দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সাতদিনের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। বিধিনিষেধের আওতায় দু’দিন সারা দেশে বন্ধ ছিল গণপরিবহন। খোলা ছিল শিল্প-কারখানা ও অফিস আদালত। এতে অফিসগামী মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হন। গতকাল থেকে গণপরিবহন চলাচলের উপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করায় স্বস্তি ফিরেছে। সকল সিটি করপোরেশন এলাকায় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে। যদিও সন্ধ্যার পরেও রাজধানীতে বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। দুইদিনের ভোগান্তি শেষে সড়কে গণপরিবহন পেয়ে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে যাতায়াতকারীদের মধ্যে।
অনেকেই বলেছেন দূর-দূরান্তে অফিস করতে গণপরিবহন ছাড়া বিকল্প নেই। এদিকে সরকারি নির্দেশনা অনুসারে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচল করলেও ভোগান্তি কমেনি। বাসে পুরোপুরি মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। মাস্ক পরলেও বাসে উঠানামার সময় স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। গণপরিবহনে রাখা হচ্ছে না হ্যান্ডস্যানিটাইজার।
সরজমিন দেখা যায়, সকালে গণপরিবহনে অফিসগামী যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। বাস স্টপেজগুলোতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। অনেকেই বাসের জন্য সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। নির্দিষ্ট সময়ে বাসে উঠতে না পেরে ফুটপাথ ধরে হেঁটে যাচ্ছেন কেউ কেউ। স্টপেজগুলোতে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা। বাস স্টপেজে আসামাত্র দলবদ্ধ হয়ে উঠার চেষ্টা করছেন তারা। দু’একজন উঠলেও বাকিরা ফের নিচে অপেক্ষা করছেন। এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গণপরিবহনে যাত্রীদের চাপ কমতে থাকে। কমে পরিবহনের সংখ্যাও। এতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহনের সংকট দেখা দেয়। তবে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা বাসে উঠতে হিমশিম খেতে হয়েছে। বাড়তি বাড়ায় স্বল্প দূরত্বে যেতে চাইলেও যাত্রী উঠাতে চাচ্ছে না বাসের হেলপাররা।
কাওরান বাজার থেকে শাহবাগ যেতে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন হারুন ভূঁইয়া নামের এক ব্যবসায়ী। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর ৮ নম্বর বাসে উঠলেও, পরক্ষণে তাকে নামিয়ে দেয়া হয়। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাসের কন্ডাক্টর শাহবাগের কথা শুনে নামিয়ে দিয়েছেন। পুরো ভাড়া দেবো বললেও তারা শুনেনি। অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, বাস স্টপেজে আসামাত্র চালকের সহকারীরা গেট আটকিয়ে দূরের যাত্রী তোলেন। স্বল্প দূরত্বের যাত্রী উঠাতে তারা অনীহা দেখাচ্ছেন। বাসের সিট খালি থাকলেও যাত্রী উঠাতে চাচ্ছেন না।
মগবাজারে মিলন নামের এক যাত্রী বলেন, গত ২ দিন সিএনজিতে অফিসে যাতায়াত করেছি। এতে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয়েছে। দৈনিক হারে বেতনের পুরোটাই সিএনজি ভাড়ায় গেছে। ভোগান্তিও হয়েছে অনেক। বাস চলাচল চালু হওয়ায় ভোগান্তি ও অতিরিক্ত খরচ কিছুটা লাঘব হচ্ছে।
হিমেল নামের এক যাত্রী বলেন, রাজধানীতে গণপরিবহনের সংকট কিছুটা কমেছে। তবে সরকারের নির্দেশনা পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বাসে উঠতে যাত্রীরা যেন যুদ্ধ করছেন। একজন আরেক জনের গায়ের উপর উঠে যান। কার আগে কে বাসে উঠবে তা নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা রয়েছে। এতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। বাসের ভেতরে অর্ধেক যাত্রী থাকলেও বাইরে যাত্রীদের জনসমাগম। বাসের সিট থেকে একজন নামলে একজন উঠেন। তবে সিট জীবাণুনাশক করা হচ্ছে না। বাস চলাচলের নির্দেশনায় ট্রিপ শেষে বাসের আসন জীবাণুনাশক দিয়ে স্প্রে করার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। শিকড় বাসের এক যাত্রী বলেন, গণপরিবহন চলাচলে মানুষ একদিকে উপকৃত হলেও অন্যদিকে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ভয় রয়েছে। যাত্রী কিংবা বাস স্টাফরা কেউই স্বাস্থ্যবিধি মানতে চাচ্ছেন না। এখনো অনেকে বাসে উঠে মাস্ক খুলে রাখেন। ফারজানা নামের এক যাত্রী বলেন, গণপরিবহনে স্বাস্থ্য পুরোপুরি মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে বাসে উঠার সময় কেউই সচেতন থাকে না। যে যেভাবে পারছেন, সেভাবেই বাসে উঠে পড়ছেন। বাসে উঠার সময় জটলা বাঁধে। সব কিছু আগের মতোই চলছে। বিহঙ্গ পরিবহনের কন্ডাক্টর হাসেন আলী জানান, গণপরিবহন চলাচল করলেও আগের তুলনায় অনেক কম। ৭ দিনের জন্য বাস বন্ধের ঘোষণায় অনেক চালক গ্রামে চলে গেছেন। সরকারের বিধিনিষেধ মেনে বাস চালানো কঠিন। যাত্রীরা তাড়াহুড়ো করে বাসে উঠেন। সিট না থাকলেও তারা দাঁড়িয়ে যেতে চাচ্ছেন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি হলো সরকারের প্রজ্ঞাপনে। বাসের কিংবা বাস স্টপেজের কোথাও নেই। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানতে কাউকে নির্দিষ্ট করে সরকার দায়িত্ব দেয়নি। ফলে স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। শুধুমাত্র একজন হেলপারের উপর স্বাস্থ্যবিধির দায়িত্ব অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। হেলপার বাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকেন। তার উপর টাকা তোলা, চালককে সহায়তা করাসহ নানা কাজ করতে হয়। এতে তারা করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা প্রকাশ করেন। বাসগুলো গন্তব্যস্থলে এসে জীবাণুনাশক পদার্থ না ছিটিয়ে ফের যাত্রী উঠানোর কাজ করে। এতে বাসের সিটে আগে কোনো করোনা আক্রান্ত রোগী উঠে থাকলে পরে যারা উঠবেন- সবাই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সরকারের উচিত বাসগুলোকে জীবাণুনাশক পদার্থ ছিটাতে বাধ্য করা। সেই সঙ্গে প্রশাসনকে দায়িত্ব দিয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েটে তদারকি করা।
রাজধানীতে মোটরবাইক চালকদের বিক্ষোভ: রাইড শেয়ারিংয়ের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছে মোটরবাইক চালকরা। বুধবার দুপুরে মগবাজার, খিলক্ষেত, মিরপুর, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় তারা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। শেয়ার-এর বাইক চালক বা রাইডারদের অভিযোগ, মোটরসাইকেলে দুইজন চলতে তাদের বাধা দেয়া হচ্ছে, পুলিশ মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মগবাজার মোড়ে দুপুর ১টার পর বিক্ষোভ শুরু করে রাইডাররা। তখন সেখানে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে সাত রাস্তা মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেয় রাইডাররা। সেখানে কিছুক্ষণ থাকার পর পুলিশ আবার ধাওয়া দিলে তারা লাভ রোডের দিকে সরে যায়।