× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সাংবাদিকতা / একজন সাংবাদিকের নোট বই থেকে

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী

সিরাজুল ইসলাম কাদির
২৬ মার্চ ২০২১, শুক্রবার

বাংলাদেশ ব্যাংকে ২০১৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি এক অবিশ্বাস্য ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ইন্টারনেট হ্যাকাররা ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেদ করে নিউইয়র্কে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গচ্ছিত আমানত থেকে প্রায় ১০০ কোটি ডলার চুরির অপচেষ্টা চালায়। অবশ্য হ্যাকাররা সুইফট’র (SWIFT) মাধ্যমে ৩৫টি ট্রানজেকশনের পর ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নিতে সমর্থ হয়।

এই অপরাধ সংঘটিত হওয়ার কিছুদিন পর বিষয়টি সম্পর্কে সাধারণ মানুষ অবগত হতে পারে। এই সময় রয়টার্সের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ব্যুরো প্রধান পারিতোষ বনসাল আমাকে এই বিষয়ের উপর সুগভীর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করার জন্য পরামর্শ দেন। এটি ছিল আমার জন্য সম্পূর্ণ এক নতুন বিষয়। আমি খুব দ্রুত চিন্তা করে নিলাম। ভেতরে ভেতরে কিছু কৌশল মনের মধ্যে গেঁথে নিলাম- বাংলাদেশ ব্যাংকে আমার যে বেশ কিছু বিশ্বাসযোগ্য সংবাদের উৎস (Source) রয়েছে তাঁদেরকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়। আমি পরিকল্পনা অনুযায়ী এক এক করে সকলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করলাম।
কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে এক এক করে সকলেই এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে শীতল আচরণ করলেন। প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল আমার জন্য এক নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা। গত কয়েক দশক ধরে এঁদের সঙ্গে আমার এক চমৎকার অনবদ্য আস্থার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তাঁরা কেউ কখনো আমাকে নিরাশ করেননি। তিল তিল করে যত্ন নিয়ে আমি এই সম্পর্ক শুধু গড়ে তুলিনি, তাকে লালন করে অটুট বাঁধনে দৃঢ় করে রেখেছি। আমি যতটা কঠিন হবে বলে ভেবেছিলাম এই সংক্রান্ত তথ্য উদঘাটনে এখন মনে হচ্ছে বাস্তবে তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি এখন।

হতাশায় যখন ভারাক্রান্ত তখন হঠাৎ করেই একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কথা মনে পড়ল। বহু বছরের সম্পর্ক। এক সময় তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন। রয়টার্সকে সব সময় গভীর আস্থা ও মর্যাদার সঙ্গে বিবেচনা করেন। তিনি এখন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে সরাসরি কাজে যুক্ত। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই চৌর্যবৃত্তির আদ্যপান্ত সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল। বলছি মোহাম্মদ আল্লাহ মালিক কাজেমীর কথা। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক এবং গভর্নরের উপদেষ্টার পদে থেকে পরিবর্তিত ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে আমার বহু বছরের আন্তরিক ও নিবিড় সম্পর্ক। অত্যন্ত ব্যস্ততার মধ্যে থাকলে তিনি ব্যক্তিগত সহকারীর মাধ্যমে তা আমাকে জানিয়ে দেন এবং পরে সুযোগমত ফোন করে কি প্রয়োজন তা আন্তরিকতার সঙ্গে জানতে চান। সম্পর্কের এই নিবিড় বাঁধনের উপর ভরসা করে তাঁকে ফোন করলাম। তিনি আমার ফোনে সাড়া দিয়ে খুব সংক্ষিপ্তাকারে কথা বললেন। আমি তাঁকে আমাকে মাত্র ৩০ মিনিটের জন্য সময় দিতে অনুরোধ জানালাম মুখোমুখি কথা বলার জন্য। কারণ বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং ফোনে এই বিষয়ে তথ্য আদান প্রদান মোটেই সঙ্গত নয়। তিনি আমার সঙ্গে একমত হয়ে সাক্ষাৎকার দিতে সম্মত হলেন।

আমার মত যারা সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত তাঁরা হৃদয়ঙ্গম করতে পারবেন কাজেমী ভাইয়ের এই সম্মতি আমার জন্য কত বড় উপশম ছিল ঐদিন, ঐ সময়ের বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে। আমি আর সময় নষ্ট করলাম না। এই মুহূর্ত আমার জন্য আনন্দের। আমি দ্রুত তাঁর অফিসে ছুটলাম।

আমরা দু’জন মুখোমুখি বসলাম এবং দু’জন দু’জনার কুশল বিনিময় করলাম। কাজেমী ভাইর কোমল এবং স্বভাবজাত অনুচ্চ কন্ঠ। ‘বলুন কিভাবে আমি আপনাকে তথা রয়টার্সের সাহায্যে আসতে পারি?’ আমি স্মিত হাসি মুখে তাঁর দিকে তাকালাম। সংক্ষেপে আমার উদ্দেশ্য বললাম। আমি তাঁকে খুব হিসাব করে প্রশ্ন করলাম-যাতে অনেক কষ্টে পাওয়া আমার এই একমাত্র ভরসার জায়গাটা হাত থেকে ছুটে না যায়। আমি প্রশ্ন করার ব্যাপারে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম এই ভেবে যে পাছে আমার প্রশ্নের ধরনে তিনি ভীত না হয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের একটি পাঠ্য ছিল। Keith Davis’i Human Behaviour at Work. সেখানে সাক্ষাৎকার গ্রহণের কিছু রীতিমালা ছিল। শুরুতে সাক্ষাৎকারদাতাকে সহজ করে নেয়ার জন্য সহজ সরল প্রশ্ন করা এবং ক্রমশ বিষয়বস্তুর গভীরে প্রবেশ করা। এমনভাবে গভীরে প্রবেশ করা যেন তিনি প্রশ্নের তরঙ্গমালায় বিদ্ধ না হয়ে অবলীলায় তাতে অবগাহন করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। তাঁর ভেতরের দরোজা যেন আপনা আপনি অবারিত হয়।

আমি কাজেমী ভাইকে আশ্বস্ত করলাম এখানে তাঁর এই কক্ষে আমাদের মধ্যে যে কথা-বার্তা হবে, তথ্যের বিনিময় হবে তার মধ্যে শুধু প্রাসঙ্গিক বিষয়সমূহ আমি আমার প্রতিবেদনে ব্যবহার করবো। কোনভাবেই এই প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তথ্যের উৎস হিসেবে তাঁকে তুলে আনবো না। আমি লক্ষ্য করলাম, শব্দ চয়ন এবং প্রশ্নের রীতিকলা তাঁর মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি ফিরিয়ে আনল। তিনিও ধীরে ধীরে আমার সঙ্গে কথোপকথনে স্বাভাবিক হতে শুরু করলেন। তিল তিল করে গড়ে তোলা এই সম্পর্ককে আমি কোনভাবেই অমর্যাদা করবো না। রয়টার্সের আচরণবিধিও তা অনুমোদন করে না। আস্থা সুরক্ষা করা এবং পেশাগত মর্যাদা আমার এবং অবশ্যই রয়টার্সের জন্য সবচেয়ে একটি অগ্রাধিকারযুক্ত নীতি। তিনি আমার প্রতি আস্থা রেখে বলতে শুরু করলেন, “আপনি একজন বয়োজ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। আমি আপনার উপর নির্ভর করতে পারি এবং আপনার লেখনি রীতিকে শ্রদ্ধার চোখে দেখি। কিন্তু মুশকিল হলো রয়টার্স যখন এই প্রতিবেদন প্রকাশ করবে এবং দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে তখন এই ব্যাংকে আমার অনেক সহকর্মী সহজেই অনুধাবন করতে পারবেন যে এই তথ্যের সরবরাহকারী আমি। কারণ এগুলো শ্রেণী বিন্যাস্ত (Classified) তথ্য এবং মুষ্টিমেয় কয়েকজন উঁচু পদের কর্মকর্তাদের কাছেই রয়েছে। তবে আপনি যা জানতে চাইবেন তা আমি আপনার সঙ্গে বিনিময় করবো। কারণ আমি চাই বিশ্ববাসী সত্যটা জানুক। রয়টার্স পৃথিবীর কাছে এই সত্য তুলে ধরুক যে Fed Bank এবং SWIFT-র সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা নাজুক এবং ভঙ্গুর।

আমি ভরসা পেয়ে প্রথম প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম: “আপনি কি হ্যাকিংয়ের পুরো গল্পটা শুরু থেকে আমার কাছে তুলে ধরবেন- অন্তত আপনি যতটা জ্ঞাত?”

একজন সাংবাদিক কোন বিষয়ের উপরই বিশেষজ্ঞ নন। সাংবাদিকদের জন্য তাই প্রচলিত প্রবাদ হচ্ছে: Jack of all trades, master of none. কাজিম ভাই এই সত্য উপলব্ধি করে পুরো গল্পটা সহজ করে, কোন টেকনিক্যাল পরিভাষা বা শব্দ ব্যবহার না করে প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ণনা করে গেলেন। আধা ঘণ্টা নয়- আমরা প্রায় দুই ঘণ্টা এক অন্তরঙ্গ পরিবেশে আলোচনা চালিয়ে গেলাম। আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট। রয়টার্স সরবরাহকৃত নোট বই তখন পেশাগত তথ্যে সমৃদ্ধ। অন্তত সেই সময়ের জন্য নিজেকে পৃথিবীর একজন আত্মতৃপ্তি পূর্ণ মানুষ হিসেবে ভাবতে ইচ্ছে করল।

আমি দ্রুত অফিসে ফিরে এলাম। আর সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই। গভীর রাত পর্যন্ত অফিসে থেকে কাজ করলাম। মূল উদ্দেশ্য যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন রচনা করে দক্ষিণ এশিয়ার ব্যুরো প্রধান পারিতোষ বনসালের কাছে পাঠানো। আমি রাতেই প্রতিবেদনের খসড়া চূড়ান্ত করে তাঁর কাছে পাঠালাম। তিনি বেশ যত্ন সহকারে দীর্ঘ সময় নিয়ে তাঁর সুদক্ষ হাতে সম্পাদনা করলেন। তাঁর সম্পাদনায় প্রতিবেদনটি এক নতুন ব্যঞ্জনায় ঝংকৃত হলো। তিনি প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক পাঠক গোষ্ঠীর উদ্দেশে প্রকাশ করার আগে আমার কাছে পাঠালেন এবং সংক্ষিপ্ত ই-মেইলে তাঁর সম্পাদিত প্রতিবেদনে মনোযোগ সহকারে চোখ বুলানোর জন্য পরামর্শ দিলেন। একজন শিল্পী যেমন নিখুঁতভাবে তুলির আঁচড়ে তাঁর ধ্যান-ধারণা ও বক্তব্যকে শিল্প-সৌকর্যে উন্নীত করে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করেন পারিতোষও ঠিক সেই কাজটি করলেন। প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল অনন্য, অসাধারণ। বুঝতে কষ্ট হলো না- এখানেই রয়টার্সের বিশিষ্টতা, আর পাঁচটি সংবাদ সংস্থা থেকে এখানেই তার স্বাতন্ত্র্য। আমার কাচা হাতের প্রতিবেদন যে রূপময়তায় প্রকাশ পেল তাতে আমার মুগ্ধ হওয়া ছাড়া আর কোন পথ ছিল না। লক্ষ্য করলাম, রয়টার্সের অন্যান্য দেশের সহকর্মীরাও আমার এই প্রতিবেদনে শামিল হয়ে প্রতিবেদনকে আরো সমৃদ্ধ করেছেন।
প্রতিবেদনের সূচনা ছিল এরকম:

"A spelling mistake in an online bank transfer instruction helped prevent a nearly $1 billion heist last month involving the Bangladesh Central Bank and the New York Federal Reserve" banking offifcials aid.

প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল:
"How a hacker's typo helped stop a billion doller bank heist.”
আমার প্রতিবেদনের পঞ্চম প্যারাগ্রাফের বাক্যটি ছিল এরকম:
”Four request to transfer a total of abont $81 million to the Phillipines went through, but a fifth, for $20 million, to a Srilankan non-profit organi“ation was held up because the hackers misspelled the name of the NGO, Shalika Foundation”
হ্যাকাররা ”Foundation” নামের বানান ভুল করে টাকা হস্তান্তরের জন্য যে যাচনা পাঠায় তাতে লেখা ছিল ”Fandation”. এই টাকাটা Deutsche Bank-র মাধ্যমে হস্তান্তরের কথা ছিল। কিন্তু যখন এনজিওর নামের বানানে অসামঞ্জস্য দৃষ্টিগোচর হয় তখন ডয়েচে ব্যাংক বিষয়টির ব্যাখ্যা চেয়ে পরিষ্কার করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক এভাবে বিষয়টি অবহিত হতে পেরে টাকা লেনদেন বন্ধ করার অনুরোধ পাঠায়।

এই প্রতিবেদনটি আমার নামেই (Byline) প্রকাশিত হয়। রয়টার্সে এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের নামে প্রকাশিত হওয়ার অর্থই হচ্ছে- এটি সম্পাদকের পক্ষ থেকে একটি বড় ধরনের স্বীকৃতি। এরপর আমি ক্রমাগত এককভাবে এই বিষয়ের উপর বেশ কিছু প্রতিবেদন রচনা করলাম এবং রয়টার্সও সেসব রিপোর্ট গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করল। এভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে আমার আরো নতুন কিছু ‘সোর্স’ তৈরি হলো এবং তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এলেন আমাকে সাহায্য করার জন্য। তবে তাঁরা সতর্কতার সঙ্গে নিজেদের আড়াল করেই সহায়তা করছিলেন। এই সহায়তা পেয়ে আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞতার পাশে বন্দি হয়ে থাকলাম।

ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই বিষয়ে প্রতিবেদন করার জন্য আমার একটা পরিচিতি তৈরি হলো। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে এক সেমিনারে বক্তব্য দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে ই-মেইল করা হলো। আমার জীবনে এটি ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি। তবে দক্ষিণ এশিয়ার ব্যুরো প্রধান আমাকে এই সেমিনারে যাওয়ার অনুমতি না দিয়ে বললেন, একজন সাংবাদিক হিসেবে আমার ঢাকায় থেকে এই বিষয়ের উপর ‘ফলো-আপ’ প্রতিবেদন করা ঐ সেমিনারে বক্তব্য রাখার চেয়ে বেশি জরুরি। আমি তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করে ঢাকায় থেকে প্রতিবেদন করার কাজকে অগ্রাধিকার দিলাম।

ইতিমধ্যে নিউইয়র্কে টাইমস স্কয়ারে রয়টার্সের প্রধান কার্যালয়ে যাওয়ার আমন্ত্রণ এলো। সাইবার হ্যাকিংয়ের উপর বিশেষজ্ঞ রয়টার্সের নিউইয়র্ক ভিত্তিক প্রতিবেদক মার্কিন নাগরিক জিম ফিংকেল এই সফরের ব্যবস্থা করলেন। তিনি প্রথম থেকেই আমার সঙ্গে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত। নিউইয়র্কে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের খুঁটিনাটি সবই তাঁর নখদর্পণে। রয়টার্সের প্রধান কার্যালয়ে এই পরিদর্শন আমার জন্য ছিল এক বিরল সুযোগ। সেখানে রয়টার্সের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান সম্পাদক স্টিফেন জে. এডলার, এথিকস ও স্টান্ডার্ডস বিষয়ক গ্লোবাল এডিটর এলিক্স এম. ফ্রিডম্যান, গ্লোবাল ম্যানেজিং এডিটর টিফ্যানি উ সহ রয়টার্সের বেশ ক’জন সিনিয়র সহকর্মীর সঙ্গে আমার সাক্ষাত হলো। তাঁরা সবাই আমার কাজের ভূয়সী প্রশংসা করলেন। স্টিফেন এবং এলিক্স দু’জনেই তাঁদের নিজ নিজ কক্ষে দাঁড়িয়ে আমাকে সম্মানিত করলেন।

আমি ওই বছর রয়টার্স রিপোর্টারদের ফাইনালিস্ট নমিনি হিসেবে বিবেচিত হলাম। এছাড়া ২০১৭ সালে হংকং বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক সোসাইটি অব পাবলিশার্স ইন এশিয়া’র (SOPA) পক্ষ থেকে “এওয়ার্ডস ফর এক্সসেলেন্স” ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাই। বাংলাদেশ ব্যাংকের হ্যাকিংয়ের উপর প্রতিবেদনের জন্য এই পুরস্কার দেয়া হয়। SOPA পুরস্কারকে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে সম্মানজনক এবং পুলিৎজার পুরস্কারের সঙ্গে তুলনা করা হয়। SOPA-র এই পুরস্কার দেয়ার সময় বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী তাঁদের মন্তব্য কলামে আমার প্রতিবেদন সম্পর্কে লেখেন: ”Lights out, clearly the best scoop among some very good and tough scoops. Dogged reporting an ameying connecting of the dots, this scoop exposed severe flaws in our global banking system from a small transaction in an obscure part of the world.”

SOPA-র পক্ষ থেকে আমাকে যে ক্রেস্ট দেয়া হয় তার একটি কপি সিঙ্গাপুরে রয়টার্সের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক কার্যালয়ে এবং রয়টার্সের ঢাকা কার্যালয়ে দৃশ্যমাণ করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম দুর্ধর্ষ অপরাধের সংবাদ সংগ্রহের যে অভিজ্ঞতা তা আমার জীবনে এক পরাচেতনাবাদী শিল্পকর্ম হিসেবে ইতিহাস হয়ে থাকবে। আর বিশ্ব পরিমণ্ডলে শত সহস্র পাঠকদের কাছে এই তথ্য তুলে দিতে আমাকে যাঁরা সহযোগিতা করেছেন তাঁদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ হয়েই রইলাম। এ প্রসঙ্গে একটা কথা মনে পড়ল:

“সাংবাদিকতাকে কখনই নিশ্চুপ করে রাখা যায় না। আর এটাই হচ্ছে সাংবাদিকতার মহত্তম এবং শ্রেষ্ঠতম বৈশিষ্ট্য। একই সঙ্গে সবচেয়ে বড় দোষ। সাংবাদিকতা মানে সত্যের উচ্চারণ এবং যত দ্রুত সম্ভব এই উচ্চারণকে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া। বিস্ময়ের প্রতিধ্বনি, বিজয়ের দাবি এবং লোমহর্ষক ঘটনার আভাস-ইত্যাদি সবকিছুই এরপরও আকাশে বাতাসে প্রতিধ্বনিত হবে।”

লেখক: বাংলাদেশে রয়টার্সের সাবেক ব্যুরো প্রধান এবং বর্তমানে আমেরিকান চেম্বারর্স জার্নালের নির্বাহী সম্পাদক
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর