মৌলভীবাজারের জুড়ীতে একটি ব্রিজের অভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একটি বাঁশের সাঁকো পারাপার হয় দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ। ইউনিয়নগুলো হলোÑ জায়ফরনগর ও পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়ন। জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের নয়াগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী জুড়ী নদীর উপর ওই বাঁশের সাঁকোটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। প্রতিবছর এলাকাবাসী চাঁদা তুলে এই সাঁকোটি মেরামত করে চলাচল করেন। সাঁকোটি দিয়ে উপজেলার ২টি ইউনিয়নের হাজার হাজার লোকজন প্রতিদিন নদী পারাপার হচ্ছে। যুগের পর যুগ সাঁকোটি নিয়ে এলাকাবাসীর ভোগান্তি হলেও দেখার যেন কেউ নেই। প্রতিটি স্থানীয় এবং জাতীয় নির্বাচন এলেই ভুক্তভোগী বাসিন্দারা ব্রিজের আশ্বাস পায়। কিন্তু বাস্তবে আজও তা স্বপ্ন।
শুক্রবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিন সাঁকোটি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, নড়বড়ে সাঁকোটি মেরামত করছেন কয়েকজন শ্রমিক। জানতে চাইলে শ্রমিকরা বলেন, এলাকাবাসী চাঁদা তুলে এই সাঁকোটি তৈরি করছেন। আমরা কয়েকজন শ্রমিক ৪/৫ দিন থেকে এই সাঁকোটির নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছি। স্থানীয় বাসিন্দা সৌদি আরব প্রবাসী হাজী জহিরুল ইসলাম ও নয়াগ্রাম দাখিল মাদরাসার সভাপতি মনিরুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী বহু সরকার আসলেও জুড়ী নদীর উপর ওই সাঁকোর স্থানে অদ্যাবধি একটি ব্রিজ নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আমাদের এলাকার বাসিন্দারা তাদের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে আসা-যাওয়াসহ তাদের যাতায়াত করতে গিয়ে একান্ত বাধ্য হয়ে প্রতিনিয়ত এ সাঁকো দিয়ে শত শত লোক পারাপারের কারণে এটি বর্তমানে নাজুক অবস্থায়। ফলে, যে কোন সময় এটি ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ পথেই যাতায়াত করতে হয় শত শত মানুষকে। প্রতিদিন সাঁকো দিয়ে পারাপার হয় বিভিন্ন পেশাজীবির লোক। শিক্ষা কিংবা জীবনের তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সাঁকো পারাপার হয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশাজীবিদের। তাই বর্তমানে এলাকাবাসী চাঁদা তুলে এই সাঁকোটি তৈরী করছেন। আমরা এই জায়গায় একটি ব্রিজ চাই। স্থানীয় ইউপি সদস্য জমির আলী বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে এখন পর্যন্ত এভাবেই বাঁশ দিয়ে তৈরি সাঁকো দিয়ে পার হচ্ছেন লোকজন। এ সাঁকো দিয়ে অত্রাঞ্চলের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে পড়ালেখা করতে যায়। ফলে, সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন থাকেন। বিশেষ করে হাকালুকি হাওরের শত শত কৃষকের যাতায়াতের রাস্তা এটি। আমি আমাদের এলাকার সাংসদ সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী আলহাজ¦ শাহাব উদ্দিন এমপি মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন করছি যাতে তিনি ওই সাঁকোর জায়গায় একটি ব্রিজ নির্মাণ করে দেন। বিশিষ্ট সমাজসেবক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, জায়ফরনগর ইউনিয়নের নয়াগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়র পাশে জুড়ী নদীর উপর ওই বাঁশের সাঁকো দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজন পার হন। হাকালুকি হাওরাঞ্চলের প্রায় ৫/৬ হাজার হেক্টর জমির ধান জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই বাঁশের সাঁকো পারাপার হন কৃষকরা। ওই রাস্তায় বিকল্প পথ না থাকায় এ সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পার হতে হয় তাদের। সব পেশাজীবীর লোক জুড়ী শহরস্থ বিদ্যালয়, বিভিন্ন গ্রামের লোকজন এ সাঁকো পার হয়ে যেতে হয়। তাদের আশংকা যে কোন সময় সাঁকোটি ভেঙে কিংবা সেখান থেকে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই এখানে অবিলম্বে নতুন একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।