× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

না রী অ ধি কা র /কাঙ্খিত স্বাধীনতা আজও আসেনি

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী

সালমা আলী
২৬ মার্চ ২০২১, শুক্রবার

বৃটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯’র গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ও ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ, সেদিন জীবন বাজি রেখে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের সর্বস্তরের নারীরাও। তাদের ত্যাগ ও আত্মবিসর্জনে রচিত হয় বাংলার স্বাধীনতার রক্তিম ইতিহাস। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে সকল নারীরাও স্বপ্ন দেখে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি সক্রিয় অংশগ্রহণ। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও নারীরা কি অর্জন করেছে সেই কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা?
স্বাধীনতার ৫০ বছরে নারীদের অর্জন উল্লেখযোগ্য। আজকের নারীরা বৈমানিক হিসেবে আকাশপথে নারীর পদচারণা, এভারেস্টের চূড়ায় বাংলাদেশের নারীদের শক্তি সামর্থ্য ও সক্ষমতা প্রকাশ থেকে শুরু করে কৃষি, অর্থনীতি, সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের অর্জন প্রশংসনীয়। উপরন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী বর্তমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, নারী স্পিকার, মন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও নারীদের স্বাধীনতা আজ কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে নেই।
দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী- তথাপি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় অধিকার বিষয়ে নারীদের অবস্থান নগণ্য।
নারীদের কার্যক্রমগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে। নারীরা সমাজ, সংসার, রাজনীতি সর্বক্ষেত্রেই পুরুষদের পাশাপাশি কাজ করতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হয়ে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তাই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা এখনো শৃঙ্খল মুক্ত হতে পারেনি। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিকের সমঅধিকার ভোগ করার কথা থাকলেও বাংলাদেশের নারীরা পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্রে মানসিক, শারীরিক, অর্থনৈতিক ভাবে চরম লঙ্ঘন ও বৈষম্যের শিকার।
“জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স-২০১৭” অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শিক্ষা ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি করলেও নারীর অধিকার নিশ্চিতকরণ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট পিছিয়ে আছে ‘যানিচের’ আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা: স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কারণে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ব্যাহত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় বাংলাদেশে সংসদে ৩৫০ আসন থাকলেও মাত্র ২২টি আসনে নারীরা সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। যদিও নারীদের জন্য ৫০টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের প্রতি বৈষম্যতা: বাংলাদেশের শুরু থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের প্রতি বৈষম্য লক্ষণীয়। “টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)” অনুযায়ী সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলা থাকলেও শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিতদের বেশির ভাগই নারী। বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নারীদের ভর্তির হার ছেলেদের তুলনায় শতকরা ৩৫ জনের চেয়ে কম।

চিকিৎসাক্ষেত্রে নারীদের প্রতি বৈষম্যতা: স্বাধীনতার পরবর্তী বাংলাদেশে চিকিৎসাক্ষেত্রে নারীদের প্রতি চরম বৈষম্যতা পরিলক্ষিত হয়। নারীদের এই বৈষম্যের সূত্রপাত তার ঘর থেকে শুরু হয়। চিকিৎসার ক্ষেত্রে পরিবারে নারীদের তুলনায় পুরুষরা প্রাধান্য পায়। বাংলাদেশের নারীদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন নিরাপদ সেবা থেকে বঞ্চিত। দেশের প্রায় অর্ধেক নারীকেই নিজ গৃহে সন্তান প্রসব করতে হয়- যার ফলশ্রুতিতে তারা দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় ভুগে এবং অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এমন কি সন্তান ধারণের ক্ষেত্রেও পুরুষের সিদ্ধান্ত প্রাধান্য পায়।

পারিবারিক সহিংসতা: একটি সমীক্ষায় প্রকাশ, বাংলাদেশের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ বিবাহিত নারীরা জীবনে কোনো না কোনো ভাবে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়। শতকরা ৬০ ভাগ নারীর ক্ষেত্রে ১৮ বছর বয়সের পূর্বেই পারিবারিক বা সামাজিক কারণে বাল্যবিবাহের শিকার হয়। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক “বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন- ২০১৭” করা হলেও আশানুরূপ সুফল পাওয়া যায়নি।

সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের প্রতি বৈষম্যতা: স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও বিশেষ ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন অর্জিত হলেও পরিবারে ও সমাজে এখনো নারীরা স্বাধীন ভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না বা তাদের সিদ্ধান্ত পরিবারে বা সমাজে গ্রহণযোগ্যতা পায় না।
অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণে বৈষম্য: স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকা সচল রাখার জন্য (কৃষি, পোশাক শিল্প, কলকারখানা এবং সরকারি- বেসরকারি সংস্থায় কাজের মাধ্যমে) নারীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করলেও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো অধিকার ভোগ করতে পারে না।
মানব জীবনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আর সমাজের ক্রমবিকাশ বিশ্লেষণে এটা স্পষ্ট যে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারী-পুরুষের অসম সম্পর্ক দূর করে নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা আজ সময়ের বড় দাবি। সমঅধিকারের দাবি আজ বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত। অন্য দিকে নারী-পুরুষের মাঝে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করে নারীকে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক তথা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমঅধিকার প্রদানের প্রত্যাশী।

নারীর স্বাধীনতা অর্জনে নিম্নোক্ত সুপারিশসমূহ বিবেচনা করা যেতে পারে:
মানসিক ও সামাজিক পরিকাঠামোর ইতিবাচক পরিবর্তন।
সরকারের সেবাসমূহের ন্যূনতম স্ট্যান্ডার্ড তৈরি ও বাস্তবায়ন।
জেন্ডারভিত্তিক সমস্যা চিহ্নিত করে এর যথাযথ সমাধান নিশ্চিতকরণ।
নারীর অর্র্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিতকরণ। নারী সক্রিয় ভাবে রাজনীতিতে আসতে পারছে না শুধুমাত্র অর্র্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী নয় বলে, যদিও তারা রাস্তায় আছে।
নারীদের আওয়াজ তুলতে হবে, দরজায় ধাক্কা দিতে হবে বারংবার,অধিকার আদায়ে। নারীদের প্রতি বৈষম্য সমূহও এর উৎস মূল চিহ্নিত করে সমাধান করতে হবে। রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার কেউ কি নারীর হাতে সম্পদের প্রকৃত মালিকানা হস্তান্তর করে?
নারী শৈশব, কৈশোর, যৌবন, মধ্যবয়স পুরো জীবন ধরে শ্রম দেয়। প্রতিটি গৃহবধূ, মা পরিবারে দৈনিক গড়ে ১৮ ঘণ্টা শ্রম দেন সে তুলনায় মূল্যয়িত হচ্ছেন না। নারী তার আয় রোজগারের উপর নিয়ন্ত্রণ পায় না।
এদেশে জন্ম হয়েছিল নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি?
এদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি নারী, তাদেরকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব। তাই দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ আবশ্যক।

লেখক: মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর