× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

রেডিও ফ্রি এশিয়ার রিপোর্ট / মিয়ানমারে রক্তের বন্যা, নিহত কমপক্ষে ৬০

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(৩ বছর আগে) এপ্রিল ১০, ২০২১, শনিবার, ৯:৫১ পূর্বাহ্ন

রাতভর গুলি। এখানে ওখানে পড়ে আছে রক্তাক্ত মৃতদেহ। রাতের অন্ধকারেই সেসব মৃতদেহ সরিয়ে নিচ্ছিল সামরিক জান্তার আজ্ঞাবহরা। অনলাইন রেডিও ফ্রি এশিয়ার এক খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার দিবাগত রাতভর সামরিক জান্তার নির্দেশ মানতে গিয়ে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা কমপক্ষে ৬০ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে। অভ্যুত্থানবিরোধী জনতার সৃষ্টি করা ব্যারিকেড পরিষ্কার করতে গিয়ে তারা নিরস্ত্র জনতার ওপর রাইফেল গ্রেনেড ও মেশিনগান থেকে গুলি ছুড়েছে। এতে মিয়ানমারের মধ্যঞ্চলীয় শহর বাগো’তে রক্তের বন্যা বয়ে গেছে। সেখানে প্যাগোডার ভিতর লাশের স্তূপ। স্কুল চত্বরে লাশ।
রিপোর্টে বলা হয়েছে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী বাগো শহরের ওথার থিরি ওয়ার্ডের রাস্তায় বৃষ্টির মতো বুলেট ও গ্রেনেড ছুড়েছে। এই শহরে বসবাস করেন আড়াই লাখ মানুষ। সকালে সূর্য্যরে আলো ছড়িয়ে পড়ার আগে তারা এই কাজ করে। ওই শহরে অভ্যুত্থান বিরোধীরা রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করেছিল। সেই বেরিকেড ভেঙ্গে জনতার ওপর গুলি চালায় তারা। একজন অধিবাসী বলেছেন, এই ওয়ার্ডের লোকজন জানতেন যে, সেনাবাহিনী এলাকায় প্রবেশ করবে। তাই তারা রাতভর অপেক্ষা করছিল। সেনাবাহিনী এসেই ভারি অস্ত্র ব্যবহার করে। আমরা মর্টার শেল নিক্ষেপের শব্দ শুনেছি। মেশিনগান থেকে গোলা ছোড়া হয়েছে। এ সময় তারা গ্রেনেড ছুড়েছে।

ওই শহরে সারাদিনই নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা গুলি ছুড়েছে। এতে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে অন্য একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, স্থানীয় সময় রাত ৮টা নাগাদ তারা মাত্র তিনটি মৃতদেহ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পেরেছেন। জেইয়মুনি প্যাগোডা এবং পার্শ্ববর্তী স্কুলে মৃতদেহের স্তূপ তৈরি করেছে সেনাবাহিনী। ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার পর সামরিক জান্তা প্রতিষ্ঠা করেছে স্টেট এডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল। তারা বাগো শহরে এই রক্তপাত নিয়ে কোনো কথা বলেনি। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালিত মিয়ানমার রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশন (এমআরটিভি) রিপোর্ট করেছে যে, সামরিক জান্তা শুক্রবার ১৯ জনের বিরুদ্ধে সামরিক আদালতে মৃত্যুদ- দিয়েছে। সেনাবাহিনীর এক ক্যাপ্টেন ও অন্য একজন ব্যক্তিকে প্রহার ও নির্যাতন করার অভিযোগে এই শাস্তি দেয়া হয়েছে। গত মাসে ইয়াঙ্গুনের উত্তর ওক্কালাপা শহরে ওই প্রহারে বেসামরিক ওই ব্যক্তি মারা যায়। এ ঘটনায় ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।
 
উল্লেখ্য, এ নিয়ে মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনী ও পুলিশের হাতে প্রাণ হারালেন কমপক্ষে ৬৫০ জন। থাইল্যান্ডভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যাসিসট্যান্স এসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স-এর (এএপিপি) হিসাব অনুযায়ী, শুক্রবার নাগাদ মিয়ানমারে নিহত হয়েছেন ৬১৮ জন। সামরিক জান্তার বন্দিশিবিরে অবস্থান করছেন ২৯৩১ জন।

শুক্রবার মান্দালয়, তানিনথারি, সেগাইং অঞ্চলে এবং কাচিন ও শান রাজ্যে বিক্ষোভ হয়েছে। সেসব বিক্ষোভে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। এসব অঞ্চলে বসবাস করেন ৫ কোটি ৪০ লাখ মানুষ। মান্দালয়ের কাউকপাদুং শহরে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা ৫০ বছর বয়সী টিন মোয়েকে গুলি করেছে। তার মৃতদেহ সেনাবাহিনী নিয়ে গেছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে এগারটার সময় বিক্ষোভে অংশ নেয়ার কারণে টিন মোয়েকে গ্রেপ্তার করে তারা। এ সময় তিনি পালানোর চেষ্টা করতেই তারা তাকে গুলি করে। তার লাশ নিয়ে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করেছে তারা।

দেশটির ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র ইয়াঙ্গুনের জনজীবন একেবারে অচল হয়ে পড়েছে। সেখানে কোনো বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড নেই। অধিবাসীরা বেকার হয়ে পড়েছেন। সরকারি চাকরিজীবী থেকে শুরু করে কারখানার শ্রমিক সবাই এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেকে কারখানা বন্ধ হওয়ার কারণে চাকরি হারিয়েছেন। অনলাইনে যারা কাজ করেন তাদেরও একই অবস্থা। কারণ, সামরিক জান্তা বেশির ভাগ মোবাইল ইন্টারনেট এবং ওয়াইফাই সার্ভিস বন্ধ করে দিচ্ছে বা দিয়েছে। ফুডপান্ডার সাবেক একজন কর্মী বলেছেন, প্রায় দুই মাস ধরে আমরা বেকার। রাস্তা বন্ধ। আমরা বাইরে যেতে পারছি না। ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখা হয়েছে। অনলাইন খাবার অর্ডার পাওয়ার জন্য ইন্টারনেট প্রয়োজন। সামরিক জান্তার নিষ্পেষণের কারণে প্রায় সব কারখানা ও ওয়ার্কশপ বন্ধ। ইয়াঙ্গুনে বসবাসকারী প্রায় ৬০ লাখ মানুষের প্রায় অর্ধেকই তাদের কাজ হারিয়েছেন। এখন তারা কঠিন দিন পার করছেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর