পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত বঙ্গবন্ধু লেকচার সিরিজের পঞ্চম পর্বে ভার্চ্যুয়ালি দেয়া বক্তব্যে জাতিসংঘের প্রাক্তন আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আনোয়ারুল করিম চৌধুরী বলেছেন, সারা বিশ্বের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার কর্মের পূর্ণ প্রতিফলন দেখা যায় ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে দেয়া ভাষণে। ‘বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও বিশ্ব কূটনীতিতে উৎসাহব্যঞ্জক উত্তরাধিকার’ শীর্ষক লেকচারে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধুর ভিশন ও কাজের জন্য বিশ্ববন্ধুতে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি দ্যুতি ছড়িয়েছিলেন সারা বিশ্বে। মাল্টিলেটারাল সিস্টেম বা বহুপক্ষীয় ব্যবস্থায় ৫০ বছরের বেশি সময় কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বাংলাদেশি প্রবীণ কূটনীতিক আনোয়ারুল করিম চৌধুরী বলেন, ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে বাংলায় যে ভাষণ দিয়েছিলেন তার ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি তৈরি করা হয়েছিল। বুধবারে দেয়া বক্তৃতায় জ্যেষ্ঠ ওই কূটনীতিক আরো বলেন, জাতিসংঘে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণে মানবাধিকার, ন্যায্যতা, নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকারসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছিল, যা এখনো সমানভাবে প্রয়োজন। প্রাজ্ঞ কূটনীতিক মিস্টার চৌধুরী বলেন, এটি খুব দুঃখের বিষয় যে, বর্তমানে অনেক বাংলাদেশি কূটনীতিক এই ভাষণ সম্পর্কে জানেনই না। আমি মনে করি- এটি প্রতিটি কূটনীতিকের অবশ্য পাঠ্য হওয়া জরুরি এবং তা নিয়ে বিশ্লেষণ ও গবেষণাপত্র প্রকাশ করা উচিত।
তিনি বলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে স্বীকৃতি আদায় করেছিল এবং স্বাধীনতার তিন বছরের মধ্যে জাতিসংঘের সদস্য হতে পেরেছিল যদিও ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সদস্যপদ না পাওয়ার জন্য ভেটো প্রয়োগ করা হয়েছিল।
করোনা মোকাবিলায় বিশ্ববাসীর অভিন্ন অবস্থান চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী: এদিকে বঙ্গবন্ধু লেকচার সিরিজ বিষয়ক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন করোনা মোকাবিলায় বিশ্বের সকল দেশকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ওই লেকচার সিরিজের ৫ম পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন মন্ত্রী। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় বিশ্বের সকল দেশের অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা অপরিহার্য। বিশ্ব থেকে করোনা দূর করতে হলে বিশ্বময় ধনী-দরিদ্র সকলের টিকা নেয়া আবশ্যক। ড. মোমেন বলেন, আমরা বিশ্বে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। বঙ্গবন্ধু দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন শান্তি উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। বঙ্গবন্ধু সারাজীবন শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশকে শান্তির জনপদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ অবিচ্ছেদ্য। দুই সত্তাকে আলাদা করা যাবে না। বঙ্গবন্ধু বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের সমস্যা তুলে ধরে বিশ্ব নেতায় পরিণত হয়েছিলেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা করেন, যা ধর্মীয় সমপ্রীতির জন্য অপরিহার্য। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতাসমূহ বাংলাদেশের নবীন কূটনীতিকসহ সকলের পড়া উচিত। পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ১৯৭৪ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে প্রথম বাংলায় বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু মানবজাতির আকাঙ্ক্ষা, বৈশ্বিক বৈষম্য, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও মালিকানা, অর্থনৈতিক কাঠামোসহ ২৭টি বিষয় উত্থাপন করেন, যা এখনো খুবই প্রাসঙ্গিক। ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করেন, মানুষের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানুষকে ক্ষমতায়ন করতে হবে। তিনি জাতিসংঘে জনগণের ক্ষমতায়নের শান্তিকেন্দ্রিক মডেল পেশ করেন। তিনি মনে করেন, উন্নয়ন হলো মানবাধিকার। দারিদ্র্য দূরীকরণ, যথাযথ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে ২০১২ সালে দৃষ্টান্তমূলক একটি রেজুলেশন জাতিসংঘে উপস্থাপন করা হয় এবং তা গৃহীত হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উদ্?যাপন সেলের মহাপরিচালক ডিএম সালাউদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। বিভিন্ন বিদেশি মিশনের আবাসিক ও অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার, বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও মিশন প্রধানগণ, সাবেক কূটনীতিক, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীগণ এতে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রাচার প্রধান এম আমানুল হকের ভোট অব থ্যাঙ্কস-এর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের পর্দা নামে।
Desher Bhai
৮ এপ্রিল ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৭:৪২... and he killed thousands of innocent people from January 10, 1972 through August 15, 1975. After that, he also paid for his deeds with his life.