× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সিলেটে করোনা টেস্টে ধীরগতি

শেষের পাতা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১০ এপ্রিল ২০২১, শনিবার

সিলেটে ৪ থেকে ৭ দিনেও মিলছে না করোনা টেস্টের রিপোর্ট। আর এ সময়ে রিপোর্টের অপেক্ষায় থাকা পজেটিভ রোগীরাও ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছেন। হাটবাজারেও করছেন চলাচল। এমনকি ধর্মীয় উপাসনালয়ে যাচ্ছেন। এতে করে করোনা ট্রান্সমিশনের হারও বেড়ে যাচ্ছে। এমনিতেই সিলেটে করোনা সংক্রমণের হার উর্ধ্বমুখী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলেটে ট্রান্সমিশন হয়েছে ৩০ ভাগের উপরে।
উপসর্গ থাকলেও ভোগান্তির কারণে অনেকেই করোনা টেস্ট করাচ্ছেন না। যারা করাচ্ছেন তারাও দ্রুততম সময়ে রিপোর্ট পাচ্ছেন না। এ নিয়ে চিন্তা বাড়ছে। তারা জানিয়েছেন, দ্রুততম সময়ে করোনা টেস্টের রিপোর্ট না পেলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া করোনার লাগাম টেনে ধরা অসম্ভব। গতকালও নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৪৪ জন। আগের দিন আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৫০ জন। গড়ে এখন দেড়শ’ নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। হাসপাতালে রোগীর সংকুলান হচ্ছে না। আইসিইউ’র জন্য চলছে হাহাকার। শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে আইসিইউতে বেডের জন্য লড়াই চলছে। কিন্তু আইসিইউ বেড খালি পাওয়া যাচ্ছে না। বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেনই ভরসা রোগীদের। এই অবস্থায় সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে রয়েছে ক্ষোভও। চিকিৎসকরা বলছেন, করোনার ট্রান্সমিশন কমলে হাসপাতালে রোগীর চাপ কমবে। ট্রান্সমিশন বাড়লে রোগী বাড়বে। এই অবস্থায় ট্রান্সমিশন কমানোই জরুরি হয়ে পড়ছে। কিন্তু করোনার ট্রান্সমিশন হচ্ছে রোগী দ্বারা। আক্রান্ত রোগী দ্রুতই শনাক্ত করা হচ্ছে না। ফলে করোনা পরিস্থিতি না কমে বরং আরো বেড়েই যাচ্ছে। এখন সিলেটে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে প্রায় ১২শ’ নমুনা জমা পড়ছে। এরমধ্যে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে বিদেশযাত্রীদের। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াইশ’ বিদেশযাত্রীর নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদের রিপোর্ট দিতে হচ্ছে ১২ ঘণ্টার মধ্যে। বিদেশযাত্রীদের কারণে নিয়মিত উপসর্গে ভোগা রোগীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে করোনা টেস্ট করা সম্ভব হচ্ছে না। নগরীর নয়াসড়ক এলাকার রাজু নামের এক করোনা আক্রান্ত রোগী জানিয়েছেন, তিনি করোনার জন্য নমুনা দিয়েছিলেন গত ৪ এপ্রিল। ওই টেস্টের রিপোর্ট পেয়েছেন ৮ এপ্রিল। ৫ দিন পর তার রিপোর্ট হাতে এসেছে। এরই মধ্যে তার জ্বর, কাশি কমে যায়। তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরছিলেন। রিপোর্ট আসার পর আবার আইসোলেশনে গেছেন। সিলেটে করোনা টেস্ট দেরিতে পাওয়ার কারণে বেশিরভাগ রোগীর বেলায়ই এমনটি হচ্ছে। খোদ শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল ও ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের বেলায়ও এমনটি হচ্ছে। করোনা রিপোট দেরিতে আসার কারণে হাসপাতাল থেকে রোগীর ছাড়পত্রও দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সুস্থ হয়ে গেলেও হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে রোগীদের। এতে করে নতুন রোগীর ভর্তি হওয়ার সুযোগ মিলছে কম। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরটি-পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষার মেশিন রয়েছে ৩টি। এই ৩টি মেশিনে যদি লোকবল বাড়িয়ে পরীক্ষা করা যায় তাহলে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ নমুনার পরীক্ষার করা সম্ভব হবে। কিন্তু ওসমানীর ল্যাবে সেটি হচ্ছে না। লোকবল বাড়ানো হচ্ছে না। প্রতিদিন এই ল্যাবে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগীর করোনা টেস্ট করা হচ্ছে। আর যাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই হচ্ছে প্রবাসী ও হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী। ফলে বাইরের রোগীদের নমুনা পরীক্ষার সুযোগ থাকছে কম। অপর ল্যাবটি হচ্ছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওই ল্যাবেও প্রতিদিন ৩শ’র মতো নমুনা পরীক্ষা করা হয়। কখনো কখনো আরো কম নমুনা পরীক্ষা করা হয়। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে সিলেট ছাড়া সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এই ল্যাবে সংগ্রহ করা নমুনার অর্ধেক পরীক্ষা করার সুযোগ মিলছে। বাকি নমুনা পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। সুনামগঞ্জের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, ২ ও ৩ এপ্রিলের নমুনার রিপোর্ট এখনো ল্যাব থেকে আসেনি। এতে করে রোগী অনেকখানি সুস্থ হওয়ার পর তার রিপোর্ট মিলছে। ততদিনে রোগী দ্বারা সংক্রমিত যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। সিলেটের টিবি হাসপাতালের ল্যাবে জিন এক্সপার্টরা প্রতিদিন আরো ৮০টির মতো নমুনার পরীক্ষা করতে পারেন। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে সীমান্তিকের ল্যাবেও ৮০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সব মিলিয়ে ৭শ’র মতো নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় রোগীর চাপ বেড়েছে। নমুনা সংগ্রহ বেড়েছে। দ্রুততম সময়ে রিপোর্ট না পাওয়ায় সিলেটে করোনা সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানিয়েছেন, ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে আগে ছিল দু’টি মেশিন। এখন সেখানে আরো একটি মেশিন আনা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন করোনা পরীক্ষার মেশিন হচ্ছে ৩টি। টিবি হাসপাতালে জীন এক্সপার্টদের কাছে ছিল ১টি মেশিন। সেখানে আরো ১টি নতুন মেশিন স্থাপনের কাজ চলছে। সিলেটে পর্যাপ্ত মেশিন রয়েছে। এসব ল্যাবে প্রতিদিন ৩ বেলা করোনা পরীক্ষা করা সম্ভব হলে নমুনা জট থাকবে না। তিনি জানান, দ্রুততম সময়ে করোনা পরীক্ষার ফলাফল যাতে পাওয়া যায় সে বিষয়টি তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। আজ-কালের মধ্যে বৈঠক করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর