করছি? যখন পুলিশের কাছে যাই তখন তাদেরকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো দেই বা সত্য তথ্য দিচ্ছি কিনা। আমি যে সাক্ষ্যটা দিচ্ছি সেটা সঠিক দিচ্ছি কিনা। এখানে কিন্তু উভয়েরই দায়বদ্ধতা থাকে। শুধু একপক্ষকে দোষ দিলে হবে না।

নারী নির্যাতনের মামলায় আসামি দিলে সাধারণত জামিন হয় না। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগী ব্যক্তি একজন আসামির স্থানে পাঁচ থেকে ছয় জনকে জড়িয়ে দেয়। পুলিশ আসামি ধরতে গেলে তারা অভিযোগ করে এই মামলার ক্ষেত্রে পুলিশ টাকা খেয়ে প্রভাবিত হয়েছে। যারা মামলার আসামি নয় তাদেরকে ধরে নিয়ে গেছে। এখন এই দুই জায়গায় কিন্তু কাজ করার দরকার আছে। আমরা যদি আরেকটু সচেতন হই তাহলে যে উন্নত দেশের পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলার স্বপ্ন দেখি আমরাও সেই অবস্থানে পৌঁছাতে পারি। এবং পুলিশকে দিয়ে আমরা ওই অবস্থানটা আশা করতে পারি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই আইনটির পক্ষে এবং বিপক্ষে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। আমাদের দেশে এ পর্যন্ত যতগুলো আইন হয়েছে এক্ষেত্রে আইন মেনে চলার চেয়ে প্রয়োগের বিষয়টি কম। মেনে চলাটাই বেশি। এখন যারা আইনের প্রয়োগটা ঘটাবেন তারা কীভাবে করছেন এটা একটি বড় বিষয়। এক্ষেত্রে যেটা দেখি আমাদের দেশে যখন থেকে প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে তখন থেকে এটার অপব্যবহার বেশি হচ্ছে। এখন এটা কমাতে গেলে একটি আইনের দরকার আছে। আমরা বরং এটা বলতে পারি আইনের প্রয়োগটা যাতে ভালো হয় এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে হয়। এ বিষয়টি দেখতে হবে। আমরা যদি রাজনৈতিক অথবা সামাজিকভাবে প্রভাবিত না হয়ে নিরপেক্ষভাবে আইনের প্রয়োগ করি তাহলে মনে হয় অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বিগত বছরগুলোতে ধর্মীয় অনুভূতিতে প্রযুক্তির অপব্যবহার হয়েছে এবং এটা নিয়ে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীসহ অনেকের বাড়িঘরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কাজেই এই ধরনের (ডিজিটাল) একটি আইন যদি না থাকে তাহলে এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব কঠিন। এক্ষেত্রে আইনের চেয়ে আইনের প্রয়োগটা অনেক বড় বিষয়। এদিকে আমরা যদি একটু যত্নবান এবং সচেতন হই তাহলে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

লেখক: পুলিশের সাবেক আইজিপি ও সংসদ সদস্য
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর